'বাঙালি জাতির আলোকবর্তিকা বঙ্গবন্ধু'
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৪, ০৯:০০
'বাঙালি জাতির আলোকবর্তিকা বঙ্গবন্ধু'
সামিনা বিপাশা
প্রিন্ট অ-অ+

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী আজ রবিবার (১৭ মার্চ)। একই সাথে ১৭ মার্চ ‘জাতীয় শিশু দিবস’।



জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির জন্য আলোকবর্তিকা হিসেবে এসেছিলেন। তিনি না থাকলে বাংলাদেশ স্বাধীন হত না। তাঁর স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার সূর্যসন্তানেরা জীবন বাজি রেখে নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল। কিন্তু স্বাধীন দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির আগেই ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে সপরিবার প্রাণ দিতে হয়েছিল জাতির পিতাকে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায়। বাঙালির আদর্শের প্রতীক বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন করার মধ্য দিয়ে জাতীয় শিশু দিবসে নতুন প্রজন্ম নিজেদের জীবন বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শে আলোকিত করার শপথ নিতে পারে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে উন্নত আত্মমর্যাদাশীল সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের দেশ হিসেবে গড়ে তোলা- সেই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যই বাঙালির অঙ্গীকার। এমনই মতামত ব্যক্ত করেছেন বিশিষ্টজনেরা। সেই আলোচনায় যাওয়া আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহসী, কর্মময় ও ত্যাগী জীবনের দিকে আলোকপাত করা যাক।



বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মার্চ (৩ চৈত্র ১৩২৭ বঙ্গাব্দ) রাত ৮টায় তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের বাইগার নদী তীরবর্তী টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা শেখ লুৎফর রহমান ও মা সায়েরা খাতুন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। মা-বাবা আদর করে তাঁকে ‘খোকা’ বলে ডাকতেন। অজপাড়াগাঁয়ের সেই খোকাই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা বাঙালি জাতির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।



শৈশবেই শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ মানুষের অধিকার সম্পর্কে ছিলেন সচেতন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সাধারণ মানুষের ন্যায্য দাবি, অধিকার আদায়ে রাজনীতির কোনো বিকল্প নেই। তাই স্কুল জীবনেই তিনি রাজনীতি শুরু করেন এবং সান্নিধ্য লাভ করেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতো মহান নেতার।



১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত প্রতিদিনই কঠিন সংগ্রামের জীবন যাপন করেছেন তিনি। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসন শোষণ ও নিপীড়ণের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য নিরলস সংগ্রাম করে গিয়েছেন। এ সংগ্রামের পথ মোটেও সহজ ছিল না। সাধারণ মানুষের অধিকার আদায় করতে গিয়ে তার স্বল্প জীবনের অধিকাংশ সময়ই কেটে গেছে জেলখানার অন্ধকারে। তবুও মানুষের কথা তিনি ভোলেননি। সংগ্রামের পথ থেকে তিনি সরে আসেননি। আপসহীন চিত্তে সারাজীবন উৎসর্গ করেছেন বাংলার মানুষের জন্য।


বঙ্গবন্ধু জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই সংগ্রাম করে গেছেন মানুষের জন্য, তিনি স্বপ্ন দেখতেন সোনার বাংলা গড়ার। বাংলার মানুষের অধিকার আদায় করতে গিয়ে ৪৬৮২ দিন বা প্রায় ১৩ বছর জেলখানার অন্ধকারে তিনি কাটিয়েছেন, তবুও তিনি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি।


শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অবারিত আদর, স্নেহ ও ভালোবাসা ছিল, ছিল স্বপ্ন। শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা, জাতির পিতার মানবীয় গুণাবলীর চর্চা ও আদর্শ শিশুদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া, শিশুদের প্রতি জাতির পিতার ভালোবাসা স্মরণের জন্যই মূলত জাতির পিতার জন্মদিন জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়।


উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনটিকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে জাতির পিতার জন্মদিনটির সঙ্গে জাতীয় শিশু দিবস একসঙ্গে পালিত হয়ে আসলেও ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের থেকে কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর আবার ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে থেকে নিয়মিতভাবে দিবসটি গুরুত্বসহকারে পালিত হচ্ছে।


পাকিস্তানি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার যে ডাক দিয়েছিলেন তা অবিস্মরণীয়। সেদিন তাঁর বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এই অমর আহ্বানেই স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিপীড়িত কোটি বাঙালি। সেই মন্ত্রপূত ঘোষণায় বাঙালি হয়ে উঠেছিল লড়াকু এক বীরের জাতি।


১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেও বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠেই জাতি শুনেছিল মহান স্বাধীনতার অমর ঘোষণা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ওই রাতে বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তাকে বন্দি থাকতে হয় পাকিস্তানের কারাগারে। তার আহ্বানেই চলে মুক্তিযুদ্ধ। বন্দিদশায় মৃত্যুর পরোয়ানা মাথায় ঝুললেও স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করেননি অকুতোভয় এ মহান নেতা। মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। বীরের বেশে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু।


