এবার দাম বেশি
রাজধানীর হাটে বাড়ছে ক্রেতার সমাগম, দাম বেশি বিক্রি কম
ক্রেতাদের পছন্দ মাঝারি গরু
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৩, ১০:৪৪
রাজধানীর হাটে বাড়ছে ক্রেতার সমাগম, দাম বেশি বিক্রি কম
এস এম রিয়াদ রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

পবিত্র ঈদুল আজহাকে ঘিরে রাজধানীর স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাটগুলোতে কেনাবেচা শুরু হয়েছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিন হাটগুলোতে ট্রাকে ট্রাকে আসছে কোরবানির পশু। বাড়তে শুরু করেছে ক্রেতাদের সমাগম। ক্রেতারা বলছেন, গতবারের চেয়ে এবার গরুর দাম অনেক বেশি। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, এবার গরু কিনতে হয়েছে বেশি দামে। তাই দাম কিছুটা বেশি।


রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে এখন ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়লেও বিক্রি জমে ওঠেনি। শেষ মুহূর্তে বাড়তি ভিড় এড়াতে কেউ কেউ আগেভাগেই যাচ্ছেন হাটে। পছন্দের পশু কিনতে এক হাট থেকে অন্য হাটে ঘুরছেন। পছন্দ হলেই কোরবানির পশুর দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে চলছে দরকষাকষি। এবার ক্রেতাদের অধিকাংশের চাহিদা ছোট ও মাঝারি আকারের গরু



রাজধানীর বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা যায়, কুষ্টিয়া, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির পশু আসছে। সড়কপথে ট্রাক ও পিকআপ আর নৌপথে ট্রলারে করে পশু আসছে হাটগুলোতে। বেপারীরা ট্রাক বা ট্রলার থেকে নেমেই প্রথমে জায়গা ঠিক করছেন। অনেকে আবার আগেই জায়গা ঠিক করে রেখেছেন। তবে বেচাকেনা শুরু হলেও বিক্রেতারা বলছেন, পুরোদমে বিক্রি শুরু হয়নি। হাটগুলোতে ক্রেতারা আসছেন, দামাদামি করছেন, দামে মিললে কোরবানির পশু কিনে বাড়ি ফিরছেন।




বেপারীরা বলছেন, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা আসছেন। আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করেছে ক্রেতাদের সমাগম। কেউ কেউ দাম জিজ্ঞাসা করেই চলে যাচ্ছেন। অনেকে আবার হাটে কোরবানির পশু দেখতে আসছেন। এ বছর গরুর দাম বেশি হওয়ায় অনেকে বাজার যাচাই করে পশু কিনছেন বলে জানান তারা।




রাজধানীর পোস্তগোলা শ্মশান ঘাট সংলগ্ন বালুর মাঠ পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, কিছুক্ষণ পরপরই ট্রাকে করে ব্যাপারীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পশু নিয়ে আসছেন। বেপারীরা হাটে কদিন থাকার প্রস্তুতি হিসেবে তাঁবু, বালিশ, চট, চাদর, হাড়িপাতিল ও গোখাদ্য নিয়ে এসেছেন। বেশিরভাগ বেপারী ১০ থেকে শুরু করে অর্ধশতাধিক পশু নিয়ে এসেছেন। অনেক বেপারী একশ’র বেশি গরু পর্যন্ত এনেছেন। হাটে তুলনামূলক দেশি গরুর সংখ্যা বেশি।


বেপারীরা জায়গা ঠিক করে সারিবদ্ধভাবে পশু বেঁধে রেখেছেন। সেখানে দেখা যায়, একটি গরু বেচাকেনার কথা চলছে। কাছে যেতেই জানা গেল, গরুটি বিক্রি হয়েছে ২ লাখ টাকায়। গরুটির ক্রেতা বেসরকারি চাকরিজীবি মোবারক হোসেন বিবার্তাকে বলেন, গরু দেখে পছন্দ হয়েছে। সারা হাট ঘুরে দেখেছি, এই গরুটা আমার প্রথমে পছন্দ হয়েছে। তাই টাকার কথা না ভেবে কিনে ফেললাম। হাট যাচাই করে মনে হলো, মোটামুটি কম দামেই পেয়েছি।


একইসঙ্গে তিনি জানান, এবার গত বছরের থেকে গরুর দাম বেশি। ঈদের এখনও কয়েকদিন বাকি আছে। এখনও দেশের নানা স্থান থেকে অনেক পশু হাটে আসছে। ঈদের আগ মুহূর্তে গরুর দাম একটু কমতে পারে।


