আজকের শিশুরা আগামী দিনের দেশ, সমাজ, জাতির ভবিষ্যত। বাবা-মায়ের কাছে সন্তানের চেয়ে বড় আর কিছুই হতে পারে না। তাদের ঘিরেই তো সমস্ত পরিকল্পনা, সব স্বপ্ন। কিন্তু এই সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে তোলা চাট্টিখানি কথা নয়!
সন্তানকে মানুষ করা একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অবশ্যই কঠিন কর্তব্য। সবসময় মা বাবারা চান তাদের ছেলে মেয়ে সবার থেকে বেশি উন্নতি করুক এবং তাদের সন্তান যেন সবার থেকে আগে থাকে। এই চাওয়াতে কোনো ভুল নেই। কিন্তু এই প্রতিযোগিতামূলক চিন্তা ভাবনার জন্য প্রায়ই বাচ্চারা ভুল করলে তাদের মারধর করা হয়।
বেল্ট দিয়ে মারা
সন্তানকে কখনোই বেল্ট দিয়ে মারা দিয়ে মারবেন না। অত্যাধিক বকা ঝকা বা মারধর কিন্তু আপনার সন্তানের মানসিক বিকাশের প্রচন্ড অবনতি ঘটায়। আজ আমরা সন্তানদের বকা এবং তাদের মানসিক বিকাশের অবনতি নিয়েই আলোচনা করব।
শিশু মনের অবনতি
গত ১০-২০ বছরের মধ্যে অনেক গবেষণা করা হয়েছে শিশু মনোবিজ্ঞান নিয়ে। এই গবেষণা এবং পরীক্ষার ফল স্বরূপ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও জানা গিয়েছে। সন্তানদের মারধর করা কিন্তু তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রচন্ড চাপ ফেলে। এখনকার দিনের শিশুরা অনেক বুদ্ধিমান। তারা মা-বাবার হাতে মার খাওয়া একদমই ভালো চোখে নেয় না। বেশি শাসন তাদের মা-বাবার থেকে দুরে সরিয়ে দেয়।
শিশুরা ভুল করলে অবশ্যই মা-বাবারা সন্তানদের সঠিক পথে নিয়ে আসবেন কিন্তু মারধর করে ঠিক পথে নিয়ে আসা একদম কাম্য না। তাদের ঠিক পথে নিয়ে আসতে হলে তাদের ভালো করে বোঝানো দরকার যে সে যেটা করছে কেন সেটা ঠিক পদ্ধতি কিনা।
সন্তানের সাথে কথা বলুন
আপনি আপনার সন্তানের সঙ্গে যতটা সম্ভব বেশি বেশি কথা বলুন। তার সঙ্গে শেয়ার করুন অনেক কথাই, যেন সে আপনাকে বন্ধু মনে করে এবং অনায়াসে তার আনন্দ, ভয়, কৌতুহল সবকিছুই আপনার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারে।
সন্তানদের ভালোভাবে বোঝান
ভুল করলে তাদের মারধর না করে তাদের ভুল থেকেই শিক্ষা দেয়া উচিত। সন্তানদের ভালো এবং খারাপের মধ্যে পার্থক্য শেখানো উচিত। তারপর তাদের নিজেকে নির্ণয় করতে দেওয়া উচিত যে তারা কোন পথ বেছে নিতে চায়। কিন্তু সবসময় যদি বাবা মা-বাবার ইচ্ছাগুলি বকাবকি করে চাপিয়ে দেয়া হয় তাহলে শিশুরা নিজেদের নির্ণয় করার গুরুত্ব বুঝবে না। শিশুদের নিজেদের নির্ণয় নেয়া শেখানো উচিত। যাতে তারা ছোট জিনিসের নির্ণয় করে আস্তে আস্তে ভালো এবং খারাপের মধ্যে পার্থক্যটি বোঝে।
ব্রেনে প্রভাব
শিশুদের ব্রেন পুরোপুরি বিকশিত নাহলেও তারা কিন্তু তাদের মা-বাবার স্নেহ বুঝতে পারে। আজকালকার ব্যাস্ত জীবনে অনেকেই সন্তানদের