কূটনৈতিকদের অতি তৎপরতায় কৌশলী আওয়ামী লীগ
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৩, ২২:৫২
কূটনৈতিকদের অতি তৎপরতায় কৌশলী আওয়ামী লীগ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

চলতি বছরের শেষ সপ্তাহে অথবা আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ততই বাড়ছে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনৈতিক তৎপরতা। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশি শক্তির এমন অতি তৎপরতাকে ভালো চোখে দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের আর মাত্র পাঁচ মাস বাকি থাকায় কূটনৈতিকদের অতি তৎপরতায় কৌশলে পা ফেলছে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দলটি।


২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেই সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রেও গিয়েছিল আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। এরপর ২০২২ সালের শেষ দিকে সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোর তৎপরতা শুরু করে। যা চলতি বছরে আরো জোরাল হয়ে উঠেছে। নির্বাচনের আগে কূটনীতিক পাড়ার এমন তৎপরতা আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা।


জানা গেছে, এসব কূটনীতিকরা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য সরকারকে তাগাদা দিচ্ছেন। এদিকে সরকার প্রধান শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সভা, সমাবেশে অংশ নিয়ে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সরকার বদ্ধপরিকর এমন বার্তা দিচ্ছেন।


জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বিবার্তাকে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল এসেছেন। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে তারা প্রতিনিধি দল পাঠাবেন কিনা সেটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে এসেছেন। আমরা তাদের স্বাগত জানাই।


তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মত আমাদের দেশেও সংবিধান অনুযায়ী হবে। দেশের গণতন্ত্র নিয়ে কারো অপপ্রচারে আমাদের বন্ধুরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা বিভ্রান্ত হবেন না। আমাদের উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো চায় নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুবার বলেছেন আগামী নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। এ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আমরা বদ্ধপরিকর।


জানা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকদের তৎপরতা ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দেয়া বিভিন্ন বিবৃতিতে সরকার অনেকটাই ক্ষুব্ধ। এমনকি তাদের এমন কূটনৈতিক তৎপরতাকে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলেও মনে করছেন তারা। নির্বাচনের আর বেশিদিন বাকি না থাকায় হিসেব করে পা ফেলতে চাইছে ক্ষমতাসীন দলটি। আর তাই সবমিলিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কূটনীতিকদের অতি তৎপরতায় বেশ সাবধানতা অবলম্বন করছে আওয়ামী লীগ।


আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন নিয়ে যাতে বিদেশিদের মনে কোন ধরনের শঙ্কা কাজ না করে সেজন্য কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। আর এ জন্য গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এসব বৈঠকে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের অবস্থান তুলে ধরছেন তারা। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগের অবস্থান স্পষ্ট করার চেষ্টা করেন দলটির নেতারা। এছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথাও তুলে ধরেছেন তারা।


গত বছরের শেষ দিক থেকে প্রায় প্রতি মাসে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সাথে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। সেই দলে ছিলেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ। তিনি বিবার্তাকে বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রায় আমাদের বিদেশি বন্ধুদেরও প্রয়োজন আছে। পশ্চিমা বিশ্বও আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে তাদের সাথেও আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে।


এদিকে গত ২৪ মে নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেকটা হঠাৎ করেই বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেই ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচনে কারচুপি, ভীতি প্রদর্শন এবং নাগরিক ও গণমাধ্যমের বাকস্বাধীনতায় যারা বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হতে পারে।


যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে সেটির সাথে যুক্ত ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। চলতি মাসে তিনি বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়াসহ বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। এসময় তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠকও করেছেন।


এছাড়া ঈদুল আজহার ছুটির পরপরই ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছেন। এরপর আমেরিকা ও ইউরোপের ১২টি দেশের কূটনীতিকরা আলাদা বৈঠক করেছেন। আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে গত ৯ জুলাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৬ সদস্যের নির্বাচনী অনুসন্ধানী মিশন ২ সপ্তাহের সফরে ঢাকায় আসেন। আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত ইইউ প্রতিনিধি দলটি সরকার, রাজনৈতিক দলগুলো, নির্বাচন কমিশন, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন।


এর আগে গত জুন মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৬ জন সদস্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধানের কাছে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেন। এরপর সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এ ঘটনার নিন্দা জানান।


নির্বাচনের আগে কূটনীতিকদের তৎপরতার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বিবার্তাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে বাংলাদেশ। বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালিয়ে বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমরা তাদের সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছি।


তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। আর সেই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে আওয়ামী লীগ সরকার বদ্ধপরিকর।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com