রোহিঙ্গা সংকট: আট মাসে মিলেছে চাহিদার ২৯ শতাংশ তহবিল
প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৩, ০০:৪৯
রোহিঙ্গা সংকট: আট মাসে মিলেছে চাহিদার ২৯ শতাংশ তহবিল
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের জন্য চলতি বছর দাতাদেশ ও সংস্থাগুলো ৮৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার অনুদান দেবে বলেছিল। বছরের প্রায় আট মাস চলে গেলেও প্রতিশ্রুত অনুদানের মাত্র ২৯ শতাংশ মিলেছে। এটি দাতাদের মোট প্রতিশ্রুতির মাত্র এক-তৃতীয়াংশ।


ডিসেম্বরে জেনেভাতে আসন্ন গ্লোবাল রিফিউজি ফোরামে রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিতে অংশীদারদের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।


বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছর রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশিসহ প্রায় ১৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষকে সহায়তা করতে মানবিক সংস্থাগুলো ৮৭ কোটি ৬০ লাখ ডলারের আবেদন করেছিল। আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত যৌথ কর্মপরিকল্পনা বা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের প্রয়োজনীয় তহবিলের মাত্র ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ বা প্রায় ২৫ কোটি ডলার পাওয়া গেছে। এটি একটি বৃহত্তর মানবিক সংকটে আর্থিক সহায়তার হতাশাজনক চিত্র তুলে ধরে।


বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরের মানবিক পরিস্থিতি যখন খারাপ হচ্ছে, তখন এই দীর্ঘায়িত সংকটকে ঘিরে চ্যালেঞ্জগুলো ক্রমেই বাড়ছে। তহবিলের তীব্র স্বল্পতার কারণে মানবিক সংস্থাগুলো শুধু অতি গুরুত্বপূর্ণ ও জীবন রক্ষাকারী চাহিদা মেটানোর ওপর নজর দিতে বাধ্য হচ্ছে। প্রথমবারের মতো শরণার্থীদের খাদ্য সহায়তার ওপর এটি প্রভাব ফেলেছে। ফলে ক্রমবর্ধমান অপুষ্টি, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া, বাল্যবিয়ে, শিশুশ্রম এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার মতো করুণ পরিণতির উদ্ভব ঘটছে।


এই সংকটের প্রাথমিক সমাধান মিয়ানমারে একটি মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসন। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আমাদের সব সময়ই বলে, নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি হলেই তারা মিয়ানমারে যেতে প্রস্তুত। এটি সম্পন্ন করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নতুন করে প্রচেষ্টা নিতে হবে। সবার সম্মিলিত লক্ষ্য হওয়া উচিত– মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিজ গ্রামে অথবা পছন্দের জায়গায় স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন। পাশাপাশি সেখানে তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা, নিবন্ধন, নাগরিকত্বের সুষ্ঠু পরিকল্পনা, পরিষেবা ও আয়মূলক কাজের সুযোগ নিশ্চিত করা। যেন তারা নতুন করে জীবন গড়তে পারে।


ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, কারিগরি প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সক্ষমতা বাড়ার সুযোগ তৈরিতে সাহায্যের আবেদন জানায়। এটি শুধু তাদের প্রত্যাবাসনের জন্যই তৈরি করবে না; বরং বাংলাদেশে তাদের শরণার্থী জীবনে নিশ্চিত করবে মর্যাদা, নিরাপত্তা ও উৎপাদনশীলতা। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের কিছু চাহিদা নিজেরাই মেটাতে সক্ষম হবে। কারণ, শরণার্থীরা ক্রমহ্রাসমান মানবিক সহায়তার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে থাকতে পারে না, আর তারা সেটা চায়ও না। এই সংকটের প্রাথমিক সমাধান মিয়ানমারে একটি মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসন।


ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আমাদের সবসময়ই বলে যে নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি হলেই তারা মিয়ানমারে যেতে প্রস্তুত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এটি সম্ভব করার জন্য নতুন করে প্রচেষ্টা নিতে হবে। যেহেতু জাতিসংঘ টেকসই প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে; তাই ইউএনএইচসিআর ও এর অংশীদারদের প্রয়োজন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরবচ্ছিন্ন, অর্থবহ ও অনুমানযোগ্য প্রবেশাধিকার, যেন সেখানে প্রত্যাবাসনে সহায়তা ও পর্যবেক্ষণ করা যায়।


ইউএনএইচসিআর আরও জানায়, প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ দৃঢ় মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। তাই এর বিনিময়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগণের কল্যাণে নিয়মিত আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে এবং এই দায়িত্বের ভাগ নিতে হবে।


বিবার্তা/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com