‘আমার এলাকায় নারীরা দিনে তিনবার লিপস্টিক লাগাচ্ছে, চারবার স্যান্ডেল বদলাচ্ছে’
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:৩৮
‘আমার এলাকায় নারীরা দিনে তিনবার লিপস্টিক লাগাচ্ছে, চারবার স্যান্ডেল বদলাচ্ছে’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

নিজের নির্বাচনী এলাকার মানুষ কোন কষ্টে নেই বলে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমার এলাকা আলুভিত্তিক, কৃষিভিত্তিক। তাদের কোন কষ্ট নেই। সেখানকার নারীরা দিনে তিনবার করে লিপস্টিক লাগাচ্ছে। চারবার করে স্যান্ডেল বদলাচ্ছে। আমি খুব ভালো জানি আমার কোন সমস্যা নেই।


৮ নভেম্বর, বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি মনিটরিং ও রিভিউ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।


বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আজ থেকে ২০ বছর আগে আমার এলাকায় ১০টা মোটরসাইকেল ছিল। তখন আমি প্রথম নির্বাচন করি। আজ সেখানে হাজার হাজার মোটরসাইকেল।


পণ্য আমদানির সিদ্ধান্ত কেন আগেই নেয়া হলো না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আলু ও ডিম ছাড়াও সারা বছর বাজারে অস্বস্তি থাকা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, সরবরাহ যদি ভালো থাকে, তাহলে সমস্যা হয় না। আবার আলু যদি অতিরিক্ত থেকে যায়, তখন প্রশ্ন করা হয়, কৃষকরা আলুর দাম পাচ্ছেন না। আপনি কী ব্যবস্থা করেছেন? দুই ভাবেই সমস্যা। উৎপাদন যাতে বাড়ে, সেই প্রচার করেন।


সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে মানুষের জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে কোনো সুখবর আছে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, একটি বিষয় হলো আমাদের দেশের উৎপাদন, আরেকটি হলো আমদানি করা। বিভিন্ন জিনিসের বিভিন্ন রকম অবস্থা। পেঁয়াজের দাম কবে কমবে? এটি আমরা সবাই বুঝি যে, কৃষক যখন ফসলে ঘরে তুলবে, তখন নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠবে। হয়তো আগামী মাসে মুড়িকাটা পেঁয়াজটা বাজারে উঠবে, তখন হয় তো পেঁয়াজের দাম কমবে।


বাজারে আলু আসার বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আবার আলু যেমন ডিসেম্বরের শেষের দিকে বাজারে উঠতে শুরু করবে, তখন দাম কমবে। এখন এটি গেল নিজেদের উৎপাদনের বিষয়ে। আবার যখন আমরা তেল ও চিনির কথা বলি, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে কী দাম আছে, সেটির ওপর নির্ভর করে। প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, দাম বাড়বে বা কমবে। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে, আমাদের যা প্রয়োজন, তার চেয়ে ২০ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে। এটি আমরা আমাদানি করে পূরণ করি, যার ৯০ শতাংশই আসে ভারত থেকে। সেখানেও দাম বেড়ে গেছে।


তিনি আরও বলেন, আলুর বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, একইভাবে আমাদের কাছে যা আলু আছে, তা মূলত কোল্ড স্টোরেজে। প্রয়োজন অনুসারে ভীষণ টাইট অবস্থা। আশা করি, ডিসেম্বরের শেষ দিকে আলু উঠতে শুরু করবে। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে একটি আগাম আলু আসে উত্তরাঞ্চল থেকে, সেটি এলে দাম কিছুটা কমবে। আমদানিও শুরু হয়েছে, বাজারে সেটার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।


ভালোভাবে আমদানি হলে দাম কিছুটা কমে আসবে- এ আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাজারে দেশীয় পণ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সবজির দাম বাড়ছে কখনো। এছাড়া, বৃষ্টি, পরিবহন ও পথে পথে চাঁদাবাজির কারণে দাম বাড়ছে। তবে গত দু-তিনদিন ধরে ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা করে সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। তাছাড়া আগামী ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে শীতের সবজির দাম কমে যাবে।


বাজারে দাম না নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে তিনি বলেন, যখন মুদ্রাস্ফীতি হয়, তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। দামের ওপর মূল্যস্ফীতি একটা বড় প্রভাব বিস্তার করে। এখন প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশের ওপরে মূল্যস্ফীতি রয়েছে। সেটি সমাধান করতে না পারলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিংবা অন্য কেউ খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। তবে পেঁয়াজ-আলু আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কমে পাওয়া শুরু হবে। কারণ নিজেদের উৎপাদনটা তখন চলে আসবে।


আপনাদের তো এলাকায় গিয়ে ভোট চাইতে হবে, ভোটররা যদি দ্রব্যমূল্য নিয়ে আপনাকে প্রশ্ন করে- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ধরেন, আমার এলাকা, আমার এলাকার মানুষের কষ্ট নেই। কারণ তারা আলুর দাম পাচ্ছে। আমাদের তো কৃষিভিত্তিক এলাকা। একেকটা এলাকা একেক রকম। ঢাকা শহরে যে নির্বাচন করবে, তার অনেক সমস্যা।


গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে অসন্তোষ প্রসঙ্গে টিপু মুনশি বলেন, দেখুন, একশ ভাগ শান্তি ঠিক করা যায় না। কেউ খুশি হবেন, কেউ অখুশি হবেন। যারা খুশি না, তারা যদি ২০ হাজার টাকা বেতন পেতেন, তাহলে খুশি হতেন। আমাদের একটি জায়গায় আসতে হবে, যেখানে দুপক্ষেরই রক্ষা হয়। ১০০ ভাগ সন্তুষ্ট করা যায় না।


মন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন, সাড়ে ১২ হাজার টাকা বেতনের সঙ্গে দিনে যদি দুই ঘণ্টা ওভার টাইম করে, একটা হাজিরা বোনাস পায় তারা, কাজেই যার বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা, সে কিন্তু ষোলো থেকে সতেরো হাজার টাকা তুলবে। এই কথাটা সাধারণভাবে জানা যায় না। এরপরও প্রত্যেককে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে, তাতে মাসে অন্তত ৫০০ টাকা সাশ্রয় হবে।


বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যেটা দেয়া হয়েছে, সেটা ভালো দাবি করে বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, তারপরেও কিছু বাদ থেকে যায়। আমার মনে হয়, অধিকাংশ মানুষই সেটা মেনে নেবেন।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com