কুষ্টিয়ার মেহেরপুর থেকে আসা গরু বিক্রেতা আবু জাফর বিবার্তাকে বলেন, গত বুধবার ১২টি গরু নিয়ে হাটে এসেছি। এখন পর্যন্ত তিনটি বিক্রি হয়েছে। ঈদের আরও দুই দিন আছে, আশা করছি বাকিগুলো বিক্রি করতে পারব।


তিনি বলেন, অনেক কাস্টমার আসছে দাম শুনেই চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার দামাদামি করছেন। একটি গরু পালন করতে অনেক খরচ হয়। ঢাকা আনতে খরচ আছে। বাজারে সবকিছুর দাম বেশি, তাই এবার কোরবানির পশুর দাম একটু বেশি।


হাটে পশুর সংখ্যা অনেক বেশি, তাই পোস্তগোলা শ্মশান ঘাট সংলগ্ন বালুর মাঠ পেরিয়ে বুড়িগঙ্গার তীরের সড়ক বন্ধ করে গরুর হাট বসানো হয়েছে। রাস্তার দুপাশ দিয়ে রাখা হয়েছে কোরবানির পশু, যা সদরঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত। বুড়িগঙ্গার তীর ধরে এগুতেই দেখা গেল, ট্রলার ভর্তি করে কোরবানির পশু নিয়ে আসছেন ব্যাপারীরা। অনেক ব্যাপারী জায়গা না পাওয়ার অভিযোগ করেন। জায়গা না পেয়ে অনেককে ঘাটের আশেপাশেই পশু বেঁধে রাখতে দেখা যায়।


কুষ্টিয়া থেকে আসা বেপারী মজনু মিয়া বিবার্তাকে বলেন, প্রায় ৩০ মিনিট থাকি গরু ঘাটে এনে বসে আছি। এখন বৃষ্টি হচ্ছে, ট্রলার থেকে এখনও গরু নামাতে পারি নাই। জায়গা পাওয়া যাইতেছে না। জায়গা না পেলে কোথায় রাখব। হাট কর্তৃপক্ষ বলছে, জায়গা দিবে, একটু সময় লাগবে।



হাট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে থাকা মো. রফিক মিয়া বিবার্তাকে বলেন, জায়গা নিয়ে কোনো সমস্যা নাই, হাটে জায়গা পর্যাপ্ত আছে। লোকজন বাঁশ, খুঁটি আনতে গেছে। আনলেই সেখানে গরু রাখার কোনো সমস্যা হবে না।


গরু কিনতে আসা মো. শাহিনুল ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, এ বছর কোরবানির হাটে গরুর সংখ্যা বেশি থাকলেও দামও বেশি। পুরো হাট ঘুরে দেখছি, পছন্দ ও দামে মিললেই কিনব।


রাজধানীর স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীতে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতাদের উপস্থিতি অনেক। কেনাবেচা শুরু হলেও এখনও পুরোদমে বেচাবিক্রি শুরু হয়নি। অনেক পাইকার ও খামারিরা বসে-শুয়ে সময় পার করছেন। অনেককে আবার পশুর যত্নআত্তি নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।


টঙ্গী থেকে ২২ জুন সরকার ফার্মের ৫৫টি গরু নিয়ে এসেছেন ইমন মিয়া। তিনি বিবার্তাকে বলেন, এখন পর্যন্ত মাত্র ৪টি গরু বিক্রি করেছি। গত বছর খুঁটি ভাড়া দুই হাজার টাকা ছিল। এবার তা বাড়িয়ে সাড়ে ৩ হাজার টাকা করে নিচ্ছে। এ ছাড়া গরুর খাবারের দাম বেশি, আনার ভাড়া বেশি। প্রচুর গরু থাকলেও তুলনামূলক বিক্রি কম।



টাঙ্গাইলের সফিপুর থেকে ৭টি গরু নিয়ে আসা মো. রহমত মিয়া বিবার্তাকে বলেন, প্রথম চালানে যে ৭টা গরু আইছে, তার মধ্যে ৪টা বেচা হইছে। এতে অবশ্য খুব বেশি লাভ হয় নাই। সবাই ছোট গরু চাইতাছে। তাই আরও গরু দেশে থাহি আনা হইতাছে। আশা করছি শেষ সময়ে ভালো বেচাকেনা হইব, লাভও হইব।


ব্যাংকার হামিদুর রহমান এসেছেন গাবতলী পশুর হাটে গরু কিনতে। তিনি বিবার্তাকে বলেন, পুরো হাট ঘুরেছি কিন্তু দামে ও পছন্দে মিলছে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাজেট কম। সে হিসাবে গরু পাচ্ছি না।



