বাংলাদেশের স্থপ‌তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও সোনার বাংলার সারথি শেখ হাসিনা
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
বাংলাদেশের স্থপ‌তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও সোনার বাংলার সারথি শেখ হাসিনা
মাহবুবউল আলম হানিফ
প্রিন্ট অ-অ+

২৬শে মার্চ। বাঙালির ইতিহাসে দীপ্তিমান একটি দিনই শুধু নয়; বরং জাতীয় জীবনের গৌরবের প্রতীক। ১৯৭১ সালের এই দিনেই বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৮ থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত, দীর্ঘ সংগ্রামে বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র নির্মাণের যে অভিযাত্রা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল, সেটাই বাস্তবে রূপ নেয় ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চে।


২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার ডাক দিয়ে মুক্তিকামী বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেছিলেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির চিত্তে সেই প্রতিশ্রুতিকে শানিত করে, স্বাধীনতার সংকল্পকে তিনি তুঙ্গে নিয়ে যান ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে। স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পেয়ে মৃত্যুভয় তুচ্ছ হয়ে যায় বাঙালির কাছে। নয় মাস নির্ভীক বাঙালি বুক চিতিয়ে লড়াই করে। স্বাধীনতার ঘোষণায়, তাঁরই তো নির্দেশ, 'পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈনিকটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।'


১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ গণহত্যার রাতে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ। এই জন্ম জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের অমিত তেজ ও সাহসেই। ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে নিদ্রামগ্ন নিরস্ত্র বাঙালির উপর পাকিস্তানি হানাদাররা সৈন্য, ট্যাংক, কামান, মেশিনগান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। চলে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড। অতর্কিতে আক্রান্ত হয়েও সাড়ে সাত কোটি বাঙালি রুখে দাঁড়ায়। প্রতিরোধের শক্তি শেখ মুজিবুর রহমানের মুখনিঃসৃত স্বাধীনতার অমর বাণী। ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তদান ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমে ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় পায় বাংলাদেশ। বিশ্ব মানচিত্রে গর্বিত, স্পর্ধিত অবস্থান মেলে বাংলাদেশের।


স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্থপ‌তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানি শাসকের নিগড়ে বন্দি বাঙালিকে শেকল ভাঙার স্বপ্নে জাগিয়ে তুলেছিলেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানই। সেই স্বপ্নে অশুভ শক্তির ছায়া পড়েছে বারবার। ষড়যন্ত্রের জালে বাংলাদেশের উল্টোযাত্রাও হয়েছে দীর্ঘ সময়। তাঁর সোনার বাংলার স্বপ্ন স্তিমিত হয়েছে ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দেশি-বিদেশি দোসর আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে ১৫ই আগস্ট। তবে এই খুনিচক্র ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশ‌ক্তি বাংলার মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারেনি।



শোষণ–বঞ্চনার পথ পেরিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে যাত্রা শুরু করেছিল। তাঁর মৃত্যুতে সে যাত্রা ব্যাহত হলেও অব্যাহত রয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলার তেজ ও শক্তিমত্তা। সেই শক্তির জোরেই অদম্য গতিতে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হা‌সিনার নেতৃত্বে বিজয়ী বাঙা‌লি জা‌তি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করে ২০২২ সালে পূর্ণ করল স্বাধীনতার ৫১ বছর।



বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্নকে পূর্ণতা দিয়েছে তাঁর সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন সেই বাংলাদেশকে সাফল্যমণ্ডিত অবয়বে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।


১৯৭৫ সালে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা করার পর সেসময় জার্মানিতে অবস্থানরত তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে দেশেই আসতে দেওয়া হয়নি। ১৯৮১ সালের ১৭ই মে ছয় বছরের দুঃসহ শরণার্থী জীবন পার করে দেশে ফেরেন তাঁরা। বাংলাদেশ তখন অরাজকতা-বিশৃঙ্খলার চূড়ান্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে। খুনি জিয়া ও স্বৈরাচারী এরশাদের কবলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংকটাপন্ন হয়। সেই সংকটকা‌লে মাতৃভূ‌মির হাল ধরেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।


