সংকট মোকাবিলায় শেখ হাসিনার ভূমিকা
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২২, ১৮:০১
সংকট মোকাবিলায় শেখ হাসিনার ভূমিকা
এ্যাড. কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি
প্রিন্ট অ-অ+

২০০৮ সালে দিন-বদলের শপথ নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসে। ২০০১-০৬ সময়কালে বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসন, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ পৃষ্ঠপোষকতা, মূল্যবৃদ্ধি এসবের যাঁতাকল থেকে মুক্তি পেতে জনগণ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে ভোট দেয়। জাতির সংকটময় মূহুর্তে শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানের ইশতেহারে জনগণ আস্থা রাখে৷ এরপর থেকে পরবর্তী দুইটি নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর বাংলাদেশের জনগণের আস্থা এবং বিশ্বাসকেই প্রমাণ করে।


একজন নেতার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করা হয় সংকট মোকাবিলায় তার দক্ষতাকে৷ জনজীবনের সংকট মোকাবিলায় একজন নেতা যত বেশি দক্ষতা দেখাতে পারেন,জনতার আস্থা তার উপর তত বৃদ্ধি পায়৷ গত ১৪ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকালে আমরা এমন কিছু ঘটনা দেখি যা সংকট মোকাবিলায় শেখ হাসিনার দক্ষতার প্রমান৷ তার এই অসামান্য গুণের কারণেই বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে।


জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা, দারিদ্র্য, নারী নির্যাতন, তথ্য-প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা, দুর্নীতি প্রভৃতি বিষয় মোকাবিলায় যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে অনন্য। ইতোপূর্বে কোন শাসকই এত দক্ষতার সাথে সমস্যা সমাধান এবং তাতে সফলতা লাভ করতে পারেননি। এমনকি শেখ হাসিনার এই সাফল্য দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সমাদৃত। বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলাতেও, শেখ হাসিনার প্রস্তাবনা এখন গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হচ্ছে।


আমরা এখন কয়েকটি সংকট মোকাবিলায় শেখ হাসিনার সরকারের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করবো।


১. জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা:


২০০১ থেকে ২০০৬ সময়কালীন সময়ে বিএনপি-জামায়াতে শাসনামলে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অভয়ারণ্যে পরিণত হয়৷ দেশব্যাপী বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা ছিল এক নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা৷ দশ ট্রাক অস্ত্র বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা,আওয়ামী লীগের সমাবেশে ২১শে আগস্ট ২০০৪ তারিখে গ্রেনেড হামলা, সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর মাজারে বোমা হামলা, জেএমবি’র উত্থান এসব কিছু দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে তলানিতে নিয়ে যায়। একাত্তরের খুনী রাজাকার জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের গাড়িতে স্বাধীন দেশের পতাকা তুলে দিয়ে তাদের মহান জাতীয় সংসদে এবং মন্ত্রীসভায় জায়গা দিয়ে খালেদা জিয়ার জোট সরকার বাংলাদেশকে ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেয়ার সকল আয়োজন সম্পন্ন করে।


২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাছে জনগণের দাবি ছিল এই সন্ত্রাসের রাজত্ব থেকে মুক্তি। শেখ হাসিনার সরকার সবসময়ই সাম্প্রদায়িকতা এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানে ছিল। দেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতার মূলোৎপাটন, সুবিচার নিশ্চিত এবং ৭১ এর খুনীদের চিহ্ন মিটিয়ে ফেলার শপথ থেকেই সরকার শুরু করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া যখন শুরু হয়, সমগ্র জাতি যখন এই ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ। ঠিক তখনই দেশের সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি আবারো সক্রিয় হয়ে ওঠে। যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বৃদ্ধি পায়৷ লেখক ও চিন্তকদের ওপর হামলা বেড়ে যায়।


২০১৫-১৬ সালে আইসিসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের কিছু বিপথগামী তরুণ জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য হয়। হামলা হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদগাহ ময়দানে, গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ঘটে ইতিহাসের ন্যাক্কারজনক জঙ্গি হামলা। এইসব ঘটনাকে পুঁজি করে বাংলাদেশবিরোধী চক্র আবারো সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু, দেশরত্ন শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতির কারণে মৌলবাদী এবং জঙ্গি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে হয়৷ আইসিসের উত্থানে সারাবিশ্ব যেভাবে জঙ্গিবাদ আতংকে ছিল! সেই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপে বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল হয়। দেশে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সাফল্য অর্জনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির চেয়ারম্যান ও কংগ্রেসম্যান পিটার টি কিং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।


