'অনন্যা শীর্ষদশ ২০২১' সম্মাননা পেলেন যারা
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২২, ২৩:২৬
'অনন্যা শীর্ষদশ ২০২১' সম্মাননা পেলেন যারা
শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

দেশের পাক্ষিক ম্যাগাজিন অনন্যা প্রতিবছর বিভিন্ন শাখায় দশ জন আলোচিত ও আলোকিত কৃতী নারীকে সম্মাননা প্রদান করে। এবারও নিজ নিজ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ অনন্যা শীর্ষ ১০ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এবারই প্রথম বিশেষ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ আজীবন সম্মাননা প্রদান হয়েছে একজন বিশিষ্ট নারীকে।


অনন্যা শীর্ষদশ পুরস্কার এর আয়োজনের মাধ্যমে প্রতি বছর বাংলাদেশের নারীদের ম্যাগাজিনটি কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, অর্থনীতি, অভিনয়, সংগীত, ক্রীড়া, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, সমাজকল্যাণ ও উন্নয়ন-আইন-আইন, মানবাধিকার, উদ্যোক্তা, রাজনীতি ও সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে এই সম্মাননা প্রদান করে থাকে। এই ম্যাগাজিনটি ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশের নারীদেরকে তাদের অসামান্য অবদানের জন্য বার্ষিক ভাবে অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা দিয়ে আসছে। ১৯৯৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অনন্যা শীর্ষদশ সম্মানিত করেছে ২৭০ কৃতী নারীকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষা মন্ত্রী ডক্টর দিপু মনি, স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীসহ উল্লেখযোগ্য বহু নারীরা এই পুরস্কারটি গ্রহণ করেছেন।


শনিবার (১৯ নভেম্বর) বিকাল ৪টায় বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ‘অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা ২০২১’ তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও পাক্ষিক অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। এতে সভাপতিত্ব করেন পাক্ষিক অনন্যা ও দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন।


অনন্যা শীর্ষদশ ২০২১ সম্মাননা পেলেন যারা-


মেধার অপূর্ব রোশনাই ছড়ানো নাজনীন আহমেদ ১৯৯০ সালে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসিতে এবং ১৯৮৮ সালে যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসিতে সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে নাজনীন প্রথমে ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ’ (সিপিডি)—তে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট।


বিটপী দাশ চৌধুরী বর্তমানে একটি মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংকের হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স এবং ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিংয়ে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ এবং পরবর্তী সময়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস এবং ফিন্যান্স নিয়ে দেশের বাইরে এমবিএ করেন। তিনি ব্যাংকের মধ্যে নন—ব্যাংকিং কাজ করে থাকেন, যেখানে প্রতিটি দিন আসলে নতুন চ্যালেঞ্জ ও নতুন কর্মপরিকল্পনার।


বাংলাদেশের মঞ্চ অভিনয়ের কিংবদন্তি শিল্পীদ্বয় ফেরদৌসী মজুমদার ও রামেন্দু মজুমদারের কন্যা ত্রপা মজুমদার সুনাম অর্জন করেছেন মঞ্চ অভিনয়ের পাশাপাশি নির্দেশনাতেও। থিয়েটারের ‘পোহালে শর্বরী’ নাটকটিতে বাবা রামেন্দু মজুমদারের সঙ্গে সংযুক্ত নির্দেশনা দিয়েছেন ত্রপা। ইতিপূর্বে তিনি নিদের্শনা দিয়েছেন লালন ফকিরের জীবনী—নাটক ‘বারামখানা’। মার্কিন নাট্যকার লি ব্লেসিংয়ের ‘ইনডিপেনডেন্স’ অবলম্বনে ‘মুক্তি’ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন ত্রপা।


সন্তানের বিপদে মায়েদের মনে যেন বিস্ময়কর শক্তি সঞ্চারিত হয়। এমনই এক কাহিনীর স্রষ্টা ইয়াকুবের মা শাহিনুর আক্তার। তার ছেলে ইয়াকুব লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়ে যান। ছেলেকে উদ্ধারের জন্য কুমিল্লার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে একা লিবিয়ায় ছুটে যান মা শাহিনুর। বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় মাফিয়াদের হাত থেকে ছেলেকে উদ্ধার করে আনেন শাহিনুর আক্তার।


বিজ্ঞানী সালমা সুলতানা বাংলাদেশের গবাদি পশু খাতের প্রথম নারী উদ্যোক্তা, পেশাদার ট্রেইনার ও উন্নয়নকর্মী। ২০২১ সালে সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকীতে ১০০ এশিয়ান বিজ্ঞানীদের তালিকায় তিনি অষ্টম স্থান দখল করেন। সালমা সুলতানা বাংলাদেশে প্রথম বেসরকারি প্রাণিস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা প্রশিক্ষণকেন্দ্র মডেল লাইভস্টক অ্যাডভান্সমেন্ট ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছেন।


বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান স্কলাসটিকা থেকে এ লেভেল শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান জোস স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্র্যাজুয়েশন করেন রুদমীলা নওশীন। পরবর্তী সময়ে মাস্টার্স অব সায়েন্স ইন ডিজিটাল কমিউনিকেশন অ্যান্ড মালটিমিডিয়া বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কনফিগ—ভিআর ও কনফিগ—আরবোটের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও।


চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার মেয়ে শাহরিয়ার ফারজানা আলোকচিত্রে ইতিমধ্যে শতাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার জীবনের দুর্বিষহ সময়ে সবচেয়ে বড় বন্ধু হিসেবে হাজির হয় আলোকচিত্রশিল্প। প্রতি বছরই অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারের বিরল পালক জমা হচ্ছে তার মুকুটে। ফটোগ্রাফি ছাড়াও শাহরিয়ার ফারজানা গত ৯ বছর ধরে ‘নারীকণ্ঠ’ নামের একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশনায় যুক্ত রয়েছেন।


মার্শাল আর্ট কন্যা সান্ত্বনা রানী রায় ২০১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত পাঁচটি আসরে স্বর্ণ জিতে নিজেকে সেরা প্রমাণ করেন। ২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০তম বিশ্ব তায়কোয়নদো প্রতিযোগিতায় তিনি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেন। ২০১৮ থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচটি ঘরোয়া প্রতিযোগিতা ও দুটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পাঁচটি স্বর্ণ এবং একটি করে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছেন।


মোছাম্মত ইছমত আরার বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ীর নন্নী ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়ায়। একদিন বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পরচুলা তৈরির কারখানার সন্ধান পান তিনি। সেখানে ভর্তি হয়ে সেই কাজ রপ্ত করেন। তারপর নিজেই পরচুলা বানানোর কাজ শুরু করেন। এখন বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েক হাজার নারী তার মাধ্যমে কাজ করছেন। ইছমত আরার প্রচেষ্টায় গ্রামের শত শত নারীর দারিদ্র্য ঘুচেছে।


রাঙামাটির মেয়ে জয়া ক্লাস ফোরে পড়ার সময় শিশু একাডেমিতে খেলার মাধ্যমে খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেন। একপর্যায়ে জাতীয় নারী দলে জায়গা পান জয়া। ২০১২ সালে তিনি জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন। রেফারি হিসেবে শুরু করেন নতুন জীবন। ২০১৯ সালে ফিফার রেফারি হওয়ার পরীক্ষায় পাশ করার মাধ্যমে তিনি অর্জন করেন বাংলাদেশের প্রথম ফিফা নারী রেফারি হওয়ার বিরল গৌরব।


আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন ‘কারুশিল্পী’ সরত মালা চাকমা।


রাঙ্গামাটির তবলছড়ির মাস্টার কলোনিতে ৯০ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেন সরত মালা চাকমা। সাত বছর বয়সে তার কারুশিল্পে হাতেখড়ি হয়। সরত মালা সারা জীবনে দেশ বিদেশ থেকে জিতেছেন অসংখ্য পুরস্কার। ২০১৬ সালে উইভার্স ফেস্টিভ্যালে তাকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। এখন তার একটি চোখ খারাপ, আরেকটি ভালো চোখ নিয়েই তিনি এখনো সেলাইয়ের কাজ করেন।


‘অনন্যা শীর্ষদশ ২০২১’- এর সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক অনন্যার সম্পাদক তাসমিমা হোসেন।


ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, নারীরা নিরন্তর প্রচেষ্টা, অদম্য সাহস, অমিত প্রতিভা ও দক্ষতার বলেই সমাজে তাদের অবস্থান অধিকার করে নেয়। তারা তাদের যোগ্যতাবলেই বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে। নারীর শক্তিতেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।


তিনি আরো বলেন, নারীদের ধৈর্য, পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং শত বাঁধা অতিক্রম করে সফল হবার স্পৃহার কারণেই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে। তিনি আরও বলেন, নারীরা নূন্যতম স্বীকৃতি ছাড়াই নিরবে কাজ করে যায়। পরিবার রক্ষায়, সমাজ বিনির্মানে ও জাতি গঠনে নারীদের ভূমিকাকে সম্মান জানানো উচিত। এসময় তিনি ‘অনন্যা শীর্ষদশ ২০২১’ প্রদানের মাধ্যমে অগ্রসর নারীদের সম্মান জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানান।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)

১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,

বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com