শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বিএনপি-জামায়াত: হানিফ
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৪, ১৬:২৪
শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বিএনপি-জামায়াত: হানিফ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

কোটা আন্দোলনে পেছন থেকে বিএনপি-জামায়াত কাজ করেছে মন্তব্য করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, ২১ জুলাই আপিল বিভাগ যখন কোটা সংস্কার করে রায় দিলেন- দেশবাসী ভেবেছিলেন আন্দোলনের আর প্রয়োজন হবে না। কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্রদের যা প্রত্যাশা ছিল তার চেয়ে বেশি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপর নতুন মাত্রায় সহিংসতা শুরু হলো। কারণ বিএনপি-জামায়াত সরকার পতনের একদফা দাবি বাস্তবায়নে কৌশলে ছাত্রদের পেছনে অবস্থান নিলো।


তিনি বলেন, আমরা একটা জায়গায় ভুল করে যাচ্ছি। এটা ছাত্রদের আন্দোলন নয়, ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। মূল খেলোয়াড় তো ছাত্ররা নয়। এই আন্দোলনের মূল খেলোয়াড় হলো বিএনপি-জামায়াত। তারা শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আন্দোলন করছে।


২৯ জুলাই, সোমবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘সন্ত্রাস, নাশকতা ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মুক্ত আলোচনার আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গৌরব ’৭১।


মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াত যখন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে ব্যর্থ হলো, আমরা ভেবেছি বিপদমুক্ত। কিন্তু সেটা হয়নি। যখন নির্বাচন বানচালে ব্যর্থ হলো, এরপর আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তারা আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করে। আমরা যদি এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট দেখি ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা বাতিল করা হয়েছে। তারপরও চলতি বছরের ৫ জুন রিট করেছে কী উদ্দেশ্যে? রিটের পর ওখানে রায় চলে আসলো। কোটা বহাল রাখা হলো, এটাও মনে হয়েছে ষড়যন্ত্রের অংশ।


নির্বাচনের ছয় মাস না যেতে কোটাকে আবার কেন সামনে নিয়ে আসতে হলো এমন প্রশ্ন রেখে হানিফ বলেন, চলতি বছরের ৫ জুন হাইকোর্টের রায় হলো। ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে কোটা বহাল করা হলো। এরপর সরকারপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে ৯ জুন চারদিনের মধ্যে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। তখনই মনে হয়েছে এটার পেছনে কোনো উদ্দেশ্য আছে।



তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়ের উপর ১০ জুলাই আপিল বিভাগে শুনানি হলো। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানান। আমরা ছাত্রদের আন্দোলন মনে করে নির্লিপ্ত ছিলাম। আমি মনে করি এখানে গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতা ছিল। তারা খুব বেশি গুরুত্ব দেয়নি বা হয় তো বুঝতে পারেনি।


আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, সরকারপক্ষ ৯ জুন আপিল করার পর ঈদ ও অবকাশকালীন ছুটি ছিল। এ সময়ে বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের আংশিক কমিটি পরিবর্তন করল। যারা দীর্ঘদিন রাজনীতি করা ব্যক্তি তাদের পরিবর্তন করে যুবদলে থাকতে যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে তাদের দিয়ে দুই মহানগরেও যুবদলের কমিটি পুনর্গঠন করল। এর একটাই কারণ ছিল কোটা আন্দোলনে ছাত্রদের মাঠে নামিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন করা। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারেনি।


হানিফ বলেন, গণমাধ্যমে দেখলাম গত ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদ আন্দোলন করতে গিয়ে নিহত হলো। এখানে আমাদের একটা সন্দেহ আছে। রংপুরে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হলো। গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে আবু সাঈদ হাতে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাকে গুলি করেছেন একজন পুলিশ। যতটুকু জানা গেছে, ওই পুলিশ সদস্য ছাত্রশিবিরের সদস্য ছিলেন। খুবই পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তাপ ছড়িয়ে দেওয়ার চক্রান্ত ছিল কি না সেটিও খতিয়ে দেখার বিষয়। ওই ঘটনা আগুনে ঘি ঢালার মতো ছিল।


