সংসদ সদস্যদের আমদানি করা গাড়িতে কর আরোপে প্রধানমন্ত্রীর সায়
প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৪, ১৭:২৪
সংসদ সদস্যদের আমদানি করা গাড়িতে কর আরোপে প্রধানমন্ত্রীর সায়
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

সাধারণ নাগরিকদের সিসির উপর নির্ভর করে ৮৯ থেকে ৮৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হলেও সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগ পান। ৩৬ বছর ধরে সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা পেয়ে আসছেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে আইনপ্রণেতাদের এ সুবিধা দিচ্ছে সরকার। তবে সংসদ সদস্যদের জন্য সেই সুযোগ আর থাকছে না। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এমপিদের আমদানি করা গাড়িতে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ হতে পারে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে এবার তাদের গাড়ি আমদানিতেও শুল্ক বসানোর উদ্যোগ নিল সরকার।


সংসদ সদস্যদের (এমপি) জন্য আমদানি করা গাড়িতে শুল্ক আরোপে প্রস্তাব জানিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। তাতে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রস্তাব পুরোপুরি কার্যকর হলে সংসদ সদস্যরা আর শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করতে পারবেন না।


মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে গণভবনে বাজেট বিষয়ক সভায় এনবিআর কর্মকর্তারা সংসদ সদস্যদের আমদানি করা গাড়িতে ২৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি (সিডি) আরোপের প্রস্তাব দেন।


বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এনবিআরের এ প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন।


এর ফলে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ির সুবিধা আর থাকবে না। গাড়ির দাম ও আমদানি শুল্কের যোগফলের ওপর সম্পূরক শুল্ক বসে। ৩৬ বছর ধরে সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা পেয়ে আসছেন।


সাধারণত গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে দাম ও আমদানি শুল্কের যোগফলের ওপর সম্পূরক শুল্ক বসে। ৩৬ বছর ধরে সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা পেয়ে আসছেন। রাজস্ব আদায় বাড়াতে এবার তাদের গাড়ি আমদানিতেও শুল্ক বসানোর উদ্যোগ নিল সরকার।


আসছে ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হবে। বাজেট চূড়ান্ত করার আগে গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনে বাজেট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান।


বৈঠকে এনবিআরের কর্মকর্তারা আসছে বাজেটে কী কী প্রস্তাব করা যেতে পারে, তার নানান দিক তুলে ধরেন। এরই অংশ হিসেবে এমপিদের গাড়ি আমদানিতে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সুপারিশ করা হয়। এ প্রস্তাব শুনে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী সবুজ সংকেত দেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায়।


এমপিরা সাধারণত উচ্চ সিসির বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করে থাকেন। এসব গাড়িতে শুল্কছাড়ের কারণে সরকার এত দিন কোনো রাজস্বই পায়নি।


এনবিআর জানায়, ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এমপিরা ৩১৬টি শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করেন। এসব গাড়ির আমদানিমূল্য ২৬০ কোটি টাকা। সর্বোচ্চ শুল্ক বিবেচনায় নিলে এসব গাড়ির পেছনে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি প্রায় ২ হাজার ২১০ কোটি টাকা।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, গত বেশ কয়েকটি সংসদ থেকেই এমপিদের শুল্কমুক্ত বিলাসবহুল গাড়ি আমদানির অবাধ সুযোগ দেয়া হয়েছে। এ সুযোগে সরকারের বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ক্ষতি হয়। আইএমএফ চায় এ খাত থেকে অন্তত কিছু হলেও রাজস্ব আদায় হোক। তারই আলোকে আসছে বাজেটে এ রকম একটি প্রস্তাব থাকতে পারে।


এনবিআরের শুল্ক ও ভ্যাট খাতের সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান পাটোয়ারী গণমাধ্যমকে বলেন, রাজস্ব আয় বাড়ানোর উপায় হিসেবে এমপিদের বিলাসবহুল গাড়িতে শুল্কছাড় সুবিধা তুলে দিয়ে নতুন করে শুল্ক বসানো হলে সরকার কিছু রাজস্ব পাবে। এ প্রস্তাব খুবই ইতিবাচক।


আইএমএফ তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে করছাড় তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। তবে তাতে সাড়া দিচ্ছে না সরকার। তাই আগামী বাজেটেও আইসিটি খাতের করছাড় সুবিধা বহাল রাখা হতে পারে।


বৈঠকে অর্থমন্ত্রী যেকোনোভাবে সম্ভাবনাময় এ খাতের করছাড় সুবিধা আরও কয়েক বছর বহাল রাখার পক্ষে মত দেন।


চলতি বছর মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে কোমল পানীয়র রমরমা বাণিজ্য হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় এ বাণিজ্য বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এ সুযোগে এনবিআর আসছে বাজেটে এ খাতের ন্যূনতম করহার ৩ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার পক্ষে।


বৈঠক সূত্র জানায়, আসছে বাজেটে করপোরেট করহার আড়াই শতাংশ কমানোর পক্ষে মত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।


তবে বাজেটে নতুন করে ব্যক্তির আয়ের ওপর ন্যূনতম কর বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হলে অর্থমন্ত্রী তাতে সায় দেননি।


ব্যক্তির ওপর ন্যূনতম কর না বসানো ও করপোরেট কর কমানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এনবিআরের সাবেক করনীতির সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম।


তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এ বছর ব্যক্তির ওপর ন্যূনতম কর আরোপ করা ঠিক হবে না। আর বর্তমান ব্যবসায়িক পরিস্থিতিতে করপোরেট কর কমানো হলে ব্যবসা-বিনিয়োগের জন্য ভালো হবে।


কর্মকর্তারা আরও জানান, বছরে ৫০ লাখ টাকার বেশি আয় হলে ৩০ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে। যা বর্তমানে ২৫ শতাংশ। শেয়ারবাজারে ব্যক্তির লেনদেন মুনাফা, মেট্রোরেলের টিকেটসহ আরও কিছু ক্ষেত্রে কর আরোপে এনবিআরের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে করপোরেট কর কমাতে বলেছেন সরকার প্রধান।


শেয়ারবাজারে নিবন্ধিত নয় এমন কোম্পানির কর কমতে পারে আড়াই শতাংশ। তবে ব্যক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। মূল্যস্ফীতি কমাতে প্রধানমন্ত্রী এনবিআরকে নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com