
কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ সারাদেশে তাণ্ডব চালিয়েছে দুষ্কৃতিকারীরা। তাণ্ডবে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (২২ জুলাই) বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে ক্ষতিচিত্র তুলে ধরেন।
বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা’ ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে হামলা-অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এখানে ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখনও তারা জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের হুকুম দিয়ে যাচ্ছে। যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে এত সহজে ছাড়া হবে না। শক্ত অ্যাকশন নিয়ে এটা দমন করে পরিবেশটা উন্নত করা হবে।’
কোটাবিরোধী আন্দোলনে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের নিয়ে জরুরি মতবিনিময় করেন। সোমবার কারফিউ শিথিলের সময় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতিসহ দেশের প্রায় সব ব্যবসায়ী ফোরামের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ থেকে ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ করেছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের ব্যবসা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন, এ জন্যই ডেকেছি। কারণ আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে হবে। এ জন্য আপনাদেরও সহযোগিতা দরকার। আপনাদের ডেকেছি এ জন্য যে আপনাদের ভেতরে যেন কোনও হতাশা না আসে। আমার দিক থেকে সব রকম সহযোগিতা আপনারা পাবেন। ব্যবসা-বাণিজ্য ভালোভাবে যাতে চলতে পারে তার জন্য যা যা করণীয় সেটা আমরা করবো।’
কোটাবিরোধীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে সংগঠিত তাণ্ডবে ক্ষয়ক্ষতির একটি চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, বিটিভি ভবনে আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের শতাধিক গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। সেতু ভবনে দুবার আগুন দিয়ে সেখানে ৫০টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কার্যালয়ে হামলা করা হয়েছে। ফার্মগেটে মেট্রোরেল স্টেশন ভাঙচুর; কাজীপাড়া ও মিরপুর- ১০ মেট্রোস্টেশনে ভাঙচুর; দিয়াবাড়ি মেট্রোরেলের ডিপোতে হামলা; শনির আখড়ায় মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজায় আগুন ও ভাঙচুর; এলিভেটেডে এক্সপ্রেসের একাধিক টোলপ্লাজায় অগ্নিসংযোগ; বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে হামলা ও আগুন; ধানমন্ডির পিটিআইয়ের অফিসে হামলা; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিসে হামলা-ভাঙচুর ও শতাধিক গাড়ি আগুন দিয়ে পোড়ানো; মহাখালীর ডাটা সেন্টারে হামলা ও অগ্নি সংযোগ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সাবমেরিন কেবল নষ্ট করা হয়েছে। মহাখালী করোনা হাসপাতাল, পুষ্টি ইনস্টিটিউট, স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিআরটিএ ভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নরসিংদীতে কারাগারে হামলা করে সন্ত্রাসীদের বের করে নিয়ে গেছে। কয়েকজন ধরা পড়েছে, কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আফতাবনগর ওয়াসা শোধনাগারে হামলা; বাড্ডা, নিউমার্কেট ও নীলক্ষেতে পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ; রায়পুর পুলিশ কেন্দ্রে হামলা ও অগ্নিসংযোগ; রামপুরা থানা পুলিশে অগ্নিসংযোগ; মেরাদিয়া পিবিআই কার্যালয় ভাঙচুর; উত্তরায় রেললাইন উপড়ে ফেলা; মৌচাক পুলিশ বক্স; বসিলায় সিটি হাসপাতালে হামলা; কদমতলী মোহাম্মদপুর থানায় হামলা; বরিশালে র্যাবের কার্যালয়ে হামলা; গাড়ির ভেতরে র্যাব সদস্যকে হত্যা করা; পুলিশকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা; গাজীপুরে আওয়ামী লীগের নেতাকে হাসপাতাল থেকে টেনে বের করে মেরে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়েছে।’
