
ফরাসি আলোকময় যুগের কালজয়ী লেখক, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক ও পথ প্রদর্শক ভলতেয়ার। খ্রিস্টান ধর্মের (বিশেষ করে রোমান ক্যাথোলিক চার্চের) বিভিন্ন বিষয়ের কঠোর সমালোচনা করে তিনি সবচেয়ে বেশি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। দার্শনিক মতবাদ, সাহিত্যিক কাজের মাধ্যমে তিনি ধর্মীয় স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এবং ধর্ম ও রাষ্ট্রকে পৃথক রাখার পক্ষে সংগ্রাম করে গেছেন।
ভলতেয়ার নামে সমধিক পরিচিত হলেও তাঁর মূল নাম ফ্রঁসোয়া মারি আরুয়ে। জন্ম ২১ নভেম্বর ১৬৯৪ সালে আর মৃত্যু ১৭৭৮ সালের ৩০ মে। ভলতেয়ার তাঁর ছদ্মনাম। এ নামেই তিনি বেশি পরিচিত। তিনি ছিলেন ফরাসি আলোকময় যুগের একজন লেখক, প্রাবন্ধিক ও দার্শনিক।
ভলতেয়ারের বিশেষ কৃতিত্ব ছিল তাঁর অসাধারণ বাকচাতুর্যেও দার্শনিক চিন্তায়। বাগ্মী হিসাবে তিনি ছিলেন অতুলনীয়। তিনি নাগরিক স্বাধীনতার স্বপক্ষে, বিশেষত ধর্মের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নেয়ার জন্য বিখ্যাত ছিলেন।
স্বৈরাচারী রাজা ষোড়শ লুইয়ের দুঃশাসনে তিনি ফ্রান্সের কঠোর সেন্সর আইন উপেক্ষা করে সামাজিক সংস্কারের অন্যতম প্রবক্তা রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। খ্রিস্টান গির্জা ও তৎকালীন ফরাসি সামাজিক আচার ছিল তাঁর ব্যঙ্গবিদ্রুপের লক্ষ্য। নাগরিকদের পক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি অভিজাত শাসকচক্রের কঠোর সমালোচনা করেন।
ভলতেয়ারের জন্ম ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস শহরে। তার বাবা ফ্রঁসোয়া আরুয়ে (১৬৫০ - ১৭২২) ছিলেন নোটারি ও সরকারের ট্রেজারি দপ্তরের এক সাধারণ কর্মকর্তা। মা মারি মার্গ্যরিত দোমার (১৬৬০ - ১৭০১) ছিলেন ফ্রান্সের পোয়াতু প্রদেশের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। ভলতেয়ার তাদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ।
১৭০৪ থেকে ১৭১১ সাল পর্যন্ত ভলতেয়ার কোলেজ লুই-ল্য-গ্রঁ নামক বিদ্যালয়ে জেসুইট পাদ্রিদের কাছে পড়াশোনা করেন। এখানেই তিনি প্রাচীন লাতিন ও গ্রিক ভাষা শেখেন। পরবর্তী জীবনে ভলতেয়ার ইতালীয়, স্পেনীয় ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।
স্বৈরাচার, গির্জা তথা খ্রিস্টধর্মকে ভলতেয়ার ফ্রান্সের সার্বিক বিকাশে বাধা হিসাবে দেখতেন এবং সে কারণেই তাঁর রচনাবলী স্বদেশে নির্মমভাবে সমালোচিত হয়েছিল। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল গীর্জার ভণ্ডামি, মুর্খতাকে জনসন্মুখে তুলে ধরা। তিনি মানুষের অজ্ঞতা, মূর্খতা, প্রতারণা, অন্যায়-অবিচার, উৎপীড়নকারীকে ঘৃণা করতেন। এছাড়া ইসলাম ধর্ম ও তার প্রচারক হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন তিনি। ইহুদি ধর্ম নিয়েও তার নেতিবাচক মন্তব্য রয়েছে। বিদ্রুপধর্মী লেখা ‘রিজেন্ট’-এর জন্য ভলতেয়ার বাস্তিলের কারাগারে বন্দী হন।
আঠারো শতাব্দীতে ভলতেয়ারকে ফ্রান্সের বিশিষ্টজনরা হোমার ও ভার্জিলের সমকক্ষ বলে প্রশংসা করেন। তবে ফ্রান্সের সমাজ ও রাজ পরিবারের সঙ্গে ঝামেলার কারণে ১৭২০ সালে ইংল্যান্ডে চলে যান ভলতেয়ার।
সেখানে তিনি নির্বাসন যাপন করেন। ইংল্যান্ডে ভলতেয়ার ছিলেন অখ্যাত ও অপরিচিত কবি। তাই নানা কৌশলে অভিজাত মহলের সুনজরে আসার চেষ্টা করেন তিনি। তিনি রানী ক্যারোলিনকে উদ্দেশ্য করে একটি কবিতা লেখেন। তাই ব্রিটিশ রাজ পরিবারের পক্ষ থেকে দুইশ পাউন্ড ভাতাও পেতেন।
ভলতেয়ারের সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে দুই হাজার বই ও ২০ হাজার চিঠি। সম্প্রতি তার ১৪টি লেখা নতুন করে আবিষ্কৃত হয়েছে। তাঁর বিখ্যাত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো, দ্য এইজ অব লুই, এসে অন দ্য কাস্টমস এ্যান্ড দ্য স্পিরিট অব দ্য নেশনস, জাডিগ ইত্যাদি।
ফরাসি জাতির চিন্তার জগতে তার প্রভাব যেমন আছে, তেমনি আছে তার নিন্দা ও সমালোচনা। ফরাসি উদারনৈতিক, মুক্তমনা, ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তার সৌরভ ছড়াচ্ছেন তিনি আজও।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]barta24.net