তিনি বলেন, যে সহিংসতা হয়েছে আমরা অবাক হলাম। শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হলো। বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের ‘ইমশোনাল’ পরিচিতি আছে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন, তাদের মধ্যে কি রাষ্ট্র এবং সরকার সম্বন্ধে ধারণা নেই। সরকার এবং রাষ্ট্র তো আলাদা। সরকার যেকোনো রাজনৈতিক দলই গঠন করতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্র তো সবার।


আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আন্দোলনের নামে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভি জ্বালানো হলো, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেলে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হলো। এগুলো তো রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি। একাত্তরের পরাজিত শক্তি যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামি একাত্তরে একইভাবে সবকিছুতে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। যাতে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে। তাই রাষ্ট্র ধ্বংস করার জন্য তারা সুযোগ পেলেই রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি পুড়িয়ে দেয়।


লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জামায়াত আদর্শের মনোভাব ধারণ করেন উল্লেখ করে হানিফ বলেন, এই তারেক রহমানের নির্দেশে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল আওয়ামী লীগের ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। ২০১২ সাল থেকে মানুষ পুড়িয়ে, কুপিয়ে হত্যার রাজনীতি করেছে। তার মধ্যে জামায়াতের ধ্বংসাত্মক রাজনীতির মনোভাব আছে- বলেন তিনি।



হানিফ বলেন, তিনদিন আগে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে একটি অডিও ক্লিপ এসেছে। যেখানে জামায়াতের এক শীর্ষনেতা তারেক রহমানকে বলছিলেন শিবির-জামায়াত মাঠে ছিল, আপনাদের লোকজন তো মাঠে নামে নাই। উত্তরে তারেক রহমান বলেছিল, হয় তো বেশি মোবাইলাইজ করতে পারিনি। তারা যে ধ্বংসযজ্ঞে জড়িত, এটা প্রমাণিত।


যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব দেখে দেশের ২২টি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছিল। এবার আমরা লক্ষ্য করলাম এই আন্দোলনে ওই হটস্পট থেকে ঢাকায় যুবদল, শিবির জড়ো হয়েছিল। ঢাকা শহরে ঢুকিয়ে শহর কলাপস করানো। এই রাষ্ট্র ধ্বংস করাই তাদের মূল লক্ষ্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধৈর্য সহকারে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে।


তিনি বলেন, কোটা আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতায় ১৪৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থী আছে, চারজন পুলিশ, চারজন সাংবাদিক, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ১৯ জন মারা গেছে। এছাড়া শ্রমিক, রিকশাচালক, হকার মারা গেছে। এই মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ কাম্য নয়।


শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে হানিফ বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির চেয়ে বেশি কোটা সংস্কার করে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে আন্দোলনের আর কোনো সুযোগ থাকতে পারে না। শিক্ষার্থীরা যাতে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামায়াত, শিবিরের ঢাল হিসেবে ব্যবহার না হয়। অভিভাবকেদের উদ্দেশ্যে আহ্বান থাকবে আপনাদের সন্তানরা যাতে এই অপশক্তির ঢাল হিসেবে ব্যবহার না হয় এজন্য তাদের ঘরে ফিরিয়ে নিন।


স্বাধীনতার পক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অতীত থেকেই অনেক ক্রাইসিস মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।


মুক্ত আলোচনায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এডভোকেট সানজিদা খানম এমপি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মশিউর রহমান, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এমপি, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি ঝুনা চৌধুরী ও গৌরব ’৭১ এর সভাপতি এস এম মনিরুল ইসলাম মনি। আলোচনা সঞ্চালনা করেন গৌরব ’৭১ -এর সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন।


বিবার্তা/সোহেল/এসবি/রোমেল

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com