এসময় অনেক পুলিশও আহত হয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফকিরাপুল পুলিশ বক্স ভাঙচুর; উত্তরা পুলিশের ডিসির কার্যালয় ও টিএসটির আঞ্চলিক অফিস; টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ কার্যালয়, মধুপুর ও কালিহাতি উপজেলার দলের কার্যালয়; গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে আহত করা; জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও ১১টি মোটরসাইকেল পোড়ানো; গাইবান্ধায় রেললাইন উপড়ে ফেলা ও অগ্নি-সংযোগ; বগুড়ায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় ভাঙচুর ও লুটপাট; জাসদ কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, সাংস্কৃতিক জোটোর কার্যালয়, পুলিশবক্স, সদর ভূমি অফিস, রেল স্টেশন, সরকারি শাহ সুলতান কলেজ, সদর থানা, সিটি ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকে ভাঙচুর; কোনাবাড়ি থানা এবং ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর, কোনাবাড়ি পুলিশ থানা, বাসন থানার চৌরাস্তা পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও আগুন; গাছায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে আগুন ২০টি গাড়ি পুড়িয়ে ফেলা; ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ। টঙ্গীতে ডেসকোর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ; বেক্সিমকো গার্মেন্টসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর; টঙ্গী পূর্ব থানায় হামলা; নারায়ণগঞ্জ জেলা হাসপাতালে হামলা ও অগ্নিসংযোগ; নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অফিসে হামলা; নারায়ণগঞ্জে আগুন দিয়ে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মাদারীপুরে বাস পোড়ানো হয়েছে। কদমতলী ১৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর; শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, চিটাগাং রোডে সন্ত্রাসী হামলা; সিটি করপোরেশন ঢাকা উত্তরের মহাখালী ও মিরপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের বর্জ্য পরিবহন গাড়িতে হামলা ও আগুন; মোহাম্মদপুর কার্যালয়ে মোটরসাইকেল ও ভবনের ব্যাপক ক্ষতি। কীটনাশক ওষুধ মশা মারার জন্য যে ওষধ আমদানি করা হয়েছে সেগুলো ধ্বংস করা হয়। রামপুরা পাম্প হাউজে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সবজায়গায় এই অবস্থা। মেট্রোরেলের স্টেশন পুড়িয়ে শেষ।’ মেট্রোরেলের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আপ্লুত হয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কর্মীকে হত্যা করেছে। ৫৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের নাজমুল হোসেন, ৬১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের শোভন, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের নূর আলম, আওয়ামী লীগকর্মী রোমানকে হত্যা করা হয়েছে। জুয়েলকে হত্যা করে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেছে। এই যে ঘটনাগুলো।’
হাসিনা বলেন, ‘আমরা ব্যবসার জন্য যে কাজগুলি করে দিয়েছি তার প্রতিটির ওপর আঘাত করা হয়েছে। আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে। সব জ্বলিয়ে পুড়িয়ে শেষ। এটা কোনও ধরনের কথা! এটা কোনও ধরনের আন্দোলন আমি জানি না।’
তিনি বলেন, ‘আগুন দিয়ে পোড়ানোর ফলে যে ড্যামেজটা হয়ে গেছে সেগুলি তো মেরামত করতে সময় লাগবেই। আগুন যারা দিল যারা পোড়ালো তাদের বিরুদ্ধে তো আপনাদের কথা বলতে হবে।’
দেশরত্ন বলেন, ‘২০১৩-১৪ সালে যারা অগ্নিসংযোগ করেছে তাদের অনেককেই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। জেল থেকে এসে আবার ওই একই চেহারা। তবে, এটা অত সহজে ছাড়া হবে না। এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে দেশকে নষ্ট করবে। আর অনবরত বিদেশে আজেবাজে রিপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। কাজেই আপনাদেরও সহযোগিতা চাই। বাংলাদেশের ভাবমূর্তিটা যেন থাকে, সেটা দেখবেন। দেশের ভাবমূর্তি না থাকলে আপনাদের ব্যবসা এমনিতেই লাটে উঠবে এটা মনে রাখবেন।’