গাবতলী পশুর হাটের পাশে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট হাট’ স্লোগানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন ব্যবস্থার জন্য বসানো হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের অস্থায়ী বুথ। সেখানে ক্রেতা-বিক্রেতার লেনদেন সংক্রান্ত সহযোগিতা, সহজে ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট খোলা ও নিরাপদে লেনদেন করা হয় বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির ভাইস প্রিন্সিপাল মো. মোজাম্মেল হক। তিনি জানান, এতে ক্রেতা-বিক্রেতা নিরাপদে টাকা লেনদেন করতে পারছেন। সবার উচিত, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করা।


রাজধানীর পোস্তগোলা বা গাবতলী পশুর ছাড়াও কমলাপুর, হাজারীবাগ, বসিলা পশুর হাটে গিয়ে একই চিত্র দেখা যায়। বিক্রেতা বলছেন, বেচাকেনা পুরোদমে শুরু হয়নি। তবে বাড়তে শুরু করেছে ক্রেতাদের আনাগোনা। এ ছাড়াও গরু কিনে রাখার জায়গা না থাকায় অনেক ক্রেতা বাজার ঘুরে যাচাই-বাছাই করছেন। পরে সময় বুঝে কিনবেন।


রাজধানীর লালবাগের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন ফিরোজ বিবার্তাকে বলেন, প্রতি বছর বাবার সাথে গরু কিনতে হাটে এসেছি। বাবা পছন্দ ও দামাদামি করে গরু কিনেছে। বাবা অসুস্থ থাকায় এবার আমি একা গরু কিনতে এসেছি। কিন্তু অন্যান্য বছরের থেকে এ বছর গরুর দাম অনেক বেশি। হাট ঘুরে দেখছি, আবার গরু কিনে রাখার জায়গা নেই। আবার খাবার খাওয়ানোও সমস্যা। তাই ঈদের আগের দিন গরু কিনব।



কুড়িগ্রামের পাইকার আবুল হোসেন। তিনি ১০টি দেশি জাতের গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। তিনি বিবার্তাকে বলেন, তিন দিন থেকে গরু নিয়ে হাটে এসেছি। ২টি গরু বিক্রি করেছি। ঈদের এখনো কয়েকদিন আছে, আশা করছি সামনে বেচাবিক্রি বাড়লে গরুগুলো বিক্রি হবে।


এদিকে হাটগুলোর ইজারাদারের কর্মীরা জানান, কয়েকদিন আগে থেকেই হাটে গরু আসতে শুরু করেছে। ঈদ যত এগিয়ে আসবে হাটে পশু আরও বাড়বে। তার সাথে পশু বিক্রিও জমে উঠবে বাড়বে আশা তাদের।


রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ১৯টি পশুর হাট বসেছে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চলবে বেচাকেনা। এদিকে অস্থায়ী পশুর হাটে এ বছরও ডিজিটাল লেনদেনের ব্যবস্থা রেখেছে সিটি করপোরেশন। প্রতিটি হাটে ব্যাংকের বুথ, জাল নোট শনাক্তের মেশিন, পুলিশের ওয়াচ টাওয়ার ও নিরাপত্তা চৌকির ব্যবস্থা করা হয়েছে।


জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইন পশুর হাট


বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও অনলাইনে পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে। মানুষের মাঝে হাটের ঝামেলা এড়ানোর সুবিধার কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইন পশুর হাট। চতুর্থবারের মতো এবারও কোরবানির পশুর ডিজিটাল হাট চালু হয়েছে। ডিএনসিসির ডিজিটাল হাটে ই-ক্যাব এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ) অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের খামারিরা পশু বিক্রি করতে পারছেন। এবার কোরবানিতে অনলাইনে পশু বিক্রি জমজমাট হয়ে উঠছে। এ ছাড়া জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইন ভাগে কোরবানি। এছাড়াও বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ফেসবুকে বিক্রেতারা কোরবানির পশু বিক্রি করছেন। কোরবানির পশুর ছবি ও ভিডিও দেখে ক্রেতাদের পছন্দ হলে বিক্রেতারা পৌঁছে দিচ্ছেন।


তবে অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাবেচায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়পক্ষকে সতর্ক করেছে র‌্যাব। আর যদি কোনো ধরনের প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনভিত্তিক বিজ্ঞাপন দিয়ে কোরবানির পশু বিক্রি হচ্ছে। অনলাইনভিত্তিক সব ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ-গ্রুপে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ছবিতে এক আর বাস্তবে অন্য পশু দিলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনলাইন মাধ্যমগুলো থেকে কেউ পশু কিনতে গিয়ে প্রতারিত হলে র‌্যাবের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করুন। আমাদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


বিবার্তা/রিয়াদ/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com