২১ আগস্টের স্প্লিন্টার শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন যে নেতারা
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৩২
২১ আগস্টের স্প্লিন্টার  শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন যে নেতারা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়। হামলায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।


কিন্তু গ্রেনেডের আঘাতে নিহত হন দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন। আহত হন আরো প্রায় ৫ শতাধিক। যাদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান।


২০০৪ সালের ২১ আগস্টের রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া আহতদের অনেকে শরীরে রয়ে গেছে স্প্লিন্টার। দীর্ঘ ১৯ বছর শরীরে স্প্লিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁরা।


শরীরে তীব্র যন্ত্রণার সঙ্গে সেই ভয়ানক স্মৃতি এখনো দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে তাদের।


সেদিন প্রাণে বেঁচে যাওয়া আহতদের একজন রফিকুল ইসলাম। তাঁর বাড়ি ভোলার বোরহান উদ্দিন উপজেলায়।


যে ট্রাকের ওপর মঞ্চ বানিয়ে সমাবেশ হয়েছিল, রফিকুল ছিলেন সেই ট্রাকেরই চালক।


গ্রেনেড হামলার সময় তিনি ট্রাকের ভেতরে চালকের আসনেই ছিলেন। গুরুতর আহত হলেও সৌভাগ্যক্রমে সেদিন প্রাণে বেঁচে যান রফিকুল। তার শরীরে ঢুকেছিল ১১টি স্প্লিন্টার।


পরবর্তীতে ১০টি স্প্লিন্টার অপারেশন করে বের করা হলেও তার কোমরে এখনো একটি স্প্লিন্টার রয়ে গেছে। আর সেই স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা নিয়ে পার করেছেন ১৯টি বছর।


রফিকুল গণমাধ্যমকে বলেন, কোমরে একটি স্প্লিন্টার রয়ে গেছে। এটি নিয়েই হয়ত কবরে যেতে হবে। এখনো অমাবস্যা-পূর্ণিমায় কোমরে ভয়াবহ ব্যথা হয়। সেদিন গ্রেনেডের স্প্লিন্টার হাত, মুখ, কোমরে ঢুকেছিল। তখন তিনটা আঙুল ছিঁড়ে গিয়েছিল।


তিনি বলেন, ওই সময়ের পরিস্থিতিটা ছিল কেয়ামতের মতো! বাঁচানোর মালিক স্বয়ং আল্লাহ। যেভাবে বোম পড়েছে, আর যে অবস্থায় শেখ হাসিনা ছিলেন, তাকে হয়ত আল্লাহ পাকে বাঁচাইছে। নইলে বাঁচার কথা ছিল না।


একইভাবে ১৯ বছর ধরে শরীরে স্প্লিন্টার নিয়ে চলছেন নাজিম উদ্দিন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, শরীরে থাকা স্প্লিন্টারে এখনো মাঝে মাঝে যন্ত্রণা হয়। আর এই যন্ত্রণা নিয়েই বেঁচে আছি।


তিনি জানান, শীতকালে সবচেয়ে বেশী কষ্ট হয়। শীত এলে হাত-পা অবশ হয়ে যায়। আর গরম এলে বাড়ে চুলকানি, অনেক সময় রক্ত বের হয়। তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরে ভারতে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।


আহতদের মধ্যে একজন রাশিদা আক্তার রুমা। শরীরে অসংখ্য স্প্লিন্টার সঙ্গে নিয়ে বছরের পর বছর ক্র্যাচে ভর দিয়ে চলছেন তিনি। জীবনটা বদলে গেছে রাশিদার। আগের মত আর শক্তি পান না। ক্র্যাচে ভর করেই চলতে হয়। বাকী জীবনটা হয়তো এভাবেই চলতে হবে।


রফিকুল, নাজিম উদ্দিন, রাশেদার মতো আরও অনেকের জীবনের সঙ্গী এখন স্প্লিন্টার। যতদিন বেঁচে থাকবেন স্প্লিন্টার নিয়েই বাঁচতে হবে তাদের।


ভয়ানক স্মৃতির সঙ্গে শরীরে থাকা স্প্লিন্টারের তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছেন তাঁরা। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িত দের শাস্তি কার্যকরের দাবি জানান তারা।


সেদিন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা, আওয়ামী লীগ সভাপতি, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। তবে আহত হন তিনি।


শেখ হাসিনা ছাড়াও সেদিন আহত হয়েছিলেন আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ হানিফ, সম্প্রতি প্রয়াত অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, এ এফ এম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ অনেকে।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com