অগ্নিঝরা ২ মার্চ : প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন
প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৪, ০৯:৩৬
অগ্নিঝরা ২ মার্চ : প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

আজ ঐতিহাসিক ২ মার্চ। ১৯৭১ সালে এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।


লাল-সবুজ বাংলাদেশের প্রতীক। যে সবুজ ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের মাতৃভূমির পুরোটা জুড়েই। আর লাল আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীকী রং। এই পতাকাই বিশ্বের দরবারে পরিচয় করায় লাল-সবুজে ঘেরা প্রিয় বাংলাদেশকে। লাল রঙের ভরাট বৃত্তটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ছিনিয়ে আনা স্বাধীনতার নতুন সূর্যের প্রতীক।


এইদিনে ঢাকা ছিল হরতালের নগরী, মিছিলের নগরী এবং কারফিউর নগরী। দিনের হাইলাইট ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের জাতীয় পতাকা উত্তোলন।


সকাল থেকেই মিছিল ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়মুখী। স্মরণকালে এমন ছাত্র সমাবেশ দেখেনি কেউ! নিউমার্কেটের মোড় থেকে নীলক্ষেতের সড়ক দিয়ে পাবলিক লাইব্রেরি পর্যন্ত যার বিস্তার। এদিন বটতলায় ওড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা, ওড়ায় ছাত্রলীগের নেতৃত্বাধীন ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ।সমাবেশ শেষে বিশাল এক মিছিল রড ও লাঠি উচিয়ে ঢাকা শহর প্রদক্ষিন করে।


উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে এদিন থেকে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান কথাটা একরকম হাওয়া হয়ে যায় বাঙালিদের মুখ থেকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সন্ধ্যায় তার প্রেস কনফারেন্সে বারবার বাংলাদেশ উচ্চারণ করেন।


ঢাকা শহরে ছিল হরতাল। স্কুল-কলেজ, কল-কারখানা সবগুলো ছিলো জনশূন্য, কোনো অফিসে কাজ হয়নি। লোকসমাগম বলতে রাস্তায় এবং প্রতিবাদ সমাবেশে। আগেই বলা হয়েছে তাদের গন্তব্য।


সারাদিন একটি ট্রাকে করে আওয়ামী লীগের সদস্যরা সবাইকে শান্তি বজায় রাখার আহবান জানান। বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় এটাই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ।


সারা শহরে সরকারের পেটোয়া বাহিনী হরতাল ঠেকাতে মাঠে নামে। পঞ্চাশ জনের মতো গুলিবিদ্ধ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এদের বেশীরভাগই তেজগাঁও এলাকার। তেজগাঁও পলিটেকনিক স্কুলের ছাত্র্ আজিজ মোর্শেদ ও মামুনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনার পর আজিজ মারা যান।


সামরিক আইন প্রশাসকের তরফে এদিন কারফিউ জারি করা হয়। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত এই কারফিউ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অব্যহত থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়। সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলন করেন শেখ মুজিবুর রহমান যাতে নিরস্ত্রদের উপর গুলি বর্ষণের তীব্র নিন্দা করা হয়।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দিন সন্ধ্যায় এক প্রেস কনফারেন্সে নিরস্ত্রদের উপর গুলি বর্ষণের তীব্র নিন্দা করা হয়। পর দিন ৩ মার্চ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে অর্ধদিবস (ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা) হরতালের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু। পর দিন ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে পল্টনে এক সমাবেশের ঘোষণা দেন তিনি। এ দিন সামরিক আইন প্রশাসকের তরফে কারফিউ জারি করা হয়। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত এই কারফিউ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অব্যহত থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়।


১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে পতাকার মাঝের লাল বৃত্তের ভেতর হলুদ রঙের মানচিত্রটি বাদ দিয়ে লালবৃত্ত সংযোজন করা হয়, যা উদীয়মান সূর্যের প্রতীক ও স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীদের রক্তের স্মৃতি বহন করে। মানচিত্রটি পতাকার উভয় পাশে সঠিকভাবে ফুটিয়ে তোলার সমস্যার কারণে পতাকা থেকে মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলা হয়। পতাকার মাপ, রং ও তার ব্যাখ্যা সংবলিত একটি প্রতিবেদনে জমা দিতে বলা হয় চিত্রশিল্পী কামরুল হাসানকে। কামরুল হাসানের ডিজাইনে পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। তখন পতাকার আকার ও রং কী হবে, তা ছাত্রনেতাদের মতামতের ভিত্তিতেই করা হয়। শাজাহান সিরাজের প্রস্তাবে পতাকার মধ্যে লাল রং, আ স ম আবদুর রবের মতামতে জমিন সবুজ, মার্শাল মণির মতে গাঢ় সবুজ রং ও কাজী আরেফ আহমেদের প্রস্তাবে বাংলাদেশের মানচিত্র বসানো হয়। শিবনারায়ণ দাস পতাকার ডিজাইন তৈরি করেন। ছাত্রনেতা খসরু নিউমার্কেট থেকে কালি, তুলি ও কাপড় কিনে আনেন। পতাকাটি সেদিন পেঁচিয়ে রেখে দেয়া হয় নিরাপত্তাজনিত কারণে। এই পতাকাটিই ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উড়ানো হয়েছিল। বাংলাদেশের পতাকা সব দিবসে সাধারণ মানুষের উত্তোলন করা আইনত অপরাধ। তবে জাতীয় পতাকা যেসব দিবসে উত্তোলন করা যাবে তা হলো স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, বিজয় দিবসসহ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ঘোষিত অন্য যে কোনো দিবসে। এ ছাড়া যে কোনো দিবসে এই প্রতীক ব্যবহার করতে পারবেন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com