দেশে ফিরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখার পাশাপাশি দেশের মানুষকে উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত করেন বঙ্গবন্ধু। দেশগড়ার এই সংগ্রামে চলার পথে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, দেশের মানুষ কখনও তাঁর ত্যাগ ও অবদানকে ভুলে যাবে না। অকৃতজ্ঞ হবে না। নবগঠিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধু তাই সরকারি বাসভবনের পরিবর্তে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের সাধারণ বাড়িটিতেই বাস করতেন।


মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে তারা একের পর এক চক্রান্তের ফাঁদ পেতেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর বিপথগামী উচ্চাভিলাষী কয়েকজন সদস্যকে ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যবহার করেছে ওই চক্রান্তেরই বাস্তব রূপ দিতে। এরাই স্বাধীনতার সূতিকাগার খ্যাত ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাড়িটিতে হামলা চালায় গভীর রাতে। হত্যা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারকে। বিশ্ব ও মানবসভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সেদিন তারা কেবল বঙ্গবন্ধুকেই নয়, তার সঙ্গে বাঙালির হাজার বছরের প্রত্যাশিত অর্জন স্বাধীনতার আদর্শগুলোকেও হত্যা করতে চেয়েছিল। মুছে ফেলার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল বাঙালির বীরত্বগাথার ইতিহাসও। বঙ্গবন্ধুর নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড বাঙালি জাতির জন্য করুণ বিয়োগগাথা হলেও ভয়ঙ্কর ওই হত্যাকাণ্ডে খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত না করে বরং দীর্ঘ সময় ধরে তাদের আড়াল করার অপচেষ্টা হয়েছে। এমনকি খুনিরা পুরস্কৃতও হয়েছে নানাভাবে। হত্যার বিচার ঠেকাতে কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করেছিল বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাক সরকার। সেই অধ্যাদেশকে বৈধতা দিয়েছিল জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড জিয়াউর রহমান। তবে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হলে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত করে নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে বিচার সম্পন্ন করে।



বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু হয়ে আছেন বাঙালি জাতির প্রেরণার চিরন্তন উৎস। রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু নীতি ও আদর্শের প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হন। জাতির পিতার ১০৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আমি এই মহান নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।’


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকের শিশুরাই হবে ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট জনগোষ্ঠী। জাতীয় শিশু দিবসে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি মহান নেতার জীবন ও আদর্শ অনুসরণে এদেশের শিশুদের যথাযোগ্য সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।


তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে আজকের শিশুরাই। দলমত নির্বিশেষে সকলে মিলে একযোগে কাজ করে শিশুদের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত করে তাদের ব্যক্তিত্ব গঠন, সৃজনশীলতার বিকাশ, আত্মবিশ্বাসী এবং মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।



আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বিবার্তাকে বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির জন্য আলোকবর্তিকা হিসেবে এসেছিলেন। বাঙালি জাতি দীর্ঘদিন ধরে শোষণ-নিপীড়ন-বঞ্চনার মধ্যে ছিল। বাঙালি জাতির মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ছিল শত শত বছর ধরে। এই জাতিকে শোষণ করেছে পর্তুগীজরা, ব্রিটিশরা, পাকিস্তানিরা। সবসময়ই মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ছিল, কিন্তু পায়নি। বাঙালির মুক্তির জন্য ১৯ শতকের প্রথম দিকে হাজী শরীয়তউল্লাহ ফরায়েজী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এরপর তিতুমীর ছোট্ট পরিসরে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন এবং বাঁশের কেল্লা তৈরি করে ব্রিটিশ সেনাদের সাথে যুদ্ধ করে ব্যর্থ হন। ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন মাস্টারদা সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম, বাঘা যতীন। তারা জীবন দিয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন কিন্তু বাঙালি জাতির মুক্তি আসে নাই। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বলেছিলেন, 'তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব'। বাঙালি রক্ত দিয়েছিল কিন্তু স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি। অবশেষে ১৯২০ সালে জন্মগ্রহণ করেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির অভ্যুদয়ের সূচনা হয়েছিল। তিনি বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, ধাপে ধাপে আন্দোলন-সংগ্রামকে স্বাধীনতার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।



মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ৫২'র ভাষা আন্দোলন দিয়ে শুরু হয়েছিল। ৬২'র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬'র ছয় দফা আন্দোলন যেটা আমাদের মুক্তির সনদ। ৭০-এর নির্বাচনে জয়লাভ করে ১৯৭১ সালে জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার সূর্যসন্তানরা জীবন বাজি রেখে নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু স্বাধীন দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির আগেই ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে সপরিবার প্রাণ দিতে হয়েছিল জাতির পিতাকে। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথ চলা শুরু হয়।



তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ। একসময় যে বাংলাদেশ ছিল চরম দারিদ্যের , সেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ, যে বাংলাদেশ ছিল ব্যর্থ ও হতাশার আজ সেই বাংলাদেশ সম্ভাবনার বাংলাদেশ হিসেবে গোটা বিশ্বে পরিচিত। বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ উপনীত হবে, ২০৪১ সালের মধ্যে অন্যতম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে উন্নত আত্মমর্যাদাশীল সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সেই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যেই আমরা পথ চলছি এবং জাতির পিতার ১০৪তম জন্মবার্ষিকীতে আমাদের লক্ষ্যই হবে সে স্বপ্নপূরণের অঙ্গীকার।


বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বিবার্তাকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হত না, তাঁকে জাতির পিতা বলা হয় এমনিই তো বলা হয় না। তিনি তো একাত্তরে শুরু করেননি, শুরু করেছিলেন ১৯৪৮ সালে। ভারত থেকে ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পরই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন পাকিস্তানিরা দ্বিজাতিতত্ত্বের কথা বলে বাঙালিদের সাথে প্রতারণা করেছে। পূর্ববঙ্গের সব মানুষই বিষয়টা টের পেল যখন বলা হল, উর্দুই হবে দেশের রাষ্ট্রভাষা। সেটা ছিল ভাষা ও সংস্কৃতির উপর আক্রমণ। বঙ্গবন্ধু না হলে ৭ মার্চ হত না, ২৬ মার্চ হত না, দেশও স্বাধীন হত না। বঙ্গবন্ধুর সাহস ও মেধার জন্য ফিদেল কাস্ত্রোর মতো নেতা তাঁকে হিমালয়ের সাথে তুলনা করেছেন। সারা পৃথিবী তাকে বিরাট মাপের একজন মানুষ হিসেবে জানত, শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জায়গায় তাকে বিশ্ববন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। ৭ মার্চের ভাষণের পর তাকে রাজনীতির কবি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল আমেরিকান পত্র-পত্রিকাগুলো।



তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বলতেন, আমি প্রথমে মানুষ, আমি মানুষের কথা বলি। তারপর আমি বাঙালি, বাঙালির কথা বলি। তারপর তিনি ধর্ম পরিচয়ের কথা বলতেন, ধর্ম পরিচয়কে তিনি তিন নম্বরে রাখতেন। এই মানুষটি মনে-প্রাণে ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু পরিষ্কার ভাষায় বলে দিয়েছিলেন, ধর্মের ভিত্তিতে কোনো রাজনীতি বাংলাদেশে চলবে না। এরপর ৭৫ সালে তাকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান দেশে ধর্মের রাজনীতি শুরু করেছিলেন, যার প্রভাব এখনো দেশে বর্তমান। তাঁর সম্পর্কে বিশ্ববাসী বলেন, তিনি না থাকলে বাংলাদেশ স্বাধীন হত না। বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে বলতে গেলে দিনের পর দিন বলা যাবে, শেষ হবে না।



শিশু একাডেমির মহাপরিচালক আনজীর লিটন বিবার্তাকে বলেন, আমরা এই যে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিক উদযাপন করছি, এই উদযাপন করার মধ্য দিয়ে আমাদের শিশু-কিশোররা অর্থাৎ নতুন প্রজন্ম এরা নিজেদের জীবনকে বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শে আলোকিত করার শপথ নিতে পারে। বঙ্গবন্ধুর জীবনার্দশ অনুসরণ করে এইভাবে চলবো, এইভাবে দেশকে ভালোবাসবো, এইভাবে দেশের মানুষকে ভালোবাসবো এই শপথ গ্রহণের শিক্ষা শিশু-কিশোরদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।


তিনি বলেন, এবারের প্রতিপাদ্য, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে আনবো হাসি সবার ঘরে। তাই আমরা চাই, শিশুরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বড় হয়ে উঠুক। বঙ্গবন্ধু দেশ গড়ার জন্য, সুনাগরিক হওয়ার জন্য আমাদের যে শিক্ষাগুলো দিয়ে গিয়েছেন আমাদের শিশুরা যেন এই শিক্ষার আলোকে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে সেজন্যই শিশু দিবস উদযাপন।


১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে দৈহিকভাবে হত্যা করা হলেও তাঁর মৃত্যু নেই। তিনি একটি জাতিরাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্থপতি তিনিই। যতদিন এ রাষ্ট্র থাকবে, ততদিন অমর তিনি। সমগ্র জাতিকে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রেরণায় প্রস্তুত করেছিলেন ঔপনিবেশিক শাসক-শোষক পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে। তিনি চিরঞ্জীব বাঙালি জাতির চেতনায়।


বিবার্তা/এসবি/রোমেল/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com