‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসে ২০২৪’ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী বাণী
ধূমপান ও তামাকের নেশা মাদক সেবনের প্রবেশ পথ: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৪, ২১:৫৯
ধূমপান ও তামাকের নেশা মাদক সেবনের প্রবেশ পথ: প্রধানমন্ত্রী
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ধূমপান ও তামাকের ভয়াল নেশা প্রাণঘাতী। ধূমপান মাদক সেবনেরও প্রবেশ পথ। তামাক ও মাদকের কুফল থেকে শিশু-কিশোরদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আরো দায়িত্ব সচেতন হতে হবে।


তিনি বলেন, ‘দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণভাবে তামাকমুক্ত করা গেলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তামাক আসক্তি থেকে দূরে থাকবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তামাক নিয়ন্ত্রণের এই কৌশল অনুসরণ করে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে।’


আগামীকাল ৩১ মে ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসে ২০২৪’ উপলক্ষ্যে আজ দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস-২০২৪’ পালন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত।


দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ প্রতিহত করি, শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করি’, অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি।”


তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী তামাকের ধোঁয়ায় ৭ হাজার রাসায়নিক রয়েছে, যার মধ্যে ২৫০টি মারাত্মক ক্ষতিকর এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী। তামাকের নিকোটিন মারাত্মক নেশা বা আসক্তির কারণ। তামাক ও ধূমপানের নেশায় আসক্তদের অর্ধেক মানুষই ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, দীর্ঘস্থায়ী অবরোধক ফুসফুসীয় ব্যাধি (সিওপিডি), অ্যাজমা এবং ধমনি ও শিরার প্রদাহজনিত বিরল রোগে (বার্জার্স ডিজিস) মারা যায়। স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশ্বখ্যাত জার্নাল ল্যানসেট-এ বলা হয়েছে, তামাকের কারণে পৃথিবীতে বছরে প্রায় ৮৭ লাখ মানুষ মারা যায়, যার মধ্যে ১৩ লাখেরও বেশি মানুষ অধূমপায়ী অর্থাৎ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। তামাকজনিত রোগে বাংলাদেশে ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে।


শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাকের ব্যবহার হ্রাস করার লক্ষ্যে ‘ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল' (এফসিটিসি) প্রণয়ন করেছে। বাংলাদেশ বহুপাক্ষিক এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ। এফসিটিসি’র আলোকে সরকার ২০১৩ সালে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’-এর সংশোধনী পাশ করেছে। জাতিসংঘ তামাককে উন্নয়নের হুমকি বিবেচনায় নিয়ে এফসিটিসির কার্যকর বাস্তবায়ন ও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণকে অন্তর্ভুক্ত করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) প্রণয়ন করেছে। এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে আমাদের সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়টিকে ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যুক্ত করেছে। সর্বোপরি, ২০১৬ সালে দক্ষিণ এশীয় স্পিকার্স সামিটে আমরা আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছি। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।


তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী প্রতি ৩০০টি সিগারেট তৈরির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ কাটা পড়ছে।


তামাক চাষ ও তামাক পাতা প্রক্রিয়াজাত করার জন্য বিশ্বে প্রতিবছর গড়ে দুই লাখ হেক্টর বনজ সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। তামাক চাষে ব্যবহৃত কীটনাশক ও তামাকের ক্ষতিকর রাসায়নিক মাটি ও পার্শ্ববর্তী জলাশয়ের পানি দূষণ করছে। ফলে মাটি, বায়ু ও পানি নির্ভর জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং কৃষিব্যবস্থা ও খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ধরনের হুমকি তৈরি করছে। অন্যদিকে তামাক প্রক্রিয়া, সিগারেট ও বিড়ির ধোঁয়ায় বায়ুর বিষ মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে, যা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।


পাশাপাশি জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বর্ধিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন ও বসতি গড়ে তোলার কারণে কৃষি জমি উল্লেখযোগ্যহারে হ্রাস পাচ্ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন, বিশেষত পানির অভাবে খাদ্যশস্য উৎপাদন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেল, সার ও কীটনাশকের মূল্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় তামাকের মত বহুমাত্রিক ক্ষতিকর ফসলের চাষ কমিয়ে যার যেখানে যতটুকু পতিত জমি আছে তা চাষের আওতায় এনে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে।


তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, তামাকের ক্ষতিকর বিষয়ে শিশু-কিশোরসহ জনসাধারণ আরো সচেতন হবে। আর এই সচেতনতা শিশু-কিশোরদের তামাক কোম্পানির প্রলোভন থেকে সুরক্ষিত রাখবে। জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অংশীজনদের প্রায়োগিক ভূমিকার মাধ্যমে আমরা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব, ইনশাআল্লাহ ।’


প্রধানমন্ত্রী ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস-২০২৪’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।


বিবার্তা/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com