দোষীকে দোষী বলার ক্ষমতাও নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে সরকার : টিআইবি
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:৩৯
দোষীকে দোষী বলার ক্ষমতাও নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে সরকার : টিআইবি
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

দায়িত্ব পালনের মাঝপথে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানকে অপসারণের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ‘জনস্বার্থে’ তার নিয়োগ চুক্তি বাতিল প্রসঙ্গে টিআইবির প্রশ্ন, তাহলে কি প্রভাবশালীদের স্বার্থরক্ষাকে এখন জনস্বার্থ বিবেচনা করা হচ্ছে?


২০ অক্টোবর, শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংস্থাটি দাবি করে, এই পদক্ষেপ নদী রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এমনকি সরকার দোষীকে দোষী বলার ক্ষমতাকেও নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে, এমন আশঙ্কাই জোরদার হলো কমিশনের চেয়ারম্যানের নিয়োগ বাতিল করার মধ্য দিয়ে।


বিবৃতিতে বলা হয়, কমিশনের চেয়ারম্যানকে অপসারণের ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকলেও এই ক্ষমতা এমনভাবে ব্যবহার করে সরকার কী বার্তা দিতে চাইছে, সেটাই উদ্বেগের কারণ বলে মনে করে টিআইবি।


সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হলেও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে কার্যত অকার্যকর করে রাখা হয়েছে আইন দিয়েই। কমিশন কেবল সরকারকে পরামর্শ দিতে পারে। দখলদার আর দূষণকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই।


তিনি বলেন, কমিশনের প্রতিবেদন বা পরামর্শ মানার বাধ্যবাধকতাও নেই। অথচ এই ভূখণ্ডের চরিত্র, দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই কমিশনকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই।


এতসব ‘নেই’- এর মধ্যে সম্প্রতি দেশবাসী কিছুটা আশাবাদী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল সদ্য সাবেক চেয়ারম্যানের সাহসী অবস্থানের কারণে বলে মনে করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।


তিনি আরও বলেন, নদী কারা দখল করছে, ধ্বংস করছে, দূষণ করছে- সেটা অন্তত আমরা জানতে পারছিলাম। একটা জনমত তৈরি হওয়ার আবহ দেখা যাচ্ছিল, বেগবান হচ্ছিল নদী রক্ষার আন্দোলন।


দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর থাকা একটি সংস্থার প্রধান যখন সুস্পষ্টভাবে দোষীদের চিহ্নিত করেন, তখন আশাবাদী হতেই হয় জানিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশের মানুষ নতুন করে আশা করেছিল, সরকার কমিশন চেয়ারম্যানের সুস্পষ্ট অভিযোগগুলো আমলে নেবে। তদন্ত হবে, দোষীরা জবাবদিহির আওতায় আসবে। বাস্তবে সেটা তো হলোই না; বরং সরে যেতে হলো কমিশন প্রধানকেই। সরকার দোষীকে দোষী বলার ক্ষমতাকেও নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে, এমন আশঙ্কাই জোরদার হলো কমিশনের চেয়ারম্যানের নিয়োগ বাতিল করার মধ্য দিয়ে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখলাম, ‘জনস্বার্থে’ তার নিয়োগ চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। তাহলে কি প্রভাবশালীদের স্বার্থরক্ষাকে এখন জনস্বার্থ বিবেচনা করা হচ্ছে?


এই সময়ে এই বার্তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী বলে মন্তব্য করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিশ্বের দেশে দেশে এখন নদীকে ‘জীবন্ত-সত্তা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। আমাদের উচ্চ আদালতের রায়েও তার স্বীকৃতি আছে। অথচ আমাদের উল্টো পথে হাঁটা থামেনি। এখন আমরা শুধু নদী হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছি না; বরং তাদের যেন দুর্নাম না হয়, কেউ যেন তাদের দিকে আঙ্গুল না তোলে, সেই ব্যবস্থা করছি। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, সরকারপ্রধান বারবার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গীকার করে এসেছেন, তা কেবল রাজনৈতিক বক্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই যেন তারা এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেন। যারা নদী দখল করছে, অবৈধভাবে বালু তুলে স্থাপনা তৈরি করে নদী হত্যা করছে, যারা দূষণ করছে, তাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট যে অভিযোগ উঠেছে, তার তদন্ত করুন, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন। প্রভাবশালী পদধারীদের সুরক্ষা দেওয়া নয়, দেশ ও দশের স্বার্থরক্ষা করাই আপনাদের দায়িত্ব।


বিবার্তা/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com