‘নতুন প্রজন্মের কাছে আহ্বান, এই রক্তমাখা পতাকাকে তোমরা যত্ন করো’
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:১৬
‘নতুন প্রজন্মের কাছে আহ্বান, এই রক্তমাখা পতাকাকে তোমরা যত্ন করো’
বীরবিক্রম মেজর (অব.) এটিএম হামিদুল হোসেন তারেকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, হাবিবুর রহমান রোমেল ও মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই মাসে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে উদিত হয়েছে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে সূচিত মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় এই মাসের ১৬ ডিসেম্বর। এটিই বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। এই গৌরব বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৩০ লক্ষ শহিদের রক্ত ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। বিজয়ের এই মাসে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিবাদন জানাই।


বাঙালি জাতির এমনই একজন বীর সন্তান মেজর (অব.) এটিএম হামিদুল হোসেন তারেক, বীরবিক্রম। জন্ম বগুড়া জেলার রজাকপুর গ্রামে। পিতা মরহুম আব্দুল হামিদ (ডেপুটি সুপার অব পুলিশ)। তারেক ছিলেন বগুড়া জেলা স্কুলের ছাত্র। ১৯৭১ সালে ছাত্রাবস্থায় তিনি ৭নং সেক্টরের একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। অকুতোভয় অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি মাত্র ১৯ বছর বয়সে ‘বীর বিক্রম’ উপাধিতে ভূষিত হন। বগুড়া জেলায় তিনিই একমাত্র ‘বীর বিক্রম’ পদকে ভূষিত ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা।


সম্প্রতি জাতির এই বীর সন্তান বিবার্তা’র সাথে একান্ত আলাপে মুখোমুখি হয়েছেন। তাঁর আলাপে মহান মুক্তিযুদ্ধের নানাদিক উঠে এসেছে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবার্তার বার্তা সম্পাদক হাবিবুর রহমান রোমেল ও প্রতিবেদক মহিউদ্দিন রাসেল।


বিবার্তা: মহান মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো কেমন ছিল?


বীরবিক্রম হামিদুল হোসেন তারেক: দেখুন, ১৯৭১ সালে যখন গোটা দেশ স্বাধীনতার আন্দোলনে তপ্ত, তখন সৈয়দপুরে স্বাধীনতাকামী বাঙালিরা অনেক মিছিল-মিটিং করেছি। যেহেতু সৈয়দপুর বিহারি অধ্যুষিত এলাকা, তাই সেখানে বাঙালি ও বিহারিদের দ্বন্দ্বও প্রবল ছিল। কিন্তু আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলাম আপসহীন।


বিবার্তা: ১৯৭১ সালে আপনি বয়সে একদমই তরুণ, মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন কীভাবে?


বীরবিক্রম হামিদুল হোসেন তারেক:১৯৭১ সালের ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার প্রস্তুতি নেই। এখানে বলতে হয়, ছাত্রাবস্থায় আমি কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে যুবসমাজ মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। ৭ মার্চের ভাষণ না শুনলে হয়তো আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকতাম এই ভেবে যে, আমরা মুক্তিযুদ্ধে যাবো কি-না? বঙ্গবন্ধু এমন একজন নেতা ছিলেন, যার কণ্ঠ ছিল বাঙালির কণ্ঠস্বর। তিনি যখন আহ্বান করলেন যে, তোমাদের যার যা কিছু আছে তা নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়। এটাই কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের শুরু। বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানে পুরো বাঙালি জাতি জাগ্রত হয়েছিল।


বিবার্তা: মুক্তিযুদ্ধের কোন ঘটনা আপনার মনকে ভীষণ নাড়া দেয়?


বীরবিক্রম হামিদুল হোসেন তারেক: আমি ৭নং সেক্টরে একটা কোম্পানির অধীনে ছিলাম। তখন একবার ইন্ডিয়ান মাউন্টেন ডিভিশনের সিক্স গার্ড রেজিমেন্টের সাথে সংযুক্ত ছিলাম। আমাকে আদেশ করা হয়, পার্বতীপুরে পাক বাহিনীর অস্ত্রগার ধ্বংস করার জন্য। ক্যাম্প থেকে আমরা রাতের রওনা দিলাম। আমাদের ক্যাম্পটা ছিল আঙ্গিনাবাদ অর্থাৎ দিনাজপুর ও ফুলবাড়ির যে রাস্তা, তার পাশে। যার একদিকে বাংলাদেশ অন্যদিকে ভারত। ওখান থেকে পার্বতীপুর আসতে প্রায় ভোর হয়ে গেল। তখন আমরা ওখানে একটা বাড়িতে উঠি। বাড়িওয়ালা বললেন, বাবারে-বাবা! আপনারা মুক্তিযোদ্ধা ভাই, এখানে এসেছেন। এরআগে মুক্তিযোদ্ধারা এই গ্রামে আসে নাই। ফলে তিনি খুব খুশি হয়ে আমাদের থাকতে দিলেন, ভালো আপ্যয়নের আয়োজনও করলেন।


