শিরোনাম
শেষ দীর্ঘশ্বাসের গল্প
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২০, ১৭:০৯
শেষ দীর্ঘশ্বাসের গল্প
নোমান শামীম
প্রিন্ট অ-অ+

কিরকম ছিলো তোমার শেষ দীর্ঘশ্বাস?


ঘাতকের বুলেট ভেদ করেছে তোমার হিমালয় বুক


সেখান থেকে ফিনকি ফিনকি রক্তজবারা ছড়িয়েছে,


হাত থেকে একটু দূরে প্রিয় পাইপ পড়ে গেছে,


ছন্নছাড়া, ৩২এর সিঁড়ির মাথায়, সেই অভিশপ্ত ভোরে


কেমন ছিলো তোমার শেষ দীর্ঘশ্বাস?


সিঁড়ির ওইপাশে প্রিয়তমা স্ত্রীর শেষ চিৎকার,


আমি বাঁচতে চাই না, তোমরা আমাকেও মেরে রেখে যাও -


আহ, রেনু, এখনো এতো ভালোবাসো আমায়,


সেই অল্প কিশোরী বেলায় বেলীফুলের সুবাসে জড়ানো


তোমার খেলার ঘর, সেই ঘরে এই বাংলার বসবাস,


৩২ নম্বর, তোমার জন্যই বাংলার শেষ ঠিকানা,


নাকি তোমার শেষ দীর্ঘশ্বাসে দেখতে চেয়েছিলে


কদম ফোঁটা বৃষ্টির থোকা থোকা ফুলের গন্ধ,


হাতের আজলায় নিতে চেয়েছিলে নদীর টলমলে ঢেউ,


সে কি মুজিবের কথা বলতো?


নাকি মনে পড়েছিলো, কামালের কথা, নবপরিণীতা বউমা,


অনেকদিন পর শেখ বাড়ীতে নতুন কুটুম, তোরা কেউ


উচ্ছাস করছিস না কেনো?


মনি কই? আরজু?


নাকি, হাসুর কথা মনে পড়েছিলো, রেহানার অভিমানী


কান্না, নাকি শেষ দীর্ঘশ্বাসে তুমি হাঁটু ডুবিয়ে একদিন


কাদামাটির সুবাস নিতে চেয়েছিলে,


প্রাণভরে একবার সর্ষে ক্ষেতে বুক ভরে নিতে চেয়েছিলে


এক একটা গোধুলীর নিমগ্ন সূর্যালোক?


কেমন ছিলো তোমার শেষ দীর্ঘশ্বাস পিতা?


তুমি কি ক্লান্ত চোখে খুঁজে ফিরছিলে তোমার জামাল,


তোমার প্রিয় রাসেলকে? ওরা ঠিক আছে তো? আচ্ছা, বাগানের


গাছগুলো, প্রিয় কবুতরগুলোর কিছু হয়নি তো?


ওরা কি ট্যাঙ্ক চালিয়ে এসেছে, এই কিছুদিন আগেই


রাস্তাগুলো ঠিক করা হলো, নষ্ট হলে আবার অনেক খরচ,


নাকি ভোরের বাতাসে শুনেছিলে, 'শোনো একটি মুজিবুরের থেকে',


নাকি শেষ তন্দ্রায় যেতে যেতে, তোমার দীর্ঘশ্বাস ছড়িয়ে গিয়েছিলো বাংলার প্রতিটা ঘাসের ডগায়, পাখির ঠোটে, মাঝির মুখে মুখে,


এক লহমায় একটা ভুখন্ডকে নিস্তব্ধ শ্রান্ত করে দিয়েছিলো


তোমার শেষ দীর্ঘশ্বাস, বলেছিলাম কিনা,


তোমরা মুজিবকে হত্যা করতে পারবা না।


কেমন ছিলো তোমার শেষ দীর্ঘশ্বাস?


'আসসালাতু খাইরুল মিনাল নাউম'


'আসসালাতু খাইরুল মিনাল নাউম',


ঢাকা শহর, এতো কান্না জড়িত সকাল আর দেখেনি,


এতো কষ্টের জমীনে তোমার দীর্ঘশ্বাস নিয়ে


ঢাকা শহর কোনোদিনও শোনেনি,


'আসসালাতু খাইরুল মিনাল নাউম'।


সেদিন যায়নামাজে যায়নামাজে তোমার দীর্ঘশ্বাস


ঘুরে বেড়িয়েছিলো পিতা।


আজো এই কৃষ্ণচূড়া, এই গোলাপের থোকা, এই পিচ ঢালা পথ,


এই বৃষ্টির বেলা, এই সব সীমানা ডিঙ্গানো ক্ষেতের জমীন,


বাউলের কন্ঠ, মোয়াজ্জীনের আযান, কবিদের লড়াই,


এই কাঁসার ঘন্টা, এই নদীর ঢেউ, বেলা-অবেলার গান,


তোমার শেষ নিঃস্বাসের কথাই বলে,


তারা আজো মুজিবের শেষ দীর্ঘশ্বাসের কথাই বলে।


কবি: অস্ট্রেলিয়া যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।


বিবার্তা/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com