শিরোনাম
লক্ষ্মীপুরে ‘জমিদার বাড়ি ও খোয়া সাগর দীঘি’ সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র
প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:৫২
লক্ষ্মীপুরে ‘জমিদার বাড়ি ও খোয়া সাগর দীঘি’ সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস অনেক পুরোনো। যার প্রমাণ স্বরূপ জেলার বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা ও নিদর্শন দেখা যায়। এর মধ্যে অন্যতম দালাল বাজার জমিদার বাড়ি। প্রায় ২৫০ বছর আগে নির্মাণ করা জমিদার বাড়িটি এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এর পাশেই রয়েছে ইতিহাস বিজড়িত বিশাল এক দীঘি। যার নাম ‘খোয়া সাগর দীঘি।


প্রায় শত বছর ধরে অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে থাকা ঐতিহাসিক এ দুটি নিদর্শন হতে পারে লক্ষ্মীপুরের সম্ভাবনাময় একটি পর্যটন কেন্দ্র। পরিকল্পিতভাবে সংস্কার করার মাধ্যমে এটি সম্ভব। এ নিয়ে জেলাবাসীর মাঝেও দারুণ আগ্রহ রয়েছে। অনেকদিন আগে থেকেই লক্ষ্মীপুর জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা প্রায়ই এখানে ঘুরতে আসছেন। চলচ্চিত্রের শূটিংয়ের ক্ষেত্রে নির্মাতাদের অনেকে এ স্থানটি পছন্দ করেছেন বলেও জানা গেছে।


স্থানীয় তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা নিরব অধিকারী বলেন, পুরোনো দিনের কাহিনী অথবা ভৌতিক চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে দালাল বাজার জমিদার বাড়িটি খুবই উপযুক্ত। ইতোমধ্যে এখানে আমার রচনা ও পরিচালনায় ‘মৃত্যুরূপ’ এবং ‘বিসর্জন’ নামে দুটি স্বল্প দৈর্ঘ্য নাটক নির্মাণ করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে জমিদার বাড়ি ও খোয়া সাগর দীঘিটি সংস্কার এবং এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে শূটিং লোকেশন হিসেবে এটা সবাই পছন্দ করবে।


পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে, লক্ষ্মীপুরের ঐতিহ্যবাহী দালাল বাজার জমিদার বাড়ি ও খোয়া সাগর দীঘিকে অবশ্যই সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনা প্রয়োজন। এতে দেশীয় পর্যটন সমৃদ্ধির পাশাপাশি রাজস্ব আয়ের দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জমিদার বাড়ি ও দীঘিটি রক্ষণাবেক্ষণ, পরিকল্পিতভাবে সংস্কার করা, পরিচালনার জন্য লোকবল নিয়োগ করা, সরকারিভাবে রেস্ট হাউজ নির্মাণ করা এবং ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য সব রকমের সুবিধাসহ যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। এছাড়াও খোয়া সাগর দীঘিতে নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা করলে স্থানটি পর্যটকদের কাছে আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।


লক্ষ্মীপুর জেলা শহর থেকে দালাল বাজার যেতে সিএনজি কিংবা বাসে জন প্রতি ভাড়া মাত্র ১০ টাকা। বাজার থেকে প্রায় ২৫০ গজ পূর্বে ঢাকা-রায়পুর মহাসড়কের উত্তর পাশে ‘খোয়া সাগর দীঘি। এ দীঘিতে জমির পরিমাণ প্রায় ২২ একর। দীঘি বরাবার মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে জমিদার বাড়ির মঠ, স্থানীয়দের কাছে যা মঠবাড়ি বলে পরিচিত। সেখান থেকে দালাল বাজার ডিগ্রি কলেজের পেছন দিয়ে ‘জমিদার বাড়ি’ যাওয়া যাবে। পায়ে হেঁটে পাঁচ মিনিটের রাস্তা এটি। দালাল বাজার থেকে দক্ষিণ দিকে যাওয়ার প্রধান সড়কের পাশেই পুরোনো জমিদার বাড়িটি।


প্রায় পাঁচ একর জমির ওপর নির্মিত এ জমিদার বাড়িতে রয়েছে পরিত্যক্ত রাজ গেইট, রাজ প্রাসাদ, অন্দরমহল প্রাসাদ, শান বাঁধানো ঘাট, নাট মন্দির, পূঁজা মন্ডপ, বিরাটাকারের লোহার সিন্দুক, কয়েক টন ওজনের লোহার ভিম, বিশাল বাগান ও জমিদার বাড়ির প্রাচীর প্রভৃতি। এছাড়াও রয়েছে ছোট-বড় তিনটি পুকুর। দীর্ঘদিন অরক্ষিত থাকায় বিচার আসন ও নৃত্য আসনটি চুরি হয়ে যায় বলে জানা গেছে।



খোয়া সাগর দীঘি


স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৪০০ বছর আগে জনৈক লক্ষ্মী নারায়ণ বৈষ্ণব কলকাতা থেকে লক্ষ্মীপুরে কাপড়ের ব্যবসা করতে আসেন। তার বংশধররা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক এজেন্সি এবং পরে জমিদারী লাভ করেন। ১৭৬৫ সালে সর্বপ্রথম লক্ষ্মী নারায়ণ বৈষ্ণবের নাতি (পুত্রের সন্তান) গৌর কিশোর রায় রাজা উপাধী লাভ করেন। সেই সময় ‘খোয়া সাগর’ নামক দীঘিটি খনন ও জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। তবে তৎকালীন স্থানীয় লোকেরা জমিদারদের ব্রিটিশদের ‘দালাল’ বলে আখ্যায়িত করেন। যেকারণে জমিদার বাড়ি সংলগ্ন এলাকাটি দালাল বাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার আগ পর্যন্ত জমিদার বংশধররা এ অঞ্চলে বসবাস করতেন।


জানা গেছে, ২০১৫ সালে দালাল বাজার জমিদার বাড়ি ও খোয়া সাগর দীঘি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। কিন্তু স্থানীয় একটি মহল উচ্চ আদালতে রিট করলে উদ্যোগটি ভেস্তে যায়। দীর্ঘদিন ধরে ওই মহল বিভিন্নভাবে জমিদার বাড়ি ও দীঘিটি ভোগদখল করে আসছিল। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৯ আগস্ট আদালত ‘জমিদার বাড়ি ও খোয়া সাগর দীঘি’ সংক্রান্ত রিটটি খারিজ করে দেন। এরপরই জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রাচীন এ দুটি নিদর্শনের সংস্কার ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শুরু হয়। এদিকে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতর ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি দালাল বাজার জমিদার বাড়ি সংক্রান্ত একটি গেজেট প্রকাশ করে। সেখানে ঐতিহাসিক নিদর্শন বিবেচনা করে দালাল বাজার জমিদার বাড়িকে সংরক্ষণযোগ্য ভূমি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।


জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে দালাল বাজার জমিদার বাড়ি ও খোয়া সাগর দীঘি। সম্প্রতি আইনী জটিলতা নিরসন হওয়ার পর প্রাচীন এ নিদর্শন দুটি সংস্কারে কাজ শুরু হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, পরিকল্পিতভাবে দালাল বাজার জমিদার বাড়ি ও খোয়া সাগর দীঘিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। এখান থেকে রাজস্ব আয়ের দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে পর্যটকদের উপস্থিতি আমাদের আশান্বিত করেছে।


বিবার্তা/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com