
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের কাছে এখন আতঙ্কে নাম এক সময়ের বিলুপ্ত বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার। মূলত মরুভূমি অঞ্চলের সাপটি এখন বাংলাদেশের রাজশাহী এবং এর আশেপাশে ছাড়াও খোঁজ মিলছে বরিশাল, পটুয়াখালী, চাঁদপুর এমনকি ঢাকার আশপাশেও। অস্তিত্ব মিলেছে ২৭টি জেলায়। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত এ সাপের কামড়ে মারা গেছেন ১০ জন। রাসেল ভাইপার সাপ বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামেও পরিচিত। রাসেলস ভাইপার সাপকে আতঙ্ক হিসাবে না দেখে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বন্যপ্রাণী অধিদফতর।
অন্যদিকে রাসেলস ভাইপার সাপ দেখা গেলে আতঙ্কিত না হয়ে ‘স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ’কে জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন টিমের রেসকিউয়ার এবং সভাপতি মো. রাজু আহমেদ।
২১ জুন, শুক্রবার স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ দেশের যেকোনো স্থানে রাসেলস ভাইপার সাপ দেখার সঙ্গে সঙ্গে তা জানানোর জন্য অনুরোধ করেছে।
একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, সাপ মারতে গিয়ে নিজে সাপের কামড়ের শিকার হবেন না। বিনামূল্যে সাপ উদ্ধার করে আপনাকে বিপদমুক্ত করবে স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ।
আরেকটি পোস্টে রাসেলস ভাইপার কামড়ের শিকার হলে করণীয় বিষয়গুলোও সম্পর্কে জানিয়েছেন রাজু।
তিনি জানান, কেউ যদি রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ের শিকার হন, কোনো ওঝা বা বেদের কাছে না গিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিকটস্থ হাসপাতালে যাবেন। রাসেলস ভাইপার সাপ এর চিকিৎসায় অনেকেই যে ভুলগুলো করে থাকে তা হলো- কামড়ের পর অ্যান্টিভেনম নিয়ে সুস্থ হয়ে গেলে বাসায় চলে আসেন। ১৫ থেকে ২০ দিন পর রোগী আবার অসুস্থ হন এবং সিরিয়াস অবস্থা হয়ে মারা যান। তাই অ্যান্টিভেনম নেওয়ার পর ভালোভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।
তিনি জানান, রাসেল ভাইপার এর হেমোটক্সিন বিষ যতক্ষণ আমাদের শরীরে থাকে এর মধ্যেই আমাদের ইন্টারনাল অর্গানগুলো যেমন-(কিডনি, লিভার, ফুসফুস) ইত্যাদি এর কার্যক্ষমতাগুলো নষ্ট করে ফেলে। রোগীর এ অর্গানগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কিছুদিন পর রোগী অনেক অসুস্থ হয়ে যায় এবং এই অর্গানগুলোর কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়ায় রোগী মারা যায়।
তিনি বলেন, এ সাপ বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই ছিল। তবে রাজশাহীর বরেন্দ্রভূমি দিকে তারা বাস করতো। গত দুই-এক বছরের বন্যায় এটি নদীর পানিতে ভেসে বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে মূলত পদ্মা নদীকেন্দ্রিক এ সাপ দেখা যাচ্ছে। এরা মূলত নদী দিয়ে চলাচল করে। নদী এক থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যেই থাকে। এর বাইরে তারা যায় না।
রাজু আহমেদ বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য শেয়ার করছে। আসলে পদ্মা নদীর নিকটবর্তী ছাড়া রাসেলস ভাইপার সাপ অন্য কোথাও দেখা যায়নি বা দেখা যাবেও না। আমাদের সংগঠনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২০০ রেসকিউয়ার সেচ্ছাসেবী সদস্য রয়েছে। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাপ সংরক্ষণ ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার কাজ করছে।
ঢাকা আসার সম্ভাবনা নেই
মো. রাজু আহমেদ আরও বলেন, রাসেল’স ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ রাজধানী ঢাকায় আসার সম্ভাবনা নেই। কেননা এই সাপ মূলত পদ্মা নদী কেন্দ্রিক থাকে। তারা পদ্মা নদীর এক-দুই কিলোমিটারের বেশি যায় না। এবং এই সাপ নদী দিয়ে চলাচল করে থাকে। অনেকে ফেসবুকে শেয়ার করছে। রাসেলস ভাইপার ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলায় দেখা যাচ্ছে। এটা ভুল তথ্য। পদ্মা নদীকেন্দ্রিক রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জসহ নদী ঘেঁষা এসব জেলায় এ সাপ দেখা গেলেও পুরো জেলা পাওয়া যাবে না। শুধু মাত্র পদ্মানদীর এক-দুই কিলোমিটারের মধ্যে রাসেলস ভাইপার সাপ থাকে।
স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ: ০১৭৮০৯৩২৭১৭, ০১৬১৪৫৮৯১১১ এবং ০১৮৪১৫৯৭০০৩। ই-মেইল: [email protected]
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]