কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু ১ ডিসেম্বর, উচ্ছ্বসিত কক্সবাজারবাসী
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৩, ২১:০১
কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু ১ ডিসেম্বর, উচ্ছ্বসিত কক্সবাজারবাসী
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কক্সবাজারে প্রথম বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে আগামী ১ ডিসেম্বর। এ নিয়ে উত্তেজনার শেষ নেই কক্সবাজারের মানুষের।


প্রথম দিন ঢাকা-কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে একটি করে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে। এছাড়া প্রথম সপ্তাহেই চট্টগ্রাম থেকে আরো একটি ট্রেন পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা চট্টগ্রাম-দোহাজারী লোকাল ট্রেন সার্ভিস পুনরায় চালু করা হবে।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার (১১ নভেম্বর) কক্সবাজারে নবনির্মিত রেলপথ প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে একটি করে ট্রেন চালুর নির্দেশনা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ না হলেও যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। দোহাজারী-কক্সবাজার ১০০ কিলোমিটার রেলপথ প্রকল্পটির কাজের আনুষ্ঠানিক মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের জুনে।


রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের তথ্যমতে, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত দুই জোড়া ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দুই জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে দুই জোড়া কমিউটার ট্রেন সার্ভিস চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ না হওয়ায় আপাতত ঢাকা থেকে প্রতিদিন এক জোড়া ও চট্টগ্রাম থেকে এক জোড়া ট্রেন চালানো হবে। রেক বা কোচ ও ইঞ্জিন পাওয়া সাপেক্ষে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে আরো একজোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চালানো হবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে।


ঢাকার ট্রেনটি (৮১৪) রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজারে পৌঁছবে। ফিরতি পথে বেলা ১টায় কক্সবাজার থেকে ছেড়ে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছবে। সময় লাগবে ৮ ঘণ্টা ১০ মিনিট। ট্রেনটি শুধু চট্টগ্রাম স্টেশনে ৩০ মিনিটের যাত্রাবিরতি দেবে। অন্যদিকে ৮২৪ নম্বর ট্রেন কক্সবাজার থেকে সকাল ৭টায় ছেড়ে বেলা ১০টা ৫ মিনিটে চট্টগ্রাম পৌঁছবে। সময় লাগবে ৩ ঘণ্টা ৫ মিনিট। অন্য ট্রেনটি (৮২১) সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে ১০টা ২০ মিনিটে কক্সবাজারে পৌঁছবে। সময় লাগবে ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট।


ঢাকা-কক্সবাজার রুটের প্রথম বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হবে ঢাকা থেকে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের প্রথম ট্রেনটি চলাচল করবে কক্সবাজার থেকে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের চট্টলা এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনের অবমুক্ত রেক দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের আন্তঃনগরগুলো চালানো হবে। ঢাকা রুটের ট্রেনটি চালানো হবে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানীকৃত নতুন কোচ দিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী কোচের রেক দিয়েই ঢাকা-কক্সবাজার রুটের বিরতিহীন ট্রেন চালাবে রেলওয়ে।


১০০ কিলোমিটারের নতুন রেলপথটিতে লেভেল ক্রসিং রয়েছে ৭৮টি। এসব ক্রসিংয়ে অন্তত ২৪০ জন গেটকিপার প্রয়োজন। এছাড়া তিনটি স্টেশনে (চকরিয়া, রামু ও কক্সবাজার) তিনজন করে নয়জন স্টেশন মাস্টার, ২০ জন পয়েন্টস ম্যান প্রয়োজন। ২৫ নভেম্বরের মধ্যে ২৪ জন লোকোমাস্টারের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য রেল ভবনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগ। মূলত লোকোমাস্টার সংকটের কারণে অবসরে যাওয়া লোকোমাস্টারদের কক্সবাজারে ট্রেন চালানোর জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে চাইছে রেলওয়ে।


কক্সবাজার পর্যন্ত উভয় পথে ট্রেন চালাতে পথিমধ্যে অন্তত তিনটি স্টেশনে কয়েকটি সাইডিং লাইন প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে চকরিয়ায় দুটি, রামুতে দুটি ও কক্সবাজারে তিনটি সাইডিং লাইন প্রস্তুত রয়েছে। ফলে সিগন্যালিং ব্যবস্থা পুরোপুরি সচল না হলেও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ট্রেন চালাতে পারবে রেলওয়ে। এরই মধ্যেই টিকিট বিক্রির জন্য সহজ ডটকমের মাধ্যমে রেলওয়ের ই-টিকেটিং সার্ভারে কক্সবাজার ও বিভিন্ন নতুন স্টেশনের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। রেল ভবনের নির্দেশনা পেলে অন্তত ১১ দিন আগেই কক্সবাজারের বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট বিক্রি কার্যক্রম শুরু করবে রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগ।


রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজারে ট্রেন চালাতে আমরা প্রস্তুত। প্রথম ট্রেনটি চলাচল শুরু করবে ঢাকা থেকে। দ্বিতীয় বাণিজ্যিক ট্রেনটি চলবে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম। কক্সবাজারকে ঘিরে অন্তত ছয় জোড়া ট্রেনের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হলেও শুরুতে দুই কিংবা তিন জোড়া ট্রেন চালানো হবে। পর্যায়ক্রমে বাকি ট্রেনগুলো চালানো হবে। এক্ষেত্রে ইঞ্জিন ও জনবল পাওয়া সাপেক্ষে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর কিংবা ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের আরো কয়েকটি ট্রেনের গন্তব্য স্টেশন কক্সবাজার পর্যন্ত বাড়ানো হবে।’


ঢাকা-কক্সবাজার আন্তঃনগরে কোচ থাকবে ১৮টি। আসন থাকবে দিনের বেলায় ৮২৪টি, রাতে ৭৭৯টি। অন্তত ২০ শতাংশ আসন চট্টগ্রামের যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ থাকবে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের আন্তঃনগর ট্রেনটি ষোলশহর, জালানীহাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজরা ও রামু স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিয়ে কক্সবাজারে যাত্রী পরিবহন করবে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের ট্রেনটির রেকে মোট কোচ সংখ্যা হবে ১২টি। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রীরা সকালে গিয়ে রাতেই চট্টগ্রামে ফিরতে পারবেন।


ইতোমধ্যেই ঢাকা-কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের ভাড়া চূড়ান্ত করেছে রেলওয়ে। ঢাকা থেকে শোভন চেয়ারের টিকিট ৫০০ টাকা, এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) ৯৬১ টাকা, প্রথম শ্রেণির চেয়ার ৭৭১ টাকা, প্রথম শ্রেণির বার্থ/সিট ১১৫০ টাকা এবং এসি বার্থের টিকিট ১ হাজার ৭২৫ টাকা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের টিকিট ২০৫ টাকা, প্রথম শ্রেণির চেয়ার/সিট ৩১১ টাকা, প্রথম শ্রেণির বার্থ ও এসি সিট ৪৬৬ টাকা, এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) ৩৮৬ টাকা এবং এসি বার্থ টিকিট ৬৯৬ টাকা।


বিবার্তা/ফরহাদ/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com