'বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়াই স্বাধীনতা দিবসের মূল লক্ষ্য'
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৪, ১২:১৪
'বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়াই স্বাধীনতা দিবসের মূল লক্ষ্য'
সামিনা বিপাশা
প্রিন্ট অ-অ+

আজ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ঐতিহ্য, ইতিহাস ও শৌর্যবীর্যের অবিস্মরণীয় ও গৌরবময় দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার দিন, বাঙালির বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন ২৬ মার্চ। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে, বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে। ত্রিশ লক্ষ বীর শহিদের রক্ত এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমে আর আত্মত্যাগে অর্জিত আজকের স্বাধীনতা।



১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত বাঙালির উপর অন্যায়ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে, নিষ্ঠুর ধ্বংসযজ্ঞ চালায় সারাদেশে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অপারেশন সার্চলাইটের নামে বাঙালির উপর চালানো নৃশংস ও নির্মম গণহত্যা শুরুর পর ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন-



'এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।'


স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই পাকিস্তানি বাহিনী গ্রেফতার করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণায় সেদিনই ঐক্যবদ্ধ সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোটা জাতি। এর আগে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চ বজ্রকণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম... এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তাঁর বজ্রকণ্ঠের ১৮ মিনিটের ভাষণ হয়ে গেল বাঙালির স্বাধীনতা প্রথম প্রেরণা ও নির্দেশনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের স্ফুলিঙ্গে উজ্জীবিত সশস্ত্র জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের মুক্তির ইতিহাস স্বাধীনতার ইতিহাস।


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ’৪৮-এ বাংলা ভাষার দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পথ বেয়ে ’৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ’৫৬-এর সংবিধান প্রণয়ন আন্দোলন, ’৫৮-এর মার্শাল ’ল বিরোধী আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফা আন্দোলন, ৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর রক্তঝরা গণঅভ্যুত্থান, ৬-দফা ভিত্তিক ’৭০-এর ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ খ্যাত কালজয়ী ঐতিহাসিক ভাষণ ও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন প্রভূত ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে বাঙালি জাতি।


আজ ৫৪তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে প্রত্যুষে ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। আজ সরকারি ছুটির দিন।


স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।



জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক স্মার্ট ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণের শপথ গ্রহণ করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ৫৪তম স্বাধীনতা দিবসে বলেন, 'আজকের এই মহান দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা-স্বাধীনতার চেতনায় বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলব। ইনশাল্লাহ।'



মহান স্বাধীনতার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বিবার্তাকে বলেন, আমাদের স্বাধীনতা দীর্ঘ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অর্জিত হয়েছে। স্বাধীনতা কারো দয়ার দান ছিল না, স্বাধীনতা কোনো গোলটেবিলের আলোচনায় হয়নি। জাতির পিতার নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম করে অর্জিত এই স্বাধীনতা। '৭০-এর নির্বাচনে ম্যান্ডেট পাওয়ার পরই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। ৭ মার্চের সেই আহ্বানই ছিল আমাদের স্বাধীনতার আহ্বান। ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট শুরু হওয়ার পরে যখন গণহত্যা শুরু হল, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। জাতির পিতা তরুণ সমাজকে যুদ্ধ করে মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার জন্য নির্দেশনা দেন। তারই নির্দেশে জীবন বাজি রেখে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছিল মুক্তিযোদ্ধারা।


স্বাধীনতার অর্জনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন উল্লেখ করে হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ হবে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক চেতনার সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু সেই স্বপ্ন জাতিকে দেখিয়েছিলেন এবং বাস্তবায়নও করেছিলেন। তিনি দেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্ন পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের আগেই তাকে ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছিল। আজকে তাঁরই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর স্বপ্ন পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন, এগিয়ে যাচ্ছেন স্বপ্ন পূরণের পথে। বাংলাদেশ চরম দারিদ্র্যপূর্ণ দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে এবং আমরা আশা করছি ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আমরা বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করতে পারব এবং সেটাই হবে স্বাধীনতা দিবসে আমাদের মূল লক্ষ্য।


মহান স্বাধীনতার চেতনা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দৃঢ়ভাবে বিকশিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বিবার্তাকে বলেন, স্বাধীনতার পথ মুক্তির পথ সত্যের পথ, এর বিপক্ষে যারা অবস্থান নেয় তাদের পথ মিথ্যার। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা যারা বিশ্বাস করি, আমরা সেই আদর্শকে যত ধারণ করবো এবং যত ঐক্যবদ্ধ হবো, শুধু মুখে বলবো না অন্তরে ধারণ করবো এবং সে আদর্শ আমাদের জীবনে প্রতিফলিত করবো। খুবই অল্পসংখ্যক বিশ্বাসঘাতক যারা আছে, যারা স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়- তাদের ষড়যন্ত্র কোনো কাজে আসবে না। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সাথে নবীন প্রজন্মকে সবসময় যুক্ত রাখতে হবে। নবীন প্রজন্মই আগামী দিনের বাংলাদেশ পরিচালনা করবে, তাদের মধ্যে যদি স্বাধীনতার চেতনা থাকে তাহলে গুটিকয়েক স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থানকারী একসময় উপলব্ধি করবে তাদেরও স্বাধীনতার পথেই আসাতে হবে।


স্বাধীনতার চেতনা তরুণদের মধ্যে বিকশিত করার জন্য সংস্কৃতিচর্চার কথা উল্লেখ করেন আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সেইসাথে শিক্ষাক্ষেত্রকে সংস্কৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট করা আব্যশক এবং তাতেই স্বাধীনতার চেতনা সমুন্নত হবে বলেই মনে করেন এই শিক্ষাবিদ।


গণহত্যা দিবস উপলক্ষে সোমবার (২৫ মার্চ) শিল্পকলা একাডেমিতে সেমিনার, সংলাপ, আর্ট ক্যাম্প, চারুকলা, গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার প্রযোজনার পোস্টার ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার উপর ছবি আঁকেন দেশের বরেণ্য ও বিশিষ্ট ও প্রতিশ্রুতিশীল চারুশিল্পীরা। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘২৫ মার্চ ভয়াল রাতে নিরীহ বাঙালির উপর পাক বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণ ও গণহত্যার ভয়বহতা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। সংস্কৃতির সব ধরনের মাধ্যমে সেই ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। যাতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তা উপলব্ধি করতে পারে। আমরা বাঙালি, আমরা সাহসী জাতি। আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, সেই গৌরব আমরা অক্ষুণ্ন রাখব।’


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অর্জিত স্বাধীনতার মূলমন্ত্র সবসময়ই বাংলার প্রতিটি মানুষের জন্য। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করে ও মহান স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে আসবে প্রকৃত মুক্তি। বাংলাদেশ হয়ে উঠবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলা।


বিবার্তা/এসবি/রোমেল/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com