ভিসা নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য কারণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ব্যাখ্যা
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:৩৩
ভিসা নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য কারণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ব্যাখ্যা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস নিজস্ব ফেসবুক পেজে ভিসানীতি নিয়ে ফের ব্যাখ্যা দিয়েছে।


২৫ সেপ্টেম্বর, সোমবার রাষ্ট্রদূত হাসকে উদ্ধৃত করে এ ব্যাখ্যা দেয় প্রতিষ্ঠানটি।


ব্যাখ্যায় বলা হয়, আমরা ‌(ভিসা নিষেধাজ্ঞা) নীতিটি সরকারপন্থী, বিরোধী দল, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, বিচার বিভাগের সদস্য এমনকি গণমাধ্যমের সদস্য নির্বিশেষে যে কারো বিরুদ্ধে ভারসাম্যপূর্ণ উপায়ে প্রয়োগ করছি যারা দেশটির গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করায় জড়িত।’


গতকাল রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) একটি বেসরকারি চ্যানেলের কার্যালয়ে সাক্ষাৎকারের সময় ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, সরকারি দল, বিরোধী দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর আগামীতে গণমাধ্যমও ভিসানীতিতে যুক্ত হবে। নেতিবাচক ভূমিকা ও আচরণের কারণে বাংলাদেশের যে কেউ মার্কিন ভিসানীতির শিকার হতে পারে। অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা কেমন তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।


এর পরেই ভিসানীতির বিষয়টি ফের আলোচনায় ওঠে আসে। একদিন পর পিটার হাসের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেয় দূতাবাস।


সাংবাদিকরাও ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসতে পারেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এমন যে কারও ক্ষেত্রে ভিসা নিষেধাজ্ঞা নীতি প্রয়োগ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো।


জনগণকে তাদের সংগঠনের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দিতে সহিংসতার আশ্রয় নেয়া, পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বা তাদের মতামত প্রকাশ করতে বাধা দেয়াও এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।


সামগ্রিক বিষয়টির ব্যাখ্যায় দূতাবাসের মুখপাত্র বলেন, কারও ওপর ভিসা বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হবে কি না তা সে বিষয়টি নির্ভর করবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্নকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি ঘটনার বিস্তৃত ও পুঙ্খানুপঙ্খু পর্যালোচনার ওপর। কাজটি করবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর।


যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় থাকা বাংলাদেশিদের নাম বা সংখ্যা তারা প্রকাশ করবে না।


দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার এর আগেও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসাসংক্রান্ত তথ্যগুলো গোপনীয়।


ব্রায়ান শিলার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই নীতি ঘোষণা করার পর থেকে ঘটনাগুলো খুব ভালোভাবে পর্যালোচনা করেছে। প্রমাণগুলো যত্ন সহকারে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনীতিকদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।


চলতি বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যকে সমর্থন করতে অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ধারা ২১২ (এ) (৩) (সি) (‘থ্রিসি’)-এর অধীনে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেন।


এই নীতির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা সম্পৃক্ত বলে মনে করা যেকোনো বাংলাদেশির জন্য ভিসা প্রদান সীমিত করবে।


যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরের ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়।


যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট শুক্রবার জানায়, তারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা সম্পৃক্ত বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নিচ্ছে।


স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করতেই এ পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি যারা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করতে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন এটি।


এই তালিকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দল রয়েছে।


মিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়।


ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন।


যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের তথ্য অনুসারে, ভবিষ্যতে যারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকবে তারাও এই নীতির অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে।


মিলার বলেন, এর মধ্যে বর্তমান ও প্রাক্তন বাংলাদেশি কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com