আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ঘটা করে বহর নিয়ে সারা রাস্তা সংবর্ধনা নিতে নিতে জেলায় জেলায় কর্মীসভা, বর্ধিত সভা করতে যান। তৃণমূল আশায় বুক বাঁধে এবার বুঝি তাদের সব সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু নির্মম সত্যি হলো- একটা জেলায়ও দলীয় কোন্দল মেটেনি। এমপি লীগ আর হাইব্রিডদের দাপটে আওয়ামী লীগের তৃণমূল একেবারে কোনঠাসা। গলাবাজি আর বড় বড় বক্তৃতার ফুলঝুড়ি আর কতো ?
আমি যা লিখি তাতেই কারো কারো গায়ে ফোস্কা পড়ে। তাই ঠিক করেছিলাম ঘাস ফুল লতাপাতা নিয়েই থাকবো। কিন্তু রাজপথের দূর্দিনের শাহজাহান শিশিরের উপর এই অন্যায় হেনস্থা সহ্য করতে পারলাম না। উনি যাদের সাথে মিছিলে হেঁটেছেন তারা সবাই আজ কোথায় ? বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ অপরিহার্য নয়।
সামনের কাউন্সিলে কারো পোস্টই তাই নিশ্চিত না। কোন জুজুর ভয়ে আপনারা সহযোদ্ধা কে অস্বীকার করছেন? এসিরুমের রাজনীতি কিন্তু সারাজীবন থাকবে না। সেদিন খুব বেশি দূরে না, রাজনীতি আবার এসিরুম আর পাঁচতারকা হোটেল ছেড়ে রাজপথে হাঁটবেই।
শাহজাহান শিশিরদের লাগবে কিন্তু সেই সময়ে। দেশে কি একটা মানুষ নেই, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে কি একজন সাহসী কর্মীবান্ধব নেতা নেই? যিনি সাহস করে সত্যিটা বঙ্গবন্ধু কন্যাকে জানাবেন?
২০২০ সালের ২০ জুলাই কচুয়ার শহীদ স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্মান কাজের তদারককারী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের চাঁদপুরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নূরে আলম লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাহজাহান শিশিরের বিরুদ্ধে কচুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় ২০২০ সালে ২৫ আগস্ট চাঁদপুর আদালতে জামিন চাইতে গেলে বিজ্ঞ আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। পরে গ্রেফতারের ৩ মাস ১২ দিন পর ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিনপ্রাপ্ত হয়ে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি লাভ করেন।
মুক্তিলাভের দিনই (৭ ডিসেম্বর ২০২০) ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাসে কমেন্ট করাকে কেন্দ্র করে মেহেদী হাসান মেরিন নামের এক ব্যক্তি ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং ৫৩২/২০২০। এ মামলায় তিনি হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন। গত ১ সেপ্টেম্বর উক্ত ধানমন্ডি থানার মামলায় ঢাকার দায়রা জজ আদালতে হাজিরা দিতে গেলে বিজ্ঞ আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি এই মামলায় জামিন পান।
এদিকে ঢাকার সদর দক্ষিণ কোতয়ালী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মাহবুব আলম নামের এক ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে আবারো মামলা করেন। মামলা নং ৩৭ (৯)/২১, যার সিআর নং ২৮৩/২১। ধানমন্ডি থানায় দায়েরকৃত মামলায় জামিন পেয়েও জামিন অর্ডার পেন্ডিং রাখা হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর তাকে ঢাকার সিএমএম কোর্টে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়। এ তারিখে কোতয়ালী থানায় দায়ের করা মামলায় তাকে শোনএ্যারেস্ট দেখিয়ে আবারো জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়। শাহজাহান শিশিরের পক্ষ থেকে ওই একই তারিখে জামিনের আবেদন জানানো হয়। বিজ্ঞ আদালত জামিন না মঞ্জুর করে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাঁর ১ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করে।
এদিকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশিরের বহিষ্কারাদেশ বাতিল করে স্বপদে বহালের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। শাহজাহান শিশিরের পক্ষে রিট আবেদন করলে হাইকোর্টের বিচারপতি মজিবুর রহমান ও কামরুল ইসলাম হোসেন মোল্লার বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন।
অন্যের ফেসবুক আইডির একটি পোস্ট নিজ আইডিতে শেয়ার করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মো. শাহজাহান শিশিরকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এই আদেশ দেন। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, যে বিষয়ে পোস্টটি ছিলো, সেই সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি মামলাটি করেননি।
একের পর এক ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে জনতার নেতা শাহজাহান শিশিরকে হয়তো মাসের পর মাস জেল খাটানো যাবে কিন্তু তাতে তার জনপ্রিয়তা একটুও কমবে না। কচুয়ায় লাগাতার বিক্ষোভ, মানববন্ধন, সমাবেশ এগুলো কিন্তু শাহজাহান শিশিরের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার জ্বলন্ত স্বাক্ষর।
ইতিহাস বলে যুগে যুগে সব ষড়যন্ত্রকারীই আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। তৃণমূল আর রাজপথ থেকে বেড়ে ওঠা নেতৃত্ব শাহজাহান শিশির বীরবেশেই তার প্রিয় কচুয়াবাসীর কাছে ফিরবেন। সেদিন খুব বেশি দূরে নয়। সাবেক ছাত্রনেতা, মিছিলের সহযোদ্ধা শাহজাহান শিশিরের নিঃশর্ত মুক্তি চাই।
লেখক: গণমাধ্যম কর্মী
বিবার্তা/এমও
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]