কোকেনের নতুন বাজার এশিয়া, ট্রানজিট রুট বাংলাদেশ
প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২৩, ১০:৫১
কোকেনের নতুন বাজার এশিয়া, ট্রানজিট রুট বাংলাদেশ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে আটক করা হয়েছে কোকেনের বড় বড় চালান। প্রতিটি চালান বাংলাদেশ হয়ে অন্য দেশে যাচ্ছিল। চলতি মাসের শুরুতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় দুই কেজি কোকেনসহ এক ভারতীয় নারীকে আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। কোকেনের গন্তব্য ছিল নয়াদিল্লি।


গত বছরের শেষের দিকে, ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিএনসি) কাতার বিশ্বকাপের সময় কোকেনের একটি বড় চালান জব্দ করেছিল। রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে জব্দ করা আড়াইশ গ্রাম ওই কোকেনের চালানের গন্তব্য ছিল কাতার। ফুটবল বিশ্বকাপে আসা ইউরোপ ও আমেরিকার দর্শকদের কাছে বিক্রির জন্য নেওয়া হচ্ছিল ওই কোকেন।


বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং ব্যয়বহুল মাদকের একটি কোকেন। লাতিন আমেরিকার দেশগুলো থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোকেন পাচার হয়।
মনে করা হয় বিশ্বজুড়ে কোকেন পাচারকারীরা অত্যন্ত সংগঠিত। তাই কোকেনের চালান দেশে প্রবেশ শুরু হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর উদ্বিগ্ন। বিষয়টি নিয়ে তারা ব্যাপক তদন্ত শুরু করেছে।


আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, গত বছর আটক দুটি চালান রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে এবং সর্বশেষ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। অর্থাৎ কোকেন বিক্রির জন্য বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করা হচ্ছিল। তাই কোকেনের রুট হিসেবে বাংলাদেশে ব্যবহারে কারা জড়িত তা নিয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ। বাংলাদেশে কোকেনের কোনো বাজার আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হয়।


দীর্ঘদিন ধরেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে বাংলাদেশকে কোকেনের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তা সফল হচ্ছে না। বিভিন্ন কারণে এটিকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সরকারিভাবে বলা যাচ্ছে না। কিন্তু সম্প্রতি দেখা গেছে শুধু কোকেনের রুট হিসেবে নয়, একটি দেশি ও আন্তর্জাতিক গ্যাং বাংলাদেশে কোকেনের বাজার তৈরির চেষ্টা করছে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, আপাতত স্বস্তির বিষয় হলো দেশে ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল, আইস ও এলএসডির মতো মাদকের চাহিদা থাকলেও কোকেনের কোনো বাজার নেই। তবে উদ্বেগের কারণ হচ্ছে, এ ধরনের চালান আসতে থাকলে দেশীয় বাজারে কোকেনের চাহিদা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


চলতি মাসের ৯ তারিখে শাহজালাল বিমানবন্দরে ২ কেজি কোকেনসহ যে নারীকে আটক করা হয় তার নাম সালোমে লাল রামধারী। তিনি আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রের একজন সদস্য। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আফ্রিকার দেশ বেনিন থেকে তার এক বান্ধবীর মাধ্যমে কোকেনের এই চালান সংগ্রহ করেন তিনি। পরে মরক্কো থেকে কাতার হয়ে চালানটি ঢাকায় নিয়ে আসেন। তার পরিকল্পনা ছিল ঢাকা থেকে চালানটি নেপাল হয়ে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে নিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশেও কোকেনের বাজার তৈরিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছিলেন তিনি।


ভারতীয় এই নারীর বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা বিভাগের বিমানবন্দর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি এখন তদন্তাধীন।


ডিএমপি উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা তার কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। আমরা এই তথ্য যাচাই করছি।


টার্গেট এশিয়া, ট্রানজিট বাংলাদেশ ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোকেন সাধারণত দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো থেকে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে যায়। প্রাথমিকভাবে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে কোকেনের চালান আসত। পরে এসব দেশ থেকে চালান আবার উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে যায়। তবে আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসায়ীরা কোকেনের নতুন বাজার হিসেবে টার্গেট করছে এশিয়াকে। সেই প্রচেষ্টা থেকে ভারত ও বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে কোকেনের ট্রানজিট সারা এশিয়ার বাজারের জন্য চাওয়া হচ্ছে।


উদ্বেগের কারণ ট্রানজিট রুট


আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের দুটি প্রধান মাদক উৎপাদন ও চোরাচালানের পথ হল গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল এবং গোল্ডেন ক্রিসেন্ট। এই দুই রুটের মাঝখানে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বিভিন্ন রকম বিপদজনক মাদক পাচার হয়। কোকেনের যে চালানগুলি ইতিমধ্যে দেশে এসে পৌঁছেছিল তাও এই রুটের অংশ হিসাবে ট্রানজিট ব্যবহার করে অন্যান্য দেশে যাচ্ছিল। তবে চোরাকারবারীরা শুধু ট্রানজিট রুটই ব্যবহার করছে না, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোকেনসহ বিভিন্ন মাদকের বাজার তৈরির চেষ্টা করছে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশকে কোকেনের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তা সফল হচ্ছে না। বিভিন্ন কারণে এটিকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সরকারিভাবে বলা যাচ্ছে না। কিন্তু সম্প্রতি দেখা গেছে, শুধু কোকেনের রুট হিসেবে নয়, একটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র বাংলাদেশে কোকেনের বাজার তৈরির চেষ্টা করছে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com