তিনি এটাও বললেন যে, আমরা জানি, আপনারা খুব কষ্টে আছেন। আপনাদের জন্য আজকে ভালো খাবার আয়োজন করব। তিনি খাসি জবাইসহ আরো নানা কিছু রান্না করলেন। এদিকে আমরাও অস্ত্রসহ সরঞ্জামাদি পরিষ্কার করলাম আর ভাবলাম এখানে দিনটা থেকে রাতে পার্বতীপুর অপারেশনে নামব। দুপুরে খাওয়ার এক পর্যায়ে ‘টাকডুম’ শব্দ শুনলাম। ওইসময় পাকিস্তানি আর্মিরা জি-থ্রি নামে আমেরিকান রাইফেল ব্যবহার করত। ওই রাইফেল দিয়ে ফায়ারের আগে টাকডুম শব্দ হত। শব্দটা শোনার সাথে সাথেই আমরা ভাত রেখে উঠে পড়লাম। কিন্তু ততক্ষণে পাকিস্তান আর্মি আমাদের ঘিরে ফেলেছে। দুই পক্ষে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। ওরা চাচ্ছে- গ্রামের ভেতরে ঢুকতে, কিন্তু আমরা তাদের ঢুকতে দেবো না।



যখন বৃষ্টির মতো গুলি চলছে। হঠাৎই দেখি একটা মেয়ে হামাগুড়ি দিয়ে আমার দিকে আসছে। আমি তাকে বললাম- তুমি আর এগিয়ো না, গুলি লাগতে পারে। কিন্তু মেয়েটি কথা শুনল না। সে যখন আমার কাছে আসল, দেখি সে নববধূ। তার পায়ে তখনো আলতা আর হাতে মেহেদীর রঙ। সে বললো, ভাইজান আপনারা এখানে কেন? আপনারা পেছনের দিকে আসেন। কারণ পেছন দিক থেকে তো পাকিস্তান আর্মিরা আপনাদের ঘিরে ফেলেছে। বললাম, আমি তো চিনি না। বললেন আমার সাথে আসুন।



মেয়েটা তখন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে, এই পুকুর পাড়, ওই পুকুর পাড় দিয়ে আমাদের নিয়ে চলল। এই পথ পাড়ি দিতে গিয়ে তার পা অনেকটা কেটেও গেছে। মেয়েটা যখন আমাদের নিয়ে পেছনে আসল তখন দেখি, আমাদের যে থাকতে দিয়েছিল, সে ওখানে দাঁড়িয়ে। আর পাকিস্তানি আর্মিদের বলছে, তোমরা পেছন দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘিরে ধরো। আমাদের একজন সহযোদ্ধা ছিল, ওর নাম মনসুর ডাকাত। একসময় পার্বতীপুর এলাকার ডাকাতদের সর্দার ছিল। সে আমার সাথে ৩০ জন ডাকাত নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল।


মনসুর রাইফেল নিয়ে যুদ্ধ করত না- তার একটা তলোয়ার ছিল। সে তলোয়ার নিয়ে জয় বাংলা বলতে বলতে পাকিস্তান ক্যাম্পে ঢুকে যেত। এক পর্যায়ে মনসুর তার তলোয়ার দিয়ে সেই আশ্রয়দাতাকে এক কোপ দিল। ওটা এতোটাই ধারালো ছিল যে, ওর মাথা শরীর থেকে আলাদা হয়ে গেল। সবচেয়ে অবাক কাণ্ড, যে মেয়েটা আমাদের নিয়ে এলো, সে ওই মণ্ডুটা লাথি মেরে ডোবায় ফেলে দিল। এরপর সে বলল, স্যার এই বেটা কিন্তু রাজাকার। আমি বললাম, তাই নাকি? সে বলল, এই লোকই খবর দিয়েছিল পাকিস্তানি আর্মিকে। সে আরও জানাল, ওনি কিন্তু আমার শ্বশুর। এটা শুনে আরো বিস্মিত হলাম। এটাই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ।


বিবার্তা: একজন শেখ মুজিবুর রহমান না থাকলে বাংলাদেশ কখনোই স্বাধীন হত না। আপনি কী মনে করেন?