২.রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা:


বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মায়ানমারের আরাকান রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মায়ানমারের সেনাবাহিনীর অত্যাচার নির্যাতনের কারণে বিভিন্ন সময়ে মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ৫ লাখের মতন রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিলো। ২০১৭ সালের ২৫ শে আগস্ট রোহিঙ্গা সমস্যা এক নতুন মোড় পায়। ওইদিন থেকেই রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। জননেত্রী শেখ হাসিনা মানবতার স্বার্থে রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেয়। এই সময় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে।


শেখ হাসিনার এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রশংসা বয়ে আনে৷ রোহিঙ্গা ইস্যুতে ২০১৭ সালে বিশ্ব গণমাধ্যমগুলো শিরোনাম ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যার মূল কথা হলো- শেখ হাসিনা এক মানবিক রাষ্ট্রনায়কের প্রতিচ্ছবি৷ মূলত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী সব গণমাধ্যমে প্রশংসিত এবং মানবিক এক রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনা বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত হন৷ সেসময় তিনি বলেছিলেন, আমার ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে আরো সাত লাখকেও খাওয়াতে পারবো।


২০২১ সালের ১২ জুলাই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নৃশংসতার জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দ্রুত রাখাইনে প্রত্যাবাসন নিয়ে একটি প্রস্তাব জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে। ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার পর এই প্রথম জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে কোনো প্রস্তাব ভোটাভুটি ছাড়া পাস হয়েছে। এ বিবেচনায় এবারের প্রস্তাবটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় মাইলফলক। জেনেভায় জাতিসংঘ বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অর্জিত এই সাফল্য প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের নিরবচ্ছিন্ন তদারকির ফল। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সকল আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় আট লক্ষের অধিক রোহিঙ্গা বসবাস করছে।


নিম্নে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের অবস্থানের একটি চিত্র তুলে ধরা হলো। অবাক হওয়ার মতন বিষয় বাংলাদেশের মতন একটি সীমিত সামর্থ্যের দেশ কিভাবে এই বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিলো। এই পুরো ব্যাপারটিই সম্ভব হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ভূমিকা এবং মানবিক দর্শনের কারনে। দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পে বর্তমানে প্রায় ৮৬০,১৭৫ জন রোহিঙ্গা রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার তাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবসানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।


৩. অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় শেখ হাসিনার ভূমিকা:


শেখ হাসিনার সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জনগুলির একটি স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত পরিষদ (সিডিপি) এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এ তিনটি সূচকের যে কোন দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদণ্ডেই উন্নীত হয়েছে।


জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদণ্ড অনুযায়ী (২০১৬ সালে এলডিসি উত্তরণের বছরের হিসাবে)-


বাংলাদেশের অর্জন:


মাথাপিছু আয় ১৬১০ মার্কিন ডলার (মানদণ্ড ১২৩০ মার্কিন ডলার)
মানবসম্পদ সূচক ৭২.৯ (মানদণ্ড ৬৬)
অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা ২৪.৮% (মানদণ্ড ৩২% এর কম)


এক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি অর্থাৎ ১৬১০ মার্কিন ডলার৷ মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দশমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ।


সরকারের রুপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের এটি একটি বড় অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে।


২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে করে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় উঠে আসে জন্মের ৫০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কীভাবে বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দেখানো। উঠে আসে জাতির পিতা কীভাবে সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য একতাবদ্ধ হন, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে কীভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণ হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানীমুখী শিল্পায়ন, ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানী আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক৷ পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ। এতে প্রদর্শন করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বান, 'আসুন দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।'


পদ্মা সেতু নির্মাণ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার এক অনন্য সাফল্য:


যুদ্ধাপরাধের বিচারের পর জননেত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় সাফল্য বলা যায় 'পদ্মা সেতু নির্মাণ"। ২০১০ সালে এই সেতু নির্মানের উদ্যোগ নেয়ার পর থেকেই দেশি-বিদেশি ক্ষেত্র থেকে নানামুখী চাপ আসতে থাকে৷ বিরোধীদল সবসময়ই বলে আসছে যে শেখ হাসিনার সরকার কোনভাবেই এই সেতু তৈরি করতে পারবে না। কিন্তু, সকল বাঁধা উপেক্ষা করে গত ২৫ শে জুন ২০২২ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন।


