বিশ্বের বড় শরণার্থী শিবির বাংলাদেশে
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৩, ১০:১৩
বিশ্বের বড় শরণার্থী শিবির বাংলাদেশে
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বিশ্ব শরণার্থী দিবস আজ। আর এই মুহূর্তে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দশ কোটিরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা এটাই সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির বাংলাদেশে। উখিয়া-টেকনাফ এবং ভাসানচরে আশ্রয় নিয়েছে সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত এসব বাসিন্দা এখন বাংলাদেশের ঘাড়ের বোঝা হয়ে উঠেছেন।


জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, বিশ্বে শরণার্থীদের দুই-তৃতীয়াংশের উৎস পাঁচটি দেশ- সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা, আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান ও মিয়ানমার। এছাড়া সহিংসতার কারণে কঙ্গো থেকেও কয়েক লাখ মানুষ শরণার্থী হিসেবে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় গ্রহণে বাধ্য হয়েছেন। এবারের বিশ্ব শরণার্থী দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘বাড়ি থেকে দূরে থাকলেও আশা জেগে থাকবেই’। বিশ্ব শরণার্থী দিবসে বাণী দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।


বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে ‘বাড়ি চলো’ অথবা ‘গো হোম’ স্লোগানে সমাবেশ করবেন কক্সবাজার ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা। এছাড়া ফজর ও জোহরের নামাজের পর দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও নিজ দেশে ফেরার সুযোগ পাননি রোহিঙ্গারা। ক্যাম্পগুলোতে বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা।


রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গত ১৮ এপ্রিল কুনমিংয়ে চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বৈঠকে ১ হাজার ১৭৬ রোহিঙ্গার পাশাপাশি আরও ৬ হাজার জনকে ফেরানোর সিদ্ধান্ত হলেও মৌলিক কিছু বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মতপার্থক্য থেকে যায়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন ৩০০ জন করে সপ্তাহের ৫ দিনে ১ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গাকে পাঠানোর কথা। প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকার কথা বলে বৈঠকে মিয়ানমার প্রতিদিন ৩০ জন করে সপ্তাহের ৫ দিনে ১৫০ রোহিঙ্গাকে রাখাইনে ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দেয়। আর বাংলাদেশ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথায় অনড় থাকে। অবশেষে বাংলাদেশের অবস্থানে সায় দেয় মিয়ানমার।


কুনমিংয়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের রাখাইনে আমন্ত্রণ জানায় মিয়ানমার। গত ৫ মে রাখাইনের মংডু পরিদর্শন করে ২০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল। তারা ফিরে এসে বেশ কিছু বিষয়ে পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করে প্রত্যাবাসন নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা চাই স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবাসন। বাংলাদেশে যেসব বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে তারা দেশে ফিরে যাক। যতদিন পর্যন্ত তারা ফেরত যাচ্ছে না, তাদের দেখাশোনা আমরা করব।’ রোহিঙ্গা সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।


শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া দেশগুলোকে আরও বেশি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও। শরণার্থী দিবসের বাণীতে তিনি বলেন, ‘এই দিনটি শরণার্থীদের সুরক্ষা ও সহায়তা প্রদানে আমাদের দায়িত্বের কথা তুলে ধরে। পাশাপাশি তাদের প্রতি সহায়তা আরও বাড়াতে আমাদের বাধ্যবাধকতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’ তিনি বলেন, ‘শরণার্থীরা মানবচেতনার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ। তাদের সমর্থন ও সংহতির প্রয়োজন। তাদের প্রাপ্য সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া বা তাদের ঠেলে বের করা দেয়া ঠিক নয়।’


শরণার্থীদের নিরাপদে বাড়ি ফেরাতে রাজনৈতিক ইচ্ছা প্রয়োজন বলে জানান জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘শরণার্থীরা তাদের হৃদয়ে যে আশা বহন করে তা কাজে লাগাতে আমি গোটা বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানাই।’


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com