শিরোনাম
কর্মজীবী নারীর সাজগোজ
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০১৯, ১৬:৫৭
কর্মজীবী নারীর সাজগোজ
মডেল: জাকিয়া ইমি
শাহনাজ শারমিন
প্রিন্ট অ-অ+

‘‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’’ - কাজী নজরুল ইসলাম। কবির কথাটি যথার্থ বলেই আমরা মানি। তবে সম্মান আর মর্যাদা দানের দৃষ্টিতে মমতার কাছে হারতে হয় পুরুষদের, সেজন্যই সমাজের সম্মান আর মর্যাদা নারীদের জন্যই রক্ষিত।


পৃথিবীতে নর এবং নারী একে অপরের পরিপূরক সত্তা। নারী এবং পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সৃষ্টি হয়েছে সমাজ ব্যবস্থা। সুতরাং সমাজে নারী এবং পুরুষের অবদান সমভাবে বিদ্যমান। যেকোনো দেশের উন্নয়নের গতিধারায় সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বলয়ের বিভিন্ন সূচকে অর্ধাংশ নারীও সমানতালে ভূমিকা রেখে চলেছে।


মডেল: জাকিয়া ইমি


দিনবদলের পালে হাওয়া লেগেছে। কেউ কেউ হয়তো বদলেছেন। ইতিবাচকভাবে দেখছেন সব কিছু। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের দেশের মানুষ ঘরের কাজ-রান্নাঘরের কাজ বলতেই নারীর কাজ বোঝান। পরিবার, কর্মক্ষেত্রে, সমাজ সর্বত্রই নারীর জন্য চ্যালেঞ্জ একটু বেশি। কর্মজীবী নারীর চ্যালেঞ্জটা যেন একটু বেশি। সংসার-সন্তান সামলে কর্মক্ষেত্রকেও দিতে হয় সমান গুরুত্ব। কর্মজীবী নারী শব্দটি শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে একজন ব্যস্ত ও দায়িত্বশীল এক নারীর চেহারা।


কর্মজীবী নারীদের অনেক কিছু সামলাতে হয়। অফিস, পরিবার থেকে শুরু করে অনেক সময়ই রাতে ঘুমোতে ঘুমোতে দেরি হয়ে যায়। আবার সকালে অফিস। ঘুম থেকে উঠে অনেকেরই অফিসে যাবার তাড়াহুড়ো থাকে, কিন্তু এই স্বল্প সময়েও কিন্তু একটু বুদ্ধি আর কৌশল খাটালে ঝটপট সাজগোজ করে রেডি হওয়া সম্ভব।


ব্যস্ত কর্মজীবী নারীরা যারা ঘরে-বাইরে সব জায়গাতেই নিজের পূর্ণ ডেডিকেশন দিয়েও নিজেকে নিজের জন্য সুন্দর দেখতে চান, তারা পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করতে পারেন। এতে করে দ্রুতই হয়ে যাবে আপনার সাজগোজ।


মূলত অফিসে কাজটাই মুখ্য, সেখানে পোশাকের দিকে অতটা নজর না দিলেও চলে —এমন ধারণা বর্তমান যুগে অচল। কর্মজীবী নারীদের ব্যস্ততা তুলনামূলক একটু বেশিই থাকে। তাই নিজেদের সাজ-পোশাকের দিকে নজর দেয়ার জন্য যথেষ্ট সময় তাদের অনেক সময়ই মেলে না। তবে দিনের বেশিরভাগ সময় যেহেতু অফিসেই কাটাতে হয়, সেক্ষেত্রে সাজ-পোশাকের দিকে নজর দিতেই হবে। ফ্যাশন, রুচিশীলতা- সবকিছু যাতে একসঙ্গে ফুটে ওঠে, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। স্মার্ট, পরিচ্ছন্ন গেটআপ আপনাকে করে আত্মবিশ্বাসী, যা অফিসের কাজেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।


পোশাক: লা রিভ


রাতের প্রস্তুতি


পরিষ্কার কটনপ্যাড / তুলোর বল / সফট ফেস্যিয়াল টিস্যুতে নারকেল তেল লাগিয়ে আস্তে আস্তে পুরো মুখ আর গলা ভালো করে মুছে নিন। এতে করে স্কিনের কোনরকম ক্ষতি ছাড়াই সব মেকআপ, অথবা যারা মেকআপ করেন না, সবারই স্কিন পরিষ্কার হয়ে যাবে। নারকেল তেল খুবই সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য, সেই সাথে ভীষণ স্কিন ফ্রেন্ডলি। এরপর নিজের স্কিন এবং বাজেট অনুযায়ী ভালো মানের কোন ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ এবং গলা ভালো করে ধুয়ে নিন, আলতো করে মুখ মুছে টোনার লাগিয়ে মিনিট পাঁচেক অপেক্ষা করুন। তারপর ভালো মানের কোন নাইট ক্রিম, বা রেগুলার ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। ড্রাই স্কিন হলে কয়েক ফোঁটা এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল আর আরগান অয়েল মিক্স করে লাগাতে পারেন, আর অয়েলি স্কিনের জন্য অ্যালোভেরা জেলই যথেষ্ট।


চুলটা সম্ভব হলে সন্ধ্যায় তেল লাগিয়ে আধঘণ্টা রেখে রাতেই শ্যাম্পু কররে ধুয়ে, শুকিয়ে আলতো করে বেঁধে নিন, এতে করে সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনার চুল ধোয়ার দুশ্চিন্তা থাকবে না, আর হেয়ার ব্রেকেজ ও কম হবে। ভাবছেন রাতেরবেলা এত ক্লান্ত লাগে, এতকিছু করার সময় কোথায়? বিশ্বাস করুন, এই সবকিছু করতে আপনার সর্বসাকুল্যে ১০ মিনিট সময় লাগবে। নিজের ভালো লাগার জন্য ১০ মিনিট সময় বের করতে পারবেন না?


ক্লিঞ্জিং ও ময়েশ্চারাইজিং


সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করে মাউথওয়াশ দিয়ে ভালো করে কুলি করে নিন। এ কাজটা কিন্তু অনেকেই করেন না, কিন্তু শুধু ব্রাশ করলে কিন্তু নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ অনেক সময়ই যায় না। তাই মাউথওয়াশ দিয়ে কুলি করাটা জরুরী। এরপর আবারও ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন, টোনার লাগিয়ে মিনিট পাঁচেক অপেক্ষা করে হালকা কোন ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।


পোশাক: লা রিভ


সাজগোজ


সবচেয়ে প্রিয়, এবং অনেকের কাছেই ঝামেলাকর মনে হওয়া সাজগোজের ধাপটায়। আপনার স্কিনে যদি খুব বেশি দাগ, চোখের নিচের কালো দাগ, পিম্পল না থাকে, তাহলে বিবি ক্রিম আপনার জন্য পারফেক্ট। অথবা আপনি চাইলে এক ফোঁটা ফাউন্ডেশনের সাথে বেশ খানিকটা আপনার রেগুলার ময়েশ্চারাইজার আপনার হাতের তালুতেই ভালো করে মিক্স করে পুরো মুখে আর গলায় লাগিয়ে নিন, এতে করে আপনার আলাদা করে বিবি ক্রিম কেনার দরকার নেই, ঐটাই আপনার টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করবে। একটা ভেজা বিউটি ব্লেন্ডার দিয়ে চেপে চেপে পুরো মুখে জিনিসটা সেট করে নিন। যদি খুব বেশি ডার্ক সার্কেল এবং দাগ-টাগ থাকে, তাহলে কন্সিলার লাগিয়ে নিন এবং সেটা আঙ্গুলের ডগা দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন।


চাইলে এটা ভেজা বিউটি ব্লেন্ডার দিয়ে চেপে চেপে সেট করে নিতে পারেন। এবার পুরো মুখ আর গলায় কম্প্যাক্ট পাউডার বুলিয়ে নিন। চাইলে এক্ষেত্রে লুজ পাউডার ও ব্যবহার করতে পারেন। এরপর আপনার দরকার একটুখানি কাজল / আইলাইনার, যদি মন চায় তবে মাশকারা, আর ঠোঁটে একটু লিপস্টিক। ব্যস আপনি অফিসের জন্য রেডি!


আপনার সাজ-পোশাকও যখন ব্যক্তিত্বের মাপকাঠি হয়ে ওঠে, তখন প্রয়োজন এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা। প্রতিদিন কী পোশাক পরে কাজে যোগ দেবেন, সেটার উপর চিন্তা করে বা আপনার অফিসের ধরন বুঝে তারপর সিদ্ধান্ত নিন।


শাড়িতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করলে ফরমাল ফুলস্লিভ সালোয়ার-কামিজ পরতে পারেন অথবা বিজনেস স্যুটেও মেয়েদের বেশ মানিয়ে যায়। কী ধরনের গহনা, জুতা বা ব্যাগ ব্যবহার করবেন তা নিয়েও ভাবনা-চিন্তার প্রয়োজন আছে।


কর্মক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করার জন্য কর্মদক্ষতার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন এক সুন্দর পরিশীলিত ব্যক্তিত্বের উপস্থাপনা। অফিসে কম সময়ে নিখুঁত কাজ করার ক্ষমতা ছাড়াও আরও যে জিনিসটা সবাই লক্ষ করেন তা হলো আপনার ড্রেস সেন্স। তাই সে দিকে লক্ষ রাখাটা একান্ত কর্তব্য।


পোশাক: লা রিভ


অফিসের সাজ সবসময়ই হালকা হওয়া উচিত। অফিসের সাজের ক্ষেত্রে মুখে হালকা ফাউন্ডেশন এবং ফেসপাউডার ব্যবহার করলে ভালো লাগবে। চোখে মাশকারা, কাজল বা আই লাইনার আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগালেই আপনার অফিসের সাজ পূর্ণতা পাবে। সুগন্ধি ব্যবহার করতে ভুলবেন না। ভালো কোনো ব্রান্ডের ডিউডোরেন্ট বা পারফিউম ব্যবহার করুন।


অফিসে গহনা পরার ক্ষেত্রে ছোট ছোট গহনা পরা ভালো। জুতা এবং ব্যাগের রঙ কাছাকাছি শেডের মধ্যে বাছাই করলে দেখতে দারুণ লাগবে। ল্যাপটপ বহন করতে হলে বড় ব্যাগ বাছাই করুন যেন ল্যাপটপের সঙ্গে অন্যান্য জিনিসও অনায়াসে নেয়া যায়।


পোশাক এবং ব্যাগের মতো দৃশ্যমান না হলেও স্যান্ডেলও কিন্তু ফ্যাশনের বাইরে নয়। অফিসে যাওয়ার জন্য এমন জুতা পছন্দ করা উচিত যা পরলে হাঁটা আরামদায়ক হয়। সেই সঙ্গে এর ফ্যাশনটাও বজায় থাকে। শব্দ সৃষ্টি করে এমন জুতো পরিহার করুন।অফিসে কাজের ফরমাল পরিবেশে হিলের খটখট শব্দ খুব একটা শোভন নয়।


কর্মজীবী মানেই অনবরত কাজ করে যাওয়া নয়। তাই যতো ব্যস্তই থাকুন না কেন প্রতিদিন নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করে নিজের যত্ন নিন। আপনি সুস্থ ও সুন্দর থাকলেই পরিবার ও সমাজ থাকবে সুন্দর।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com