
পাঁচি বালার দুই ছেলে রমেন আর সোমেন। সোমেন ছোট রমেন বড়। সোমেন কাজকর্ম তেমন একটা করে না সারাদিন শক্ত বোর্ডের উপর কাগজ রেখে ছবি আঁকে। আর রমেন সারাদিন ইটভাটায় কাজ করে। এ পরিবারের নতুন সদস্য মিনতি। পাশের গ্রামের মেয়ে মিনতি। ফরসা চেহারার মিনতি প্রথম যেদিন এ বাড়িতে পা রাখে সেদিনই পাঁচি নতুন বৌয়ের মুখে কালির দাগ দিয়ে দেয় যাতে নতুন বৌয়ের দিকে কারো নজর না লাগে।
রমেন সকালেই উঠে কাজে চলে যায় আর এদিকে উঠানে বসে সোমেন ক্যানভাসে সারাদিন ছবি আকে। মিনতি এ ঘর ও ঘর ছুটে বেড়ায়। আর লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে সোমেন কী আঁকে। সোমেনও আড়ে আড়ে মিনতিকে দেখে। মিছির মিছির হাসে। পাঁচির রাগে গা জ্বলে। সে মনে মনে বলে,' বউদি হয় তারে দেইখে হাসপি ক্যা? বড় ছওয়ালডা সারাদিন খাটে মইরলো আর ছোটডা কোন কাজ কাম করবিনে খালি সারাদিন কীসব সাতপাঁচ আকপি। আর বউডারই বাকীআক্কেল। বার বারকীদেওরের আশেপাশে ঘুরা লাগে। '
সেদিন মিনতি হাসতে হাসতে সোমেনকে বলে, ' ঠাকুরপো আমার একখানা ফটো আঁকে দিয়েনে তো। '
সোমেন মুচকি মুচকি হেসে বলে, ' বউদি তুমি একদিন লাল শাড়ি পইরেনে তাহলি লাল ক্যানভাসে তোমার লাল টকটকে ছবি আঁকবোনে। এমন দারুণ হবেনে যে এক ক্যানভাসেই আমি পুরষ্কার পাবোনে।'
মিনতি আস্তে আস্তে বলে, ক্যানভাসকী?
: ক্যানভাস হইলো আমি সাদা কাগজে যেই আঁকাআকি কইরি এইডারেই ক্যানভাস কয়। এই ধরো তোমার শরীলে দাদা যদি কামড় দেয় আর যদি দাগ হইয়ে যায় তাহলে তোমার শরীল একটা ক্যানভাস।
: ছি! কী দুষ্টু। বলেই ঘোমটা টেনে খিলখিল করে হাসতে হাসতে দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায় মিনতি।
পাঁচি দূর থেকে দেখে রাগে গজগজ করতে থাকে, ' ঢংয়ে বাচিঁনে বাপু। নতুন বউ এত হাসপি ক্যা?
বাড়ি আসলে রমেনকে কী কী যেন বলে পাঁচি। সেদিন রাতেই মিনতির শরীরে অনেক গুলো দাগ দিয়ে দেয় রমেন। পরদিন সকালে উঠলেই পাঁচি মিনতির শরীরের কালো কালো দাগ গুলো দেখে অনেক খুশি হয়।
মিনতি সোমেনের সামনে যায় না। সোমেন বুঝতে পারে মিনতির শরীরের ক্যানভাসে হয়তো অনেক গুলো দাগ লেগেছে শুধু তার সাথে কথা বলে এজন্য।
দিন যায় মাস যায় মিনতির পেটে বাচ্ছা আসে না। পাঁচি রাগেক্ষোভে জ্বলে। সে মনে মনে বলে, ' এত দিন হইয়ে গেল এট্টা বালবাচ্ছা দিতে পাইরলো না। '
এদিকে মিনতির শরীরে দিন দিন আরও দাগ বেড়ে যায়। পাঁচি দাগ দেখে অনেক খুশি হয়। রমেন সারাদিন ছবি আকার ক্যানভাসের সামনে বসে থাকে কিন্তু কিছু আঁকে না।
মিনতি কয়েক দিন ধরে ধবধবে সাদা একটা শাড়ি পরে। পাঁচি রাগে ক্ষোভে জ্বলে। সে মনে মনে বলে, ' সোয়ামী বাইচে আছে তাও ক্যান সাদা শাড়ি পইরবি। সাদা শাড়ি তো বেধবা হইলি পরে।'
সেদিন অনেক রাতে সোমেন বসে আছে তার ক্যানভাসের সামনে। হঠাৎ ঘরে ঢোকে মিনতি। সাদা শাড়ি রক্তে ভিজে লাল হয়ে গেছে। মিনতি আস্তে আস্তে বলে,' ঠাকুরপো লাল ক্যানভাসে আমার এক খান ফটো আঁক। তুমি কইছিলে লাল কাপড় পইরে আসলি নাকি আমার ফটো আঁকপা। ' সোমেনের বুকের মাঝে ছ্যাৎ করে ওঠে। সে দৌড়ে পাশের ঘরে গিয়ে দেখে বটি দিয়ে রমেনের গলা কাটা।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]