জুলাই থেকে মেট্রোরেলের ভাড়ায় ভ্যাট বসাতে চায় এনবিআর
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২২
জুলাই থেকে মেট্রোরেলের ভাড়ায় ভ্যাট বসাতে চায় এনবিআর
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

চলতি অর্থবছরের পুরো সময় মেট্রোরেলের যাত্রীসেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট মওকুফের সময়সীমা শেষ হবে আগামী ৩০ জুন। এনবিআর এই মওকুফ সুবিধা আর অব্যাহত রাখতে চায় না বলে জানা গেছে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ সুবিধা তুলে দিতে চায় এনবিআর।


এনবিআর এই সুবিধা অব্যাহত না রাখলে রাজধানীবাসীকে যানজট থেকে কিছুটা মুক্তি দেয়া জনপ্রিয় এ গণপরিবহনটির ভাড়া আরও বাড়বে। বর্তমানে মেট্রোরেলের এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনে যেতে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা ও উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভ্রমণে ১০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।


আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী সব ধরনের করছাড় হ্রাস করার নির্দেশনা রয়েছে। সে লক্ষ্যে এবার মেট্রোরেলে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করতে চায় এনবিআর। এতে রাজধানীর নতুন এ গণপরিবহনটির ভাড়া বাড়তে পারে। তবে মেট্রোকে সব শ্রেণির মানুষের যান উল্লেখ করে ভ্যাট অব্যাহতি চায় মেট্রো কর্তৃপক্ষ।


জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, নতুন অর্থবছরের (২০২৪-২০২৫) বাজেট ঘোষণার পর অর্থাৎ আগামী জুলাই মাস থেকে মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আরোপ করা হতে পারে।


আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত মেট্রোর ভাড়ার ওপর ভ্যাট মওকুফ রয়েছে। এ মওকুফ সুবিধা আর অব্যাহত রাখতে আগ্রহী নয় এনবিআর।


জানা গেছে, মেট্রোর ভাড়ার ওপর ভ্যাট বসানো নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। ঈদের পর ফের দুপক্ষ আলোচনায় বসবে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন এনবিআর চেয়ারম্যান।


ভ্যাট আইন অনুযায়ী, যে কোনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেলের টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের বিধান রয়েছে। মেট্রোরেল যেহেতু পুরোপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গণপরিবহন, তাই মেট্রোর ভাড়াতেও ভ্যাট আরোপ হওয়ার কথা।


তবে মেট্রো কর্তৃপক্ষের যুক্তি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেলের টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের আইন আছে। কিন্তু ওইসব ট্রেনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শ্রেণি ছাড়াও সাধারণ শ্রেণি আছে। টিকিটধারী যাত্রীরা তাদের শ্রেণি পছন্দ করার সুযোগ পান। অন্যদিকে ঢাকার মেট্রোর পুরোটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সেখানে সব যাত্রীর একই টিকিট কাটতে হয়। এছাড়া মেট্রোরেল এখন পুরোপুরি গণপরিবহন, যেখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ভ্রমণ করেন।


২০২৩ সালের শুরু থেকেই মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ভ্যাট আরোপের উদ্যোগ নেয় এনবিআর। ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার শওকত আলী সাদী ভ্যাট আরোপের আহ্বান জানিয়ে তখন ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে (মেট্রোরেল কোম্পানি) চিঠিও দেন। পরে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয় এ বিষয়ে। তবে ভ্যাট আরোপ থেকে এনবিআর শেষ পর্যন্ত সরে আসে।
এদিকে গত ফেব্রুয়ারিতে ভ্যাট আরোপ নিয়ে এনবিআর ও মেট্রোরেল কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে নতুন করে আরও একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেও টিকিটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। তবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সেই প্রস্তাবেও রাজি হয়নি। পরে টিকিটের ওপর ভ্যাট না বসানোর যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে চিঠি দেয় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।


গত বছরের ২২ জানুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার শওকত আলী সাদী মেট্রোতে ভ্যাট আরোপের আহ্বান জানিয়ে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে (ডিএমটিসিএল) চিঠি দেন। পরে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও হয়। তবে ভ্যাট আরোপ থেকে এনবিআর শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসে।


মেট্রোরেল চালুর পর শুধু অফিস টাইমে নয়, সারাদিনই যানজট এড়িয়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে যাতায়াতের জন্য মেট্রোরেলকে বেছে নিচ্ছেন রাজধানীবাসী। যে কারণে খুব অল্প দিনেই যাতায়াতের অপরিহার্য ও নিরাপদ বাহন হয়ে উঠেছে মেট্রোরেল।


ডিএমটিসিএলের আওতায় মেট্রোরেল লাইন-৬-এর মাধ্যমে প্রথমে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশন পর্যন্ত চলাচল করছে। ২০২৫ সালের মধ্যে কমলাপুর স্টেশন চালু হবে বলে আশা করছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ।


বর্তমানে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় এবং মতিঝিল-এই ১৬টি স্টেশনে মেট্রোরেল চলাচল করছে। শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধ।


মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের চলাচল শুরু হয় ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর। এর একদিন আগে ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন। আর গত ৫ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে যাত্রী চলাচল শুরু হয়। এরও একদিন আগে ৪ নভেম্বর প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।


উত্তরা থেকে মতিঝিল ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটারের পুরো রুটটি ৪০ মিনিটেরও কম সময়ে ভ্রমণ করে মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ৬০,০০০ যাত্রী বহন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২৪ জুন এমআরটি লাইন-৬ নামে পরিচিত মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। শুরুতে এই প্রকল্পের ব্যয় ছিল প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। মূলত মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১.৬ কিলোমিটার বাড়তি অংশ নির্মাণ, প্রতিটি স্টেশনের জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন নতুন অনুষঙ্গ যুক্ত হওয়ায় খরচ বেড়েছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা।


মেট্রোরেল প্রকল্প নেয়া হয় ২০১২ সালে। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি হয় পরের বছর। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। শুরুতে মতিঝিল পর্যন্ত এই মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও পরে তা কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়।


ডিএমটিসিএলের ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী, বর্তমানে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ১০০ টাকা। এছাড়া যে কোনো দূরত্বে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। তবে এ ভাড়ার সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত করলে ২০ টাকার ভাড়া বেড়ে দাঁড়াবে ২৩ টাকায়।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com