
ঝক্কি-ঝামেলা এড়িয়ে শিক্ষার্থীদের আরামে স্কুলে যেতে ‘স্মার্ট স্কুল বাস’ নামে একটি নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা চালু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সংস্থাটির মেয়র আতিকুল ইসলামের নির্বাচনি ইশতেহারের স্থান পেয়েছিল এই স্মার্ট বাস সার্ভিস।
৩ জুলাই, বুধবার বেলা ১১টায় রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে এই বাস উদ্বোধন করেন সংস্থাটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। এতে প্রধান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাননীয় মন্ত্রী শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ডিএনসিসি জানায়, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই এই নিরাপদ ও আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক, নিরাপদ এবং অ্যাপসভিত্তিক স্মার্ট স্কুল বাস চালুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভাড়া প্রতি কিলোমিটার হিসেবে মাসিক ৮শ থেকে ১২শ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, বনানী বিদ্যানিকেতন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে উত্তর সিটিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। উদ্যোগটি সফল হলে পরবর্তী সময়ে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও সম্প্রসারিত করা হবে।
বাস উদ্বোধনের আগে মেয়র আতিক বলেন, অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও স্মার্ট বাস সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছি। উন্নত দেশে বাচ্চাদের স্কুলিংয়ের ক্ষেত্রে এই ধরনের সার্ভিসের ব্যবস্থা করে থাকে। এখন সবার দায়িত্ব বাচ্চাদের নিরাপত্তার জন্য এই সার্ভিসটি গ্রহণ করা। একটি সুস্থ সচল ঢাকা বিনির্মাণের জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
মেয়র আতিক বলেন, যানজট নিরসনে বিভিন্ন স্কুলে বাস সেবা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে উত্তর সিটি করপোরেশন। সেজন্য বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। স্কুলগুলো বলছে, কোনো একটা স্কুলে বাস চালুর পর কী হয় তা দেখতে চায় তারা। আমরা এটা শুরু করতে পারছিলাম না। দফায় দফায় বৈঠক করতে হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে, ডিএমপির সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা প্রত্যেকটি স্কুলের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা বলেছে চালু হওয়ার পর তারা দেখতে চায়। আমরা তো চালু করে দিয়েছি।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আপনারা একেকটি বাচ্চার কাছ থেকে মাসে ১৫-২০ হাজার টাকা ফি নিচ্ছেন। কিন্তু কোনো স্কুল বাস চালু করছেন না। আপনারা আবাসিক এলাকায় স্কুল করেছেন, গাড়ির আধিক্যে ওই এলাকাবাসীর ভোগান্তি হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার সব স্কুলে বাস চালু করতে হবে।
মেয়র বলেন, সন্তানরাই বাবা-মায়ের সব থেকে মূল্যবান সম্পদ। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। স্মার্ট স্কুল বাসগুলোয় সিসি ক্যামেরাসহ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। অ্যাপসের মাধ্যমে ট্র্যাকিং ব্যবস্থাও থাকবে। একটি হটলাইন নম্বরের মাধ্যমে অভিভাবকেরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতে পারবেন।
মেয়র বলেন, সব শিক্ষার্থীর বাসার ঠিকানা অনুযায়ী বাসের রুট নির্ধারণ করা হবে। রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে একটি বাসে নির্দিষ্ট রুটের স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করবে। এর ফলে খরচ অনেক কমে আসবে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে স্কুলবাস চালু হলে যানজট কমবে। এর ফলে দূষণ কমবে, কার্বন নিঃসরণও অনেকাংশে কমবে।