তিনি বলেন, ‘আজকেও আমার কাছে যখন খবর এলো কয়েকটি গার্মেন্টসে আগুন দেবে- আমি সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করার নির্দেশ দিলাম।’ বললাম বন্ধ করা না হলে সেখানে আগুন দিয়ে দেবে। গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিল বলেই এটা করতে পেরেছি।
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা রাজনৈতিক দল যদি এভাবে সন্ত্রাস শুরু করে। তার সঙ্গে জঙ্গি- জামাত-শিবির তো জঙ্গি দল। কাজেই এটা এই জঙ্গিদেরই তো আক্রমণ। না হলে একটা সাধারণ কর্মী তাকে গলা কেটে কলেজে ফেলে রেখে দিল। গলা কাটে কে? হাত কেটে দিয়েছে। পা কেটে দিয়েছে। ছাদের থেকে ছাত্রলীগের কর্মীদের ফেলে দিয়ে মেরেছে। এই সমস্ত নৃশংসতা কে করে? শিবির হচ্ছে সম্পূর্ণ জঙ্গি। জামাতও জঙ্গি। আর আজকে বিএনপি! তাদের চেহারাটাও বেরিয়ে গেছে। এখনও নড়েনি। এখনও হুকুম দেয় চালিয়ে যাও আন্দোলন। জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের হুকুম দিয়ে যাচ্ছে। আপনারা সমর্থন করেন আমার আপত্তি নেই। আর প্রতিরোধ যদি করেন আমরা আছি আপনাদের সঙ্গে।’
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত বিদেশে গেলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কেমন ছিল আর ১৫ বছরে আমরা বাংলাদেশকে কতটা পরিবর্তন করতে পেরেছি। বিদেশে গেলে একটা সম্মান আপনারা পান।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে দিনরাত পরিশ্রম করি। কিন্তু বার বার আঘাত আসে। ২০১৩, ১৪, ১৫ সেই অগ্নি-সন্ত্রাস। সে কথা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি। হাজার হাজার সম্পদ নষ্ট করেছে। ঠিক এবার আবার দেখলাম অগ্নি-সন্ত্রাস। সেইবার ছিল গাড়ি-ঘোড়া। এবার যে কয়টা স্থাপনা সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নত এবং ব্যবসা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও ডিজিটাল সিস্টেম করার জন্য করা হয়েছে। সেই জায়গাগুলিতে আঘাত আসলো।’
ব্যবসায়ীদের তিনি বলেন, ‘এই ক্ষতিগুলি কার? যে কয়টা ভবন আমরা তৈরে করেছি। বেজা অফিস থেকে শুরু করে কোনটাই বাদ দেয়নি। হামলা করেনি, আগুন দেয়নি। উদ্দেশ্যটা কী? সেটাই আপনাদের বিবেচনা করে দেখতে হবে। এটা কি শুধু কোটা আন্দোলনের জন্য হলো? আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আপিল করেছি। তাদেরও বলেছি আপিল করতে। তারা করেছে। তারা যেভাবে চেয়েছে সেইভাবে কিন্তু কোট রায় দিয়ে দিয়েছে। কোটা আমি তো পুরো বন্ধই করে দিয়েছিলাম। এরপরও এখনও আন্দোলন- এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কী উদ্দেশ্যে করা?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে ক্ষতিগুলো হয়েছে। কারা করলো এটা কোনও রাখঢাক ব্যাপার না। এখানে ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ছাত্রদের বিরুদ্ধে। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলমাল শুরু হয়েছে, আমি ছাত্রলীগকে বলেছি, তোমরা বের হয়ে চলে আসো। বেচারা বেরিয়ে চলে এসেছে আর তাদের প্রত্যেকের রুম থেকে সমস্ত মালামাল ফেলে দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। মেরেছে। আমি বলেছি কোনোকিছু করবে না। ধৈর্য ধরো। শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলেছে। ছাত্রলীগ করে কেন এ জন্য মেয়েদের পিলারের সঙ্গে বেঁধে মেরেছে। কত ধরনের ঘটনা ঘটেছে সেগুলি বলতে চাই না। তারপরও আন্দোলনকারীর কথা ধৈর্য সহকারে শুনেছি। যখন যে দাবি করেছে, তা মেনেছি। মানার পরেও তারা কী করবে জানি না। তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবসার করে কারা পিছনে এই ঘটনা ঘটালো?’