বীরবিক্রম হামিদুল হোসেন তারেক: বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একে অপরের পরিপূরক। একটিকে বাদ দিয়ে আরেকটি কল্পনা করা যায় না। বঙ্গবন্ধু বলেছিল যে, তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়। আমি আগে যে মেয়েটার কথা বলেছি, সে জানে না রাইফেল কী জিনিস? সে তো জানে না গ্রেনেড কী জিনিস? তার তো কোনো প্রশিক্ষণও ছিল না। কিন্তু তারপরেও সে কত বড় একটা মুক্তিযুদ্ধ করল। আর এটাই বঙ্গবন্ধুর কথা। তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়েই প্রতিরোধ গড়ে তোল। বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতা না থাকলে দেশ কোনদিনও স্বাধীন হত না। ফলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণই হচ্ছে এ দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের নিয়ামক শক্তি।



বিবার্তা: মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার কোম্পানি যখন ২০ মাউন্টেইন ডিভিশনের ৬ গার্ড রেজিমেন্টের সাথে বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধ করে হিলি থেকে বগুড়া পর্যন্ত স্বাধীন করে। সেই অনুভূতি কেমন ছিল?


বীরবিক্রম হামিদুল হোসেন তারেক: আমি যে মনসুর ডাকাতের কথা বলেছি সে কিন্তু ৩০ জন ডাকাত নিয়ে আমাদের সাথে যুদ্ধ করেছে। সে একজন দুর্ধর্ষ যোদ্ধা ছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী বিশেষ করে ৬ গার্ড রেজিমেন্ট, যার সাথে আমি সংযুক্ত ছিলাম। আমরা যখন সম্মুখ অভিযানে নেমে যাই, তখন তারা আমাদের ১২টা ট্যাংক দেয়। এই ট্যাংক ৬ গার্ড রেজিমেন্টের সামনে থাকত। ট্যাংকগুলোর একেবারে সামনে মনসুর ও তার ডাকাত দল থাকত। একবারে পেছনে একটা ট্যাংকে আমি আর কয়েকজন কমান্ডার থাকতাম।


একবার ট্যাংক নিয়ে আমরা ফুলবাড়ির দিকে অগ্রসর হই। যেখানে চরখাই নামে স্টেশন ছিল, বর্তমানে বিরামপুর। চরখাইর একটু সামনে একটা নদী আছে- ইছামতী কিংবা অন্যকোনো নদী। নদীতে ট্যাংক নামিয়ে দেয়া হয়। ট্যাংকটা ছিল পিটি ৭৬ অর্থাৎ এটা উভচর। যেটা মাটি ও পানি দিয়ে চলতে পারে। ওইগুলো নদী পারের সময় ২/৩টা ট্যাংক নদীতে বিকল হয়ে যায়। তখন ইন্ডিয়ান বাহিনীর আমার অধিনায়ক ঋতে ধর বললেন, তারেক এখন কী করা যায়? আমি ট্যাংকের উপর দাঁড়িয়ে আশেপাশে অনেক লোকজন দেখতে পেলাম।


একপর্যায়ে তাদের উদ্দেশ্যে বললাম, ভাই আমরা মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধা বলার সাথে সাথে ওই পাড় থেকে আওয়াজ আসে জয় বাংলা। তাদের বললাম, আমরা তো ট্যাংক নিয়ে আটকে গেছি। তারা বলল, আমরা কি তুলে দেবো? আমি তাদের সহযোগিতা চাইলাম। তখন লোকজন বাড়ি থেকে দড়ি আরো নানা সরঞ্জাম নিয়ে সাঁতরে ট্যাংকের নলের সাথে দড়ি বেঁধে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলে ট্যাংকগুলো পাড়ে আনল। এই যে জনগণের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা, সেটি ভোলবার নয়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে জনগণের যে জনযুদ্ধ, এদের কথা ইতিহাসে লেখা হয়নি। হাজার হাজার গ্রামবাসী, তাদের কাছে তো কোনো অস্ত্র ছিল না। কিভাবে তারা সেনাবাহিনীকে সাহায্য করল, ট্যাংকগুলোকে পার করে দিলো, এটা মুক্তিযুদ্ধে জনগণের প্রত্যক্ষ সাপোর্ট।


আরেকটা কথা বলি, বর্ডার পাড় হচ্ছি। হাঁটতে হাঁটতে যখন আমরা আমবাড়ির বর্ডারের কাছাকাছি চলে আসি। তখন দেখি একজন বুড়ি কাঁদতেছে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এই বুড়ি মা তুমি কাঁদতেছ কেন? হাঁটতে পারতেছ না? চলো, তোমাকে ধরে নিয়ে যাই। তিনি বললেন, নারে বাবা! আমি চিন্তায় এমন হয়ে গেছি। আমাদের শেখ মুজিব এটা কী করল? তিনি এটা করার কারণে আমাদের কি যে কষ্ট হচ্ছে, ঐ পাড়ে যাওয়া লাগতেছে। পাকিস্তান আর্মিও আমাদের মারতেছে। তখন আমি তাকে বললাম, তুমি যে শেখ মুজিবের কথা বলতেছ, তাকে তো পাকিস্তানের আর্মিরা ধরে নিয়ে গেছে। এটা শুনে সেই বুড়ি মা যেন আকাশ থেকে পড়ল।


তিনি বললেন, কি বলছেন! উনাকে মেরে ফেলবে না তো? এরপর তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন। অথচ কিছুক্ষণ আগেও তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক কিছু বলেছেন। পরবর্তীতে ঠিকই বঙ্গবন্ধুর বিপদ তাকে ব্যথিত করেছে। জনগণের ভিতর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কিভাবে প্রোথিত ছিলেন, এই ঘটনাই তার প্রমাণ। তিনি এরপর বঙ্গবন্ধুর ও দেশ স্বাধীনের জন্য দোয়া করলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মাঠে থাকার কারণে আমরা সরাসরি বঙ্গবন্ধুর প্রতি এসব ভালোবাসার বিষয় দেখতে পেরেছি।


বিবার্তা: বঙ্গবন্ধুকে কি কখনো কাছ থেকে দেখেছেন। সেই অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?


বীরবিক্রম হামিদুল হোসেন তারেক: আমি বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি শুধু দেখিনি, তিনি আমাকে স্পর্শও করেছেন। আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ১৯৭৪ সালে কমিশন পাই। মুক্তিযুদ্ধের পরে আমরা প্রথম ব্যাচ হিসেবে এই সম্মাননা পেয়েছি। আর আমাদের কমিশন দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। কুমিল্লায় দেয়া ওই কমিশনে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণও দিয়েছিলেন। সেই দিন তিনি বলেছিলেন, তোমরাই কিন্তু সোনার বাংলা গড়বে।


প্যারেড শেষে ক্যাডেটরা কমিশনপ্রাপ্ত হয়। এরপর আমরা প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধুর সাথে ফটোসেশনের জন্য অপেক্ষা করছি, তিনি আসলেন। আমার সাথে লেফটেন্যান্ট কাদের নামে এক বন্ধু ছিলেন। উনি বঙ্গবন্ধুপুত্র শেখ জামালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আবাহনীতে ফুটবলও খেলত। কাদেরকে দেখে বঙ্গবন্ধু বললেন, এই কাদের! এদিকে আয়। কাদের দৌড়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে গেল। তিনি বললেন, তুই তো কমিশন পেয়ে গেছিস। ভালো ভালো, খুব ভালো। জামালও পাবে।


এরপর হঠাৎই দেখি বঙ্গবন্ধু আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, এদিকে আয়। আমিও গেলাম। তিনি আমার হাত ধরে বললেন, এই দেখো! আমার সোনার ছেলে, ১৯ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধ করে ‘বীর বিক্রম’ উপাধি পেয়েছে। এরাই তো আমার সোনার বাংলাদেশ গড়বে। বঙ্গবন্ধুর সেই স্পর্শ আমার এখনো মনে আছে। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমার নেতা, আমার জাতির পিতা আমাকে স্পর্শ করেছে- এটাই জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।


বিবার্তা: একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কেমন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চান?


বীরবিক্রম হামিদুল হাসান তারেক: আমি একজন পজেটিভ মানুষ। ভুলভ্রান্তি তো দেশের সবখানে হয়ে থাকে। যেমনটি রাজনীতিবিদদের দ্বারা হয়েছে, আমাদের অর্থাৎ সেনাবাহিনীদের দ্বারাও হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যেমন চেয়েছিলেন, একটি সোনার বাংলাদেশ। তখনকার এবং এখনকার মানুষের অনুভূতিতে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। যদি আমরা একাত্তরের মানুষের মন-মানসিকতার দিকে না যাই, তাহলে বুঝতেই পারবে না বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু কি ছিলেন।


বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে সত্যিকারার্থে মুক্ত করতে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশকে একটি লাল সবুজ পতাকা উপহার দিয়েছি। হয়তো আর কিছুদিন পরে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো কিন্তু নতুন প্রজন্মের কাছে আহ্বান থাকবে, এই রক্তমাখা পতাকাকে তোমরা যত্ন করো। এই পতাকার মান তোমরা উন্নত থেকে উন্নততর করো। এরই মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে সার্থক করা হবে।


বিবার্তা/ রাসেল-রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)

১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,

বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com