এই সেতু উদ্বোধনের ফলে ঢাকার সাথে দক্ষিণাঞ্চলের ১৯ টি জেলার যোগাযোগ সহজ হয়৷ ৬.১৫ কি.মি দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এই সেতুটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। বিশ্বের অন্যতম খরস্রোতা নদীতে এই সেতু নির্মাণের কাজটি ছিল খুবই চ্যালেঞ্জিং। একমাত্র শেখ হাসিনার অটল মনোভাব এবং সাহসী ভূমিকার কারণেই শত বাঁধা সত্ত্বেও পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়।


পদ্মা সেতু ছাড়াও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আরো কয়েকটি মেগাপ্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। যার ভেতর কতগুলো সম্পন্ন হয়েছে এবং কতগুলো সম্পন্ন হওয়ার পথে রয়েছে। এসব প্রকল্প শেষ হলে বাংলাদেশের যোগাযোগ খাতে বিপ্লব সাধিত হবে। ত্বরান্বিত হবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি। এর ভেতর রয়েছে-


• মেট্রোরেল।
• মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার
• গাজীপুর-যাত্রাবাড়ী ওভারপাস।
• কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল।
• ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের উন্নয়ন।
• কালনা সেতু ইত্যাদি।


৪. বিদ্যুৎখাতে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন:


২০০৯ সালের পূর্বে বিদ্যুতের অভাবে দেশের অর্থনীতি ছিল পর্যুদস্ত, শিল্প, বাণিজ্য ছিল স্থবির এবং জনজীবনে লোডশেডিং ছিল অসহনীয়৷ বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দশ বছর দেশ পরিচালনার সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় এবং ২০১৮ এর ডিসেম্বরে তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী, সাহসী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে বিদ্যুৎ খাতে এই সময়ে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করতে বর্তমান সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।


বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে বিগত মহাজোট সরকারের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারের আমলে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪,৯৪২ মেগাওয়াট এবং প্রকৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩,২৬৮ মেগাওয়াট। সে সময় নতুন সরকার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদানপূর্বক বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিসহ এ খাতের সার্বিক ও সুষম উন্নয়নে তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদী বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে।


একই সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল, কয়লা, ডুয়েল ফুয়েল, নবায়নযোগ্য জ্বালানী ও নিউক্লিয়ার এনার্জি ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়৷ এর পাশাপাশি প্রতিবেশি দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান ও মায়ানমার হতে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের সাত বছরে ২০০৯ হতে নভেম্বর মেয়াদে মাত্র সাত বছরেই উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে।


এর মধ্যে ২০২২ এর মার্চে দেশ শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আসে৷ এই কৃতিত্ব একমাত্র শেখ হাসিনারই।


২০০৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বিদ্যুৎখাতে দেশের উন্নয়ন নিচে তুলে ধরা হলো:


বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ২০০৯ সালে ২৭ যা বেড়ে ২০২২ সালে ১৫০।
বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪৯৪২ মেগাওয়াট, ২০২২ সালে যা দাঁড়িয়েছে ২৫২৩৫ মেগাওয়াট।
গ্রাহক সংখ্যা ২০০৯ সালে ১ কোটি ৮ লাখ, ২০২২ সালে ৪ কোটি ১৪ লাখ।
সঞ্চালন লাইন ২০০৯ সালে আট হাজার সার্কিট কি.মি, ২০২২ সালে ১৩,২১৩ সার্কিট কি.মি.।
মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০০৯ সালে ২২০ কিলোওয়াট ঘন্টা, ২০২২ সালে ৫৬০ কিলোওয়াট ঘন্টা।
বিদ্যুতের মাথাপিছু ব্যবহার ২০০৯ সালে ৪৭%, ২০২২ সালে ১৪৬%।
বিদ্যুৎখাতের এই উন্নয়ন শেখ হাসিনা সরকারের সফলতা যা দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করবে।


এছাড়া কোভিড সংকটের সময়ে শেখ হাসিনার সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর হার অনেক কম ছিল। সেই সরকারের নেয়া বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের কারণেই লকডাউনের ভেতরেও বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় ধরনের ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যায়।


সর্বোপরি, বলা যায় সকল ধরণের সংকট মোকাবিলায় শেখ হাসিনা যেই যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন তাতে আগামী নির্বাচনেও বাংলাদেশ মানুষের সমর্থন তার দিকেই থাকবে একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।


লেখক: এ্যাড. কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, সহ-সভাপতি,
বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)

১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,

বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com