তিনি বলেন, ‘এখন মনে হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্লান করে তারা এসেছে। জেলায় জেলায় খবর নিয়েছি। সব শিবির কর্মী ঢাকায়। কিন্তু ঢাকা শহরে না। আশেপাশে ঘাপটি মেরে থেকে এই ঘটনা ঘটাচ্ছে। বিএনপি সম্পূর্ণ মদত দিচ্ছে। আমার প্রশ্ন এটা যে এতকিছু করছে এর অর্থ সরবরাহ কারা করছে? ব্যবসায়ীদের বলবো এই খবরটা আপনারা নেবেন।’
প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে নানা অপপ্রচার ও গুজবের জবাবে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। শেখ হাসিনা নাই। শেখ হাসিনা চলে গেছে। শেখ হাসিনা পালায় না। ৭৫ এর পর ছয়টি বছর আসতে পারিনি। কিন্তু যখনই সুযোগ পেয়েছি জীবনে শঙ্কা নিয়ে চলে এসেছি। আমি পরোয়া করিনি। ২০০৭ সালে বাধা উপেক্ষা করে ফিরে এসেছি। আমার ফ্রান্সে (স্পেন হবে) যাওয়ার কথা, ব্রাজিলে যাওয়ার কথা, আমি ক্যানসেল করে দিয়েছি- যে আমার দেশের এই ক্রাইসিসে আমি যেতে পারবো না। আমাকে মানুষের পাশে থাকতে হবে।’
মানুষের জানমাল রক্ষার জন্য কারফিউ দিতে সরকার বাধ্য হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে সব থেকে সেনসেটিভ হচ্ছে ছাত্র। তাদের যেন কোনও ক্ষতি না হয় সে দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হয়েছে। আমরা পুলিশ লোকবল সবকিছু দিয়ে চেষ্টা করেছি। জানি না ছাত্রদের সঙ্গে আরও কারা ছিল। আন্দোলনে অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও যেদিন শুরু হলো তখন আন্দোলনকারী ছাত্ররা বললো, আমরা এর সঙ্গে জড়িত নই। এটা আমরা চাই না। তারা (ছাত্ররা) যখন সরে এসেছে, সেই সময় আমি আর্মি নামিয়েছি। আমি কিন্তু তার আগে আর্মি নামাইনি। অনেকে বলতে চেষ্টা করেন, ছাত্রদের বিরুদ্ধে আর্মি নামানো! আমি ছাত্র রাজনীতি করে এসেছি। ওই সেনাবাহিনী যে কী করতে পারে আমার জানা আছে। আমরা শেষ চেষ্টা করি রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে। তারপর আর্মি নামাতে বাধ্য হয়েছি। আর্মি নামিয়েছি। কারফিউ দিয়েছি। এই কারফিউর মধ্যেও তো এরা সন্ত্রাস করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এরা কারা! খুব অপরিচিত কেউ নয়। এর সঙ্গে সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। সাজাপ্রাপ্ত আসামি যে গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল- এই দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় যে সাজাপ্রাপ্ত; এই সাজাপ্রাপ্ত আসামি ওখান থেকে হুকুম দেয়। এটা জ্বালাও, ওটা জ্বালাও। এটা করো ওটা করো। আরও কয়দিন চালাও ইত্যাদি। জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি, শিবির-যতগুলো ঘটনা ও খুন-খারাপি এরা একসঙ্গে করেছে।’
ব্যবসায়ীদের দলীয় মতাদর্শে বিবেচনা করেন না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমি তো ব্যবসায়ীদের ভাগ করি না। কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি আমি তো এভাবে দেখি না। আমার থেকে কেউ এমন আচরণ এখনও কেউ পাননি। কিন্তু আমি কী চিনি না? চিনি তো সবাইকে। এ দেশের বয়স্ক রাজনীতিবিদ কিন্তু আমি। আমি চিনি সবাইকে। কার কী মত-পথ, তা আমি জানি। কিন্তু আমি দেশটাকে ভালোবাসি। যারা আমার দল করেন না। আমাদের হয়তো ভোটও দেয় না। তারাও কিন্তু ভালো ব্যবসা করে যাচ্ছেন। ব্যবসায় কখনও আমরা হাত দেইনি। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করতে দিয়েছি। তাদের উৎসাহিত করেছি। সুযোগ দিয়েছি। সুযোগ দেওয়ার সময় দল বিবেচনা করিনি। আমি ব্যবসা করি না। ব্যবসার সঙ্গেও আমি নেই। আমি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। আমার আমলে যারা ব্যবসা পেয়েছে তারা নির্বিঘ্নে পেয়েছে। হাওয়া ভবনের খাওয়া দিতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বেসরকারি খাত আমি উন্মুক্ত করেছি। সব থেকে বেশি সুযোগ ব্যবসায়ীদের দিয়েছি। কোভিডের সময় সব ধরনের সহযোগিতা আপনাদের করেছি। শ্রমিকদের বেতনটা পর্যন্ত সেই সময়ে আমরা দিয়ে দিয়েছি।’
বিবার্তা/রোমেল/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]