ডিএনসিসির এই স্মার্ট বাসে ট্র্যাকিং এবং আরএফআইডি সুবিধার কথা জানিয়ে মেয়র বলেন, ছাত্রছাত্রীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে অভিভাবকদের জন্য রয়েছে বিশেষ অ্যাপ। সার্ভিসটি মনিটরিংয়ের জন্য রয়েছে অভিভাবক, স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং ডিএনসিসির আলাদা ড্যাশবোর্ড। এছাড়া ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে প্রতিটি বাসে থাকবে নিবেদিত ট্রিপ ম্যানেজার, বাসের ভেতর সিসিটিভি ক্যামেরা, আইএসই সার্ভিস এবং পাওয়া যাবে ২৪/৭ হটলাইন সাপোর্ট। পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া এই স্মার্ট বাসে চলাচলে ৪৫০ জন শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে বলে জানান মেয়র।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব পরিবহন সার্ভিস চালুর তাগিদ দিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, যারা ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় স্কুল গড়ে তুলেছেন, আপনাদের কিন্তু সময় এসেছে স্কুলবাসে আসার। নইলে কিন্তু আমরা আপনাদের স্কুল বন্ধ করে দিতে বাধ্য থাকব। এইভাবে শিক্ষামন্ত্রীও আমাদের বলে গেছেন। সহযোগিতা করেন, নইলে আমাদের কঠোর হতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী মুজিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষায় যে বিনিয়োগ করছেন, তার সঙ্গে সিটি কর্পোরেশন যোগ হয় তখন ভিন্নমাত্রা পায়। এই স্কুল বাস সার্ভিস চালু করে সিটি করপোরেশন যুগান্তকারী অধ্যায় শুরু করেছে। আমরা অনুরোধ করবো, এলাকা ভিত্তিক কোনো রুট পরিচালিত করা যায় কিনা। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে এ বাস দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে জানি না। তবে বাস শেয়ারিংটা যেন হয়, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। আশপাশের স্কুলের শিক্ষার্থীরা বাস সার্ভিসের সুবিধা পেলে সিটি করপোরেশন সহ সংশ্লিষ্ট সবার কষ্ট সার্থক হবে।
মন্ত্রী বলেন, সকাল বেলা যে বিদ্যালয় বেশি নিজস্ব গাড়িতে চড়ে শিক্ষার্থীরা আসে ওই স্কুল এগুলোকে মার্ক করে এই বাস সার্ভিস শেয়ারিং করতে হবে।
তিনি বলেন, পয়সা থাকলেই দামি গাড়িতে করে বাচ্চাদের স্কুলে আনতে হবে এমন মনোভাব থেকে অভিভাবকের বেরিয়ে আসতে হবে। স্কুলের পথ পায়ে হাঁটা হলে হেঁটেই স্কুল আসার অভ্যাস করাতে হবে বাচ্চাদের। অভিভাবকরা সন্তানকে যেভাবে গড়া তুলবেন; তারা সেভাবেই বেড়ে উঠবে। তাই আমাদের সন্তানদের ভোগবাদী মানসিকতা থেকে দূরে রাখতে হবে।
ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ডিএনসিসিকে সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করে নগরবাসীর সুবিধায় কাজ করতে। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরে যদি ২ হাজার স্কুলে এই স্মার্ট বাস চালু করা যায়; তাহলে শিক্ষীরা আরামে ও নিরাপদে চলাচল করতে পারবে এবং ঢাকার রাস্তার যানজটও কমবে।
জবা, গোলাপ, টগর নামে চলবে ৩ রুটের বাস : জবা, গোলাপ ও টগর- এই তিনটি ফুলের নামে ৩ রুটে চলবে এ স্কুল বাস।
রুট-১ : কুড়িল বিশ্বরোড (পুলিশ বক্সের কাছে)- কুড়িল চৌরাস্তা বসুন্ধরা গেট নদ্দা কোকাকোলা নতুনবাজার (ভাটারা থানাসংলগ্ন) নতুনবাজার (ইউএস অ্যাম্বাসির পূর্ব পার্শ্বের ঢাকা চাকা বাসস্ট্যান্ড)- বনানী বিদ্যা নিকেতন।
রুট ২ : ১০০ ফিট রাস্তায় বসুন্ধরা গেট (২নং ব্রিজ সংলগ্ন) ফ্যামিলি বাজার ছোলমাইদ/সাঈদনগর নতুনবাজার বাঁশতলা শাহজাদপুর নতুনবাজার (ইউএস অ্যাম্বাসির পূর্ব পার্শ্বের ঢাকা ঢাকা বাস স্ট্যান্ড) বনানী বিদ্যানিকেতন।
রুট ৩ : সুবাস্তু/উত্তরবাড্ডা (থানারোড) হোসেন মার্কেট লিংকরোড গুদারাঘাট গুলশান-০১ টিবি গেট ওয়ারলেস গেট আমতলি (জলখাবার) বনানী বিদ্যানিকেতন। এরই মধ্যে ডিএনসিসি স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিস চালুর জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৩৯টি স্থানে নিজস্ব ব্যয়ে স্কুল বাস স্টপেজ নির্মাণ করেছে।
২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মেয়র আতিকুল ইসলাম ঘোষণা দেন-স্কুলে যাতায়াতের জন্য ঢাকা উত্তর সিটির ব্যবস্থাপনায় স্কুল বাস চালু করা হবে। এরপরেই তিনি শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, বিআরটিসি, মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেন। অবশেষে মেয়রের একান্ত প্রচেষ্টায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে ডিএনসিসি এলাকায় চালু হচ্ছে ‘স্মার্ট স্কুল বাস’ সার্ভিস।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]