দীর্ঘ অচলাবস্থা কাটিয়ে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য মতে, আগস্ট ’১৬ শেষে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ।
চলতি মুদ্রানীতিতে ডিসেম্বর নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। সুতরাং বেসরকারি খাতে বিদ্যমান প্রবৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, আগস্ট শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৭১ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা, যা গত বছরের আগস্ট শেষে ছিল পাঁচ লাখ ৭৮ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ। এই হার জুলাইয়ে ছিল ১৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আর ঋণপ্রবৃদ্ধি বেড়ে জুন শেষে ছিল ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
বেসরকারি খাতে যে পরিমাণের ঋণ বিতরণ হচ্ছে, তার বেশিরভাগই ভোক্তা খাতে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দুই বছরের ব্যবধানে ভোক্তাঋণ বিতরণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ২০১৪ সালের মার্চ শেষে ভোক্তাঋণের স্থিতি ছিল ২৭ হাজার ৫১২ কোটি টাকা, যা ২০১৫ সালের মার্চ শেষে দাঁড়ায় ৪৬ হাজার ৮ কোটি টাকা এবং ২০১৬ সালের মার্চ শেষে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী সকালের খবরকে বলেন, ব্যাংকের ঋণের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভোক্তাঋণ বিতরণে বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উদার মনোভাব দেখাচ্ছে। এতে করে আবাসন ও কার লোনে গ্রাহকদের চাহিদা বেশি থাকায় ব্যাংকগুলোও সীমা অতিক্রম করে ঋণ দিচ্ছে। এর ফলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে। তা ছাড়া মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিও অনেক বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি ঋণপ্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল সকালের খবরকে বলেন, দেশে বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক সঙ্কট নেই। অর্থনীতির সব সূচক ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। এতে উদ্যোক্তারাও বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন। যার ইতিবাচক প্রভাব বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবৃদ্ধিতে পড়তে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মমাফিক মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যা প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়ে যাবে। এখন বিনিয়োগের চমত্কার পরিবেশ বিরাজ করছে। ব্যাংকগুলোর কাছেও বিনিয়োগযোগ্য তহবিল রয়েছে। সুতরাং অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার উপযুক্ত সময় এখন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বেসরকারি খাতে যে হারে ঋণপ্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে, তা দুই বছর আগেও এরচেয়ে বেশি পরিমাণের অর্জিত হয়েছে। ওই সময়ের তুলনায় এই হার অনেকটা নগণ্য। ২০১৩ সালের জানুয়ারি শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশ, যা তার আগের কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। কেননা ২০১২ সালের ডিসেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৬ দশমিক ৬২ শতাংশ, যা নভেম্বরে ছিল ১৭ দশমিক ৪০ শতাংশ, অক্টোবরে ১৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ১৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ, আগস্টে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ ও জুলাইয়ে ছিল ২০ দশমিক ২৬ শতাংশ।
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলেছেন, বিগত দুই অর্থবছরের রাজনৈতিক চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ব্যাংকের ঋণ বিতরণে ভাটা পড়ে। এ সময় কোনো উদ্যোক্তা সাহস করে বিনিয়োগে এগিয়ে আসেননি। তা ছাড়া ব্যাংক ব্যবস্থার নানা কেলেঙ্কারিতে বেসরকারি খাতে দুরবস্থা শুরু হয়। এতে বর্তমানে যে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হার নিয়ে কাঙ্ক্ষিত মনে করা হচ্ছে, তা দেশের আর্থিক প্রেক্ষাপটের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। কেননা এখনও ব্যাংকিং খাতে ১ লাখ কোটি টাকার ওপর উদ্বৃত্ত তারল্য পড়ে আছে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রয়েছে ৩০ বিলিয়ন ডলারের ওপর। বিপুল পরিমাণের এই অর্থ বিনিয়োগে আনতে পারলে তবেই অর্থনীতির চাকা সচল হবে বলে মনে করছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, আগস্ট শেষে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ১ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা, যা এর আগের বছরের আগস্ট শেষে ছিল ৭ লাখ ৯ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। সে হিসেবে আগস্ট শেষে স্থানীয় ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। যদিও চলতি মুদ্রানীতিতে ডিসেম্বর নাগাদ অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।
গত অর্থবছরের মতো চলতি অর্থবছরেও ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, আগস্ট শেষে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা, যা আগের বছরের আগস্ট শেষে ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। সে হিসেবে আগস্ট শেষে সরকারের ব্যাংকঋণ কমেছে ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এ সময় সরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আগস্ট শেষে সরকারি খাতে ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ১৬ হাজার ১১০ কোটি টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ১৫ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা।
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]