ফগিংয়ের কার্যকারিতা নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থানে দুই সিটি
প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৩, ০১:২০
ফগিংয়ের কার্যকারিতা নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থানে দুই সিটি
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকা শহরের দুই মহাশত্রুর নাম এডিস ও কিউলেক্স। দুই প্রজাতির মশা নিধনে সারা বছরই ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’, ‘চিরুনি অভিযান’, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা’, ‘জেল-জরিমানা’ করছে সিটি করপোরেশন। প্রতিদিনই দেয়া হচ্ছে ধোঁয়া, ছিটানো হচ্ছে ওষুধ। এরপরও কাজের কাজ হচ্ছে না তেমন। মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সিটি করপোরেশনে দু-এক বছর পরপরই মহামারি আকারে দেখা দিচ্ছে ডেঙ্গু।


এভাবে মশকনিধন কার্যক্রম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন তুলছিলেন বিশেষজ্ঞরা। যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা মশা মারতে সিটি করপোরেশনের ফগিং পদ্ধতি কতটা কাজে আসছে।


তাদের অভিযোগ, অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, কর্মপরিকল্পনা না থাকাসহ নানান কারণে মশা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না সিটি করপোরেশন। বিশেষ করে প্রতিদিন বিকেলে ধোঁয়া দিয়ে বা ফগিং করে মশা তাড়ানোর পদ্ধতি ছিল ভুল। এতদিন এ অভিযোগে তেমন পাত্তা না দিলেও এবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) স্বীকার করেছে, এ পদ্ধতি ভুল ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি সফর করে এসে সে বোধ জন্মেছে ডিএনসিসি মেয়রের।


ঢাকা দক্ষিণ সিটির দাবি, ভালো কাজ হচ্ছে ফগিংয়ে। এক এলাকায় ৭ দিনে ১০ জনের বেশি রোগী থাকবে না, এমন টার্গেট নিয়ে চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে দক্ষিণ।


এর ঠিক উল্টো অবস্থানে ঢাকা উত্তর সিটি। তাদের দাবি, ফগিং পুরনো পন্থা। এটি আর আগের মতো কাজ করছে না। তাই কাউন্সিলরদের আহ্বায়ক করে তিন স্তরের টাস্কফোর্স করেছে উত্তর সিটি। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এতো বছরের পুরনো কীটনাশকে উল্টো বেড়েছে মশার প্রতিরোধ সক্ষমতা। রেজিসটেন্স গবেষণা করে তা বদলানো দরকার। অন্যথায় শুধু ওষুধই ছিটানো হবে, মশা আর মরবে না।


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটত্ত্ববিদ ড. আবু ফয়েজ মো. আসলাম জানালেন, ফগিংয়ের কার্যকারিতা এখন কতটুকু। তিনি বলেন, আমাদের লোকালি কতটুকু রেজিসটেন্স হচ্ছে? ঢাকায় যেটার রেজিসটেন্স হচ্ছে অন্য জায়গায় সেটার রেজিসটেন্স নাও হতে পারে। তার মানে, পুরো এলাকায় কোন ইন্সেকটিসাইডে কতটুকু রেজিসটেন্স হচ্ছে সেটার জানার পর যেগুলোতে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না সেগুলো বাদ দিয়ে বিকল্প খুঁজতে হবে।


তার পরামর্শ, গবেষণা হতে হবে কীটনাশকের রেজিসটেন্স নিয়ে। কাজ হতে হবে সমন্বিত উপায়ে। ড. আবু ফয়েজ মো. আসলাম বলেন, এই দ্বৈততা পরিহার করে আমার মনে হয়, একটি কম্বাইন্ড অ্যাপ্রোচে যাওয়া উচিত। এখন যেহেতু ডেঙ্গু পুরো দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে, এখন তো আমাকে হোলিস্টিক অ্যাপ্রোচে কাজ করতে হবে; যাতে আর একটা মানুষও মারা না যায়।


এ বছর ডেঙ্গু ছাড়িয়েছে আগের ২৩ বছরের রেকর্ড। আগস্টেই ভাইরাসটির এমন ভয়াবহতা আগে দেখেনি দেশ। কীটতত্ত্ববিদ ড. আফরোজা সুলতানা জানিয়েছেন, থেমে থেমে বৃষ্টি যতদিন হবে ততদিনই ভয়ের। এই কীটত্ত্ববিদ বলেন, বৃষ্টিপাত যদি এভাবে থেমে থেমে হতে থাকে তাহলে আসলেই কিন্তু পরিত্রাণের কোনো উপায় নাই নভেম্বর পর্যন্ত। এডিসের ডিমগুলো ১-২ বছর পর্যন্ত প্রকৃতিতে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। যখনই সে পানি পাবে, লার্ভা অ্যাডাল্ট হলে আবার সংক্রমণের হারটাও একইরকম হবে।


ডক্টর আফরোজার পরামর্শ, মশা নিধনের কাজ চলতে হবে সারাবছর, এমনকি শীতেও। তিনি বলেন, এই দুর্ভোগ, এই পরিস্থিতি যেন আগামী বছর দেখতে না হয় সে জন্য শীতের সময় থেকেই কাজ শুরু করতে হবে, একদম বছরের শুরু থেকেই।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com