ডিসিরাই হচ্ছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৩, ১৯:৫৭
ডিসিরাই হচ্ছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিসিরাই হতে যাচ্ছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। কয়েকদিন আগে এক সভায় সক্ষমতা অনুযায়ী বাছাই করে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়ার দাবি তুলেছেন জেলা নির্বাচন অফিসাররা। তবে এই দাবি আর টিকলো না কমিশনে।


১৩ নভেম্বর, সোমবার ইসি থেকে একাধিক সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।


স্থানীয় সরকারের নির্বাচন ও জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন নিজস্ব কর্মকর্তা দিয়ে আয়োজন করে আসছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে ইসি এখনো প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপরই নির্ভর করছে।


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি)


যদিও ইসির ডাকা সংলাপে অংশগ্রহণ করা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনেরা জাতীয় নির্বাচনে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে সেই প্রস্তাব টিকলো না। ডিসিরাই রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পাবেন।


ইসির রোডম্যাপেও রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা যতদূর সম্ভব ইসির কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগের উল্লেখ রয়েছে।


নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় নির্বাচন বিশাল কর্মযজ্ঞ। প্রশাসনের কর্মকর্তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ অন্যদের সঙ্গে যেভাবে যোগাযোগ রেখে নির্বাচন সম্পন্ন করেন, সেই দক্ষতা ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের নেই। এজন্য এবারো রিটার্নিং কর্মকর্তা করার ক্ষেত্রে ডিসিদেরকেই প্রাধান্য দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।


গণপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, ইসি ৩০০ আসনের জন্য ৩০০ রিটার্নিং কর্মকর্তা যেমন নিয়োগ করতে পারে, তেমনি একজনকে দুই বা ততধিক আসনের জন্যও নিয়োগ করতে পারে। তবে ৩০০ আসনের জন্য ৩০০ রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের কোনো পরিকল্পনা ইসির নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।


গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, সরকার উপসচিব পদ মর্যাদার কোনো কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান রয়েছে। তবে প্রশাসনিক কর্তৃত্ব বিবেচনায় নির্বাচন কমিশন প্রশাসন ক্যাডার থেকেই প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক (ডিসি) এই দায়িত্ব পেয়ে থাকেন। অন্যান্য ক্যাডার থেকেও কখনো এই পদে নিয়োগ দেয়া হয় না।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসির এক কর্মকর্তা বলেন, সব আসনের জন্য পৃথক পৃথক রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হলে সরকারের অন্যান্য দপ্তর থেকে ডিসিদের সমমর্যাদার কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে ডিসিদের মতো কর্তৃত্ব না থাকায় নির্বাচনের মতো বিরাট জনমুখী কাজে তারা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন না।


ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদ নির্বাচনে জেলাভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। আর ডিসি জেলার প্রধান হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে তার কর্তৃত্ব বেশি মনে করে কমিশন। যে কারণে প্রতিটি সংসদের সাধারণ নির্বাচনে তারাই গুরুত্ব পান।


তাই সে আলোচনা সামনে আনছে না সংস্থাটি। রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ডিসিদের কথাই জোর দিয়ে ভাবা হচ্ছে।


এদিকে সদ্য অনুষ্ঠিত ডিসি-এসপিদের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে নির্বাচন কমিশনরাও তাই ডিসিদের সেভাবেই প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।


এই বিষয়ে এর আগে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) বেগম রাশেদা সুলতানা জানিয়েছেন, ইসি’র মাঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে হয়েছে। মিক্সড (ডিসিদের সঙ্গে তারাও) করে রিটার্নিং কর্মকর্তা হতে চান। এটা সত্যি কথা রিটার্নিং কর্মকর্তা অ্যাডমিন ক্যাডার থেকে দেওয়া হয়। ওদের দাবি সব দেওয়ার মতো অ্যাবিলিটি নেই। তবে বাছাই করে কিছু দেয়া যায়, ওরা ওইরকম কিছু চাচ্ছে। আমাদের কিছু দিলে সম্মানিত বোধ করি। তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে বসব।


১০ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত ওই কর্মসূচিতে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ডিসিদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আমাদের ফাইনাল চাওয়া, মূল চাওয়াটা হলো, ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাধীনতা যেন ব্যাহত না হয়। ভোটাররা ভোট যেন দিতে পারেন, এটি আমরা দেখতে চাচ্ছি। জেলা প্রশাসক যদি রিটার্নিং অফিসার হন, ভোটকেন্দ্রের ভেতরে যাবেন, ঘুরবেন। কিন্তু বাইরে থেকেও এটি পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করুন সবাই- ভেতরে শৃঙ্খলা সংরক্ষিত হচ্ছে কিনা।


সিইসি আরও বলেন, বিশেষ করে মূল কর্মকর্তা হলো পুলিশ সুপার ও ডিসি। তারা কিন্তু নির্বাচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, তাদের মধ্যে যেন সমন্বয় থাকে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি ক্ষমতা প্রয়োগের প্রয়োজন হয় তখন ক্ষমতা ও শক্তি দেখাবেন।


ওদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়নি ইসি। এছাড়া প্রশাসন ছাড়া সরকারের অন্য বিভাগের কোন কর্মকর্তাদেরও রিটার্নিং কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয়া হয়নি। তবে এটিএম শামসুল হুদার কমিশন প্রথমবারের মতো সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসির নিজস্ব উপ-সচিব মর্যাদার কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়। এরপর থেকে সংসদের বিভিন্ন উপনির্বাচনেও নিজস্ব কর্মকর্তাদের পদটিতে নিয়োগ দিচ্ছে ইসি। তাই সংস্থাটির কর্মকর্তারা এবার সীমিত পরিসরে হলেও দায়িত্বটি চান। তবে এই দাবি কেবল কর্মকর্তাদের নয়, বিভিন্ন দলের সঙ্গে সুধীজনরাও ইসির সঙ্গে সংলাপে বসে জানিয়েছেন।


সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটিএম শামসুল হুদা কমিশন নির্বাচন সরকারের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদেরকে রিটার্নিং কর্মকর্তা করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেই উদ্যোগ আর এগোয়নি। গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে ডিসিদেরকেই রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয়। সেই নির্বাচনও আমরা দেখেছি। মধ্যরাতে ভোট হয়েছে।


তিনি বলেন, প্রশাসন দলীয়করণের শিকার হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে এটাই বড় বাধা।


এ বিষয়ে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) সভাপতি নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদেরকে রিটার্নিং কর্মকর্তা করার প্রথম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন এটিএম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। নিজস্ব কর্মকর্তাদেরকে মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব দিলে এটি নির্বাচন কমিশনেরই লাভ। কারণ, দায়িত্ব না দিলে কর্মকর্তারা দায়িত্ববান কিনা বোঝা যায় না। তবে সক্ষমতার একটি ব্যাপার আছে। তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কিনা।


প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন আয়োজিত সংলাপেও বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়ার সুপারিশ আসে। এমনকি সাবেক নির্বাচন কমিশনারও এই পরামর্শ দেন।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com