ক্ষমা করে দিও, হয়তো আর যোগাযোগ হবে না: জিম্মি নাবিক তৌফিক
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৪, ১৫:৪২
ক্ষমা করে দিও, হয়তো আর যোগাযোগ হবে না: জিম্মি নাবিক তৌফিক
খুলনা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

‘দোয়া করো, হয়তো আর যোগাযোগ হবে না’- ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ ‌‘এমভি আবদুল্লাহ’ এর দ্বিতীয় প্রকৌশলী খুলনার মো. তৌফিকুল ইসলাম স্ত্রী ও মায়ের সঙ্গে শেষবার এ কথাই বলেছিলেন।


তিনি খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ২০/১ করিমনগর এলাকার মো. ইকবাল এবং দিল আফরোজা দম্পতির ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট‌।


১২ মার্চ, মঙ্গলবার বিকেল ৫টার পরে তৌফিকুল ইসলামের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় বলে জানান মা বিল আফরোজ ও স্ত্রী জোবায়দা নোমান।


জানা গেছে, ইঞ্জিনিয়ার তৌফিকুল ইসলামের পরিবারে রয়েছেন বাবা ইকবাল হোসেন, মা বিল আফরোজ, স্ত্রী জোবায়দা নোমান এবং দুই সন্তান তাসফিয়া তাহসিনা (৭) ও আহমেদ রুসাফি (৫)।


ইঞ্জিনিয়ার তৌফিকুল ইসলামের স্ত্রী জোবায়দা নোমান বলেন, বিকেল ৫টার দিকে কথা হয়েছিল। তিনি ফোনে বলেছেন- ‘দোয়া করো। আমাদের তো সোমালিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে, হয়তো আর যোগাযোগ হবে না। কী হবে কিছুই তো জানি না।’ এটাই শেষ কথা। এরপরে আর কথা হয়নি।


তিনি জানান, চট্টগ্রাম থেকে ইফতেখার ফোন করে পরিবার থেকে লোক পাঠাতে বলেছিলেন। আমার মেঝো ভাসুর এবং আমার ভাই দুজন চট্টগ্রাম গিয়েছেন।


আমাদের দাবি একটাই, সবকিছুর বিনিময়ে হলেও ও আমাদের মাঝে ফিরে আসুক। তার সহকর্মীরা আল্লাহর রহমতে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসুক।


মায়ের সঙ্গে শেষ কথোপকথনের সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন তৌফিক। বলেছিলেন, বিপদে পড়েছি মা, ক্ষমা করে দিও। পরবর্তীতে কী হবে জানি না।


১৩ মার্চ, বুধবার দুপুরে তার বাড়িতে মা দিল আফরোজার সঙ্গে কথা হয়।


তিনি বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) বিকালে ছেলে হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়ে কান্নাকাটি করছিল। আমাদের কাছে দোয়া চাচ্ছিল। বার বার ক্ষমাও চাচ্ছিল। বললো- ‘আম্মা আমি ভালো আছি, চিন্তা করো না।’ আমি বললাম, চিন্তাতো লাগেই, কী করবো তোমরা বন্দি অবস্থায় আছো। টেনশন তো হয়ই। আমি তাকে নানা দোয়া পড়তে অনুরোধ করি। একপর্যায়ে সে আমাকে মা বলে ডাক দিলে, সাড়া দেওয়ার আগেই ঠিক (বুঝতে পারি) পাই, কে যেন তার ফোনটি কেড়ে নিয়েছে। তার পর থেকে আর যোগাযোগ করতে পারিনি। গত ২৫ নভেম্বর সে বাড়ি থেকে চট্টগ্রামে ওই জাহাজটিতে গিয়েছিল।


তিনি বলেন, ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। জানি না সে কী অবস্থায় আছে। আমাদের দাবি, শুধু আমার ছেলে না, সবাইকে দ্রুত সুস্থভাবে-ভালোভাবে উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হোক।


তিনি আরো বলেন, ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে অন্তত স্বস্তিতে থাকতে পারতাম।


এদিকে তৌফিকের ৭ বছর বয়সী মেয়ে তাসফিয়া তাহসিনা ও ৫ বছর বয়সী ছেলে আহমদ মুসাফি বাবার খবর শুনে মঙ্গলবার বিকাল থেকেই কাঁদছে।


উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুরে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’। শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। পরে জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যায় দস্যুরা।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com