১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ওই বছরের ২৩শে জুন প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে তিনি বাংলাদেশের একজন সফল প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশকে জননীর মতোই আগলে ধরে আছেন। স্বাধীনতার প্রতিশ্রতি তার সাহসী পদক্ষেপেই সমুন্নত হয়ে আছে বাংলার মাটিতে।


বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রফতানিমুখী শিল্পায়ন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, তথ্য প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, পোশাকশিল্প, ওষুধশিল্প, রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে।


নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেল, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেট এক্সপ্রেস সহ আরও অনেক বড়ো বড়ো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে শেখ হাসিনার সরকার। দেশের আইটি খাতের নতুন সম্ভাবনা যশোরে ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক’ করা হয়েছে।


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুশাসনের বদৌলতেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তরণের মাইলফলক অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক উন্নত দেশ ও ২১০০ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও টেকসই ব-দ্বীপে রূপান্তর করার লক্ষ্য নিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। নেতা হিসেবে অসাধারণত্বের গুণে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, ব্রিটেনের মার্গারেট থ্যাচার, জার্মানির অ্যাঙ্গেলা মের্কেল, শ্রীলঙ্কার চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গাকে ছাড়িয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার উন্নয়নের সফল সার‌থি জননেত্রী শেখ হাসিনা।



বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের মধ্যে ৩৯তম এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে (পিপিপি) ২৯তম যা দক্ষিণ এশিয়ায় ২য়। বাংলাদেশ গত এক দশক ধরে গড়ে ৬.৩ শতাংশ হার ধরে রেখে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং বর্তমানে বিশ্বের ৭ম দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতি। ২০২০-২১ অর্থবছরে চূড়ান্ত মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৪১৬ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয় ২৫৫৪ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ২৫৯১ ডলার (চূড়ান্ত)। আর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হয়েছে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ।



গত এক দশকে দারিদ্র্যের হার ৩১ দশমিক ৫ থেকে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে, আর্থ-সামাজিক খাতে ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে, শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ২০১০ সালের ৪৭ থেকে ২০১৭ সালে ৩১ এ নেমে এসেছে।মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭৩ বছর। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ম। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ উদ্যোগ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়নসহ অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে সাড়া জাগিয়েছে। ব্যাপকভাবে ‘সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী’কর্মসূচির সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ‘টেকসই উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২১’ অনুযায়ী ২০১৫ সাল থেকে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রার সূচকে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে আছে। এ সাফল্যের মূলে রয়েছে নারীর উন্নতি ও ক্ষমতায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মপন্থা ও বিপুল বিনিয়োগ।


মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময়ই আপসহীন । তাঁর প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছে এবং রায় কার্যকর করা হচ্ছে। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর তৈরি কুখ্যাত ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে বিচার ব্যবস্থা পুনর্গঠন করা হয়েছে।


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তচ্যুত ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র-চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী সঠিক ও সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করার কারণে বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই করোনাকালেও দেশের অর্থনীতি নিরাপদ রয়েছে। বাংলাদেশ এই সক্ষমতা অর্জন করার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের কাছে প্রতিনিয়ত প্রশংসিত হচ্ছেন।


এত প্রাপ্তি এত অর্জন, এই সবই একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীনতার অঙ্গীকার। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার হয়ে এই যে বাংলাদেশের এত সফলতার গল্প এসব কার অবদানে কবে হলো? '৭৫ থেকে '৯৬ পর্যন্ত রাজনৈতিক ইতিহাস যা তা তো ঘৃণ্য, জঘন্য। ২০০৯ সালের পূর্ব পর্যন্ত দফায় দফায় অপশাসনের সময় বাংলাদেশে এসেছে। কিন্তু সেই অন্ধকার টিকেনি বাংলায়। কারণ, বাংলায় স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা একজনই শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর সোনার বাংলার স্বপ্নের রূপকার একজনই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। কৃতজ্ঞতা রইল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি।


পরিশেষে, মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের এই ক্ষণে গভীর শ্রদ্ধা জানাই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। জাতির সূর্য সন্তান, বীর শহিদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। অতল শ্রদ্ধা জানাই, পাক হানাদারদের হাতে নির্যাতিত, সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের। শুধু স্মরণই নয়; তাঁদের আত্মত্যাগের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করার শপথই যেন হয় আমাদের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের মূলমন্ত্র।


লেখক : মাহবুবউল আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com