অচিন্ত্য চয়নের কবিতা
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪:৫০
অচিন্ত্য চয়নের কবিতা
অচিন্ত্য চয়ন
প্রিন্ট অ-অ+
১. প্রেম করি তোমার নামে!

কোন একদিন রাস্তায় তোমার ক্ষমা চাওয়া বেদবাক্য মনে হয়েছিলো। আজকাল এসব অন্ধকার মনে হয়। অন্ধকারে অবিশ্বাসের পাহাড় ভীষণভাবে আহত করে।


তোমার সেই বিকেলটা বৃষ্টিতে ধুয়ে যায়। ধুয়ে যাওয়া বিকেলের মত তোমার শরীর ভুলে যাচ্ছি, ভুলে থাকছি
অন্ধকারে প্রতিবেশি আলোর সংসার। আমি এখন প্রেমিক হয়েছি- রাত চলে যায় রুপসী বালিকার কণ্ঠ শুনতে শুনতে। গল্প হয় ইথারে, প্রেম হয় হৃদয়ে।


এক থেকে গণনা করেই আটাশ উচ্চারণ করতে হয়। এই আটাশ সংখ্যাটি ভিষণ জটিল অংক বুঝিয়ে দিয়েছে। এই সংখ্যাটি উচ্চারণে সহস্র সকাল হত্যা করতে হয়- নিরাপরাধী হত্যায় দায় জমা হয় বিবেকে!
ফলে আটাশধানের চালের ভাতও অসহ্য লাগে। শুধু মায়া লাগে রাতভর যে বালিকা আলোর গল্প শোনায়, তার জন্য। যে বালিকার আশ্বাসে বুকে নেমে আসে বিশ্বাস! শুধু তার জন্যই জমা রাখি মায়ার আদুলি।


আমি অন্ধকারের প্রহরি নই, আলোর গল্প বুকে নিয়ে
রাতভর বালিকাকে পাঠ করি। পাঠ করি সহস্র সকালের ঝরাপাতার গল্প। আমি নতুনে আত্মা রাখি,
বিশ্বাসে রাখি হাত। বাবার কবর থেকে শত মাইল দূরে রাখি প্রেতাত্মার দেহ— যেখানে মধু হয়ে যায় বিষ!


যে দেশে অসহনীয় গরমে পলাতক হয় বিদ্যুৎ নামের বালক, খুন হয় অগণিত মানুষের ঘুম, মরে যায় ভালো থাকার বৃক্ষ। এসব হাতের মুঠোয় রেখে, বিষকে মধু বানিয়ে প্রেম করি তোমার নামে! বালিকার জন্যই রাত জেগে থাকে আমার চোখে, যে চোখে আলো আসে
তোমার অভিশাপে, মিথ্যার কপালে তীর বিঁধে অভিশাপেও আলো জন্মায়।


কোন গল্পই লেখা হয়নি বিকেলের চোখে— অথচ সহস্র সকাল সিনেমা হলের পর্দায়, জাতীয় পতাকা উড়লেই
দাঁড়িয়ে হাত তুলি, সম্মান জানাই— সস্তা অভিনন্দনের
মত। বালিকার নাকের নিচের তিলটা অভিনন্দন ভুলিয়ে ভালো থাকার আশ্বাস দেয়!


বালিকার জেদের ছায়ায় নিষ্পাপ ভালোবাসা নীরবে ঘুমিয়ে যায়— নিভু নিভু চোখে প্রেম করি তোমার নামে! রুপালি রাত জেগে থাকে আমার চোখে!


২. সকাল হোক ভেজা চুলে

একটি দুঃখজনক বিকেল নিজের উপর ভর করে নিঃশ্বাস নিতে থাকে— নদীর ওপারে তোমার চোখ পাহারা দেয় সহনীয় বাতাসের সুর! সুরে তোমার
কান্না ভেসে আসে। নদীর জলে ঢেউয়ের মিছিল;


গল্প হয় বেদনার— শাড়ির কালো আঁচল দুঃখ জমা
রাখে বালকের চোখে। বালিকার ঘুম নেই-
অভিমানের বুনোহাঁস জলে নামে, অদ্ভুত বিকেলে
ছুটি হয় প্রেমের; তোমার চোখে প্রেম নেই, প্রেম নেই বলেই হাসিমুখে সকাল বোঝো না- তবু হতাশ হই না।
হতাশা বালিকার চুলে খেলা করে— বৃষ্টির তালে।
দুঃখবিলাসী বালিকারা এমনই, এমন করেই ভালোবাসে!


আমি এমন বালক— ভালোবাসি দুঃখ নিতে!
নামতার হিসাবে তোমার কোন জরিপ নেই।
জরিপের সংখ্যায় চোখ রাখার কোন বাহানা নেই,
ঘরে থাকি, ভয় রাখি তোমার চোখে, জানালায় তাকালেই বৃষ্টির ফোটা চোখের ভ্রুতে জল আঁকে।


জলেও ভয় নেই- ভয় তোমাকে বালিকা! ভয় নিয়েই
দুঃখজনক বিকেল নামে এই শহরে— তুমি পুণ্ড্রনগরে
বাতাসে দোলাও উলঙ্গ চুল— এলোমেলো চুলের ঘ্রাণ
মিশে যায় সাদা গোলাপে, তবে তোমার খোঁপায় গোলাপ নয়, বেলিফুলের সকাল ঝুলে থাকুক,
ঝুলে থাকুক আমার দৃষ্টি— বালকের প্রেম।


মেঘেরা দূরে যাবে একদিন; আলো জমা হবে হৃদয়ে
দুঃখ হয় বালিকা সুখের জন্য— দৃষ্টির নদীতে জল আসুক, নীরবে ধুয়ে যাক সকল দ্বিধা! দ্বন্দ্বের পাহাড়ে
নামুক কামুক বৃষ্টি- উষ্কানীমূলক আবহাওয়া ভ্রমণে যাক তোমার বুকে, বুকের সকল উত্তাপ হোক শীতকাল।


এই গরম চলে গেলেই শীতকাল। শীতকালে একা হতে নেই— অভিমান ভুলে চুল ভেসে দাও নাকের ডগায়- নিঃশ্বাস নেমে আসুক নাভিমূলে, সকাল হোক ভেজা চুলে। জীবন আনন্দের— বুঝিয়ে নাও ঘণ নিঃশ্বাসে।


লেখক : অচিন্ত্য চয়ন, কবি ও সাংবাদিক।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com