পুঠিয়ায় অবৈধ ইটভাটার জ্বালানি কাঠ, প্রশাসন ম্যানেজ
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:০১
পুঠিয়ায় অবৈধ ইটভাটার জ্বালানি কাঠ, প্রশাসন ম্যানেজ
পুঠিয়া (রাজশাহী) থেকে শাহ্ সোহানুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় যত্রতত্র গড়ে উঠছে অবৈধ ইটভাটা। নেতা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বেশিরভাগ ইটভাটার মালিকগণ কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করছে কাঠ। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোনো প্রকার তদারকি না থাকায় ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় জমির উর্বরতা হ্রাস, ফলজ ও বনজ গাছপালা ধ্বংস এবং পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। দফায় দফায় ফসলহানিতে এলাকার কৃষকদের প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, পৌরসভা সদরসহ উপজেলায় ১৪টি ইটভাটা রয়েছে। যার বেশির ভাগের পরিবেশ অধিদফতরের সনদ অথবা বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে ভাটা মালিকরা। ইটভাটা নীতিমালা অনুযায়ী পৌরসভা, সংরক্ষিত আবাসিক-বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, বনভূমি, জলাশয়ের আসে পাসে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। প্রজ্ঞাপনে ইটভাটায় ভিটা, উর্বর মাটি ব্যবহারকারীকে প্রথমবার দু’লাখ টাকা ও দু’বছর কারাদণ্ড। দ্বিতীয়বার নিয়ম ভঙ্গ করলে দু’লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও দু’বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। অপরদিকে ইটভাটায় জ্বালানি কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহার করলে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া সনদবিহীন ইটভাটা তৈরি করলে ১ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়ের নির্দেশনা রয়েছে।


অপরদিকে ১৯৮৯ সালের কয়লা পোড়ানো নিয়ন্ত্রণে একটি আইন প্রণায়ন করা হয়। এতে বলা হয়েছে, উপজেলা চেয়ারম্যান অথবা তার ক্ষমতা প্রাপ্ত ব্যক্তি ইটভাটা পরিদর্শন করে সেগুলোতে আইন প্রয়োগ করবেন। আর আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা আছে। এখানে সে আইন কেবল মাত্র কাগজে কলমেই রয়েছে। পুঠিয়ার ইটভাটার ক্ষেত্রে প্রশাসনিকভাবে এ আইন বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেই। যার ফলে বছরের প্রায় ৮ মাস ইটভাটার মালিকগণ তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে।


অপরদিকে পৌরসভা আইনে পৌর এলাকায় কোনো প্রকার ইটভাটা তৈরি ও কার্যক্রম পরিচালনা করার নিয়ম না থাকলেও এখানে চলছে তার ব্যতিক্রম। পৌরসভার কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহায়তায় সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে গত প্রায় ২৩ বছর যাবত প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসা করছেন এক ইটভাটার মালিক।


একদিকে ইটভাটার কারণে ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। অপরদিকে ভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে এলাকার ফসলি জমি, আমের বাগান, ডাব-নারকেল, ক্ষেতের বিভিন্ন ফসল নষ্ট হচ্ছে।


স্থানীয় কৃষক আসিকুল উদ্দীন, আল-আমিন ইসলাম অভিযোগ তুলে বিবার্তাকে জানান, এ সকল ইটভাটার কারণে চরম দুর্ভোগের মধ্যে বসবাস করছি। ভাটার কালো ধোঁয়ায় আশেপাশে প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ক্ষেতের বিভিন্ন ফসলের অর্ধেকেরও বেশি নষ্ট হয়ে যায়। এতে প্রতিবছর আমাদের কোটি কোটি টাকার ফসলহানি হচ্ছে। তারা আরো জানান, ভাটার মালিকরা কিছু নেতা ও প্রশাসনের লোকজনদের বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। অথচ প্রতিবছর কৃষকদের ফসলহানির ক্ষতিপূরণ তারা দিচ্ছে না।


পুঠিয়া উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সেক্রেটারি বেলাল মণ্ডল বেআইনিভাবে কাঠ পোড়ানোর কথা স্বীকার করে বিবার্তাকে বলেন, কয়লার সংকট তাই সবগুলো ভাটাতেই কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব মালিকের আছে। সরকার দুই বছরের মধ্যে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো ভাটাগুলো বন্ধ করে দিবে। তাই কারও কাগজপত্রই নবায়ন নাই।


এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ বসাক বিবার্তাকে বলেন, কাঠ পোড়ানোর বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে সব ভাটায় অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


অবৈধ ইটভাটা ও জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানোর কথা বললে রাজশাহী পরিবেশ অধিদফতরের পরিদর্শক নীল রতন সরকার বিবার্তাকে বলেন, আমরা খুব শিগগিরই এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করব। অবৈধভাবে ইটভাটা চালানোর কোনো সুযোগ নাই।


বিবার্তা/রোমেল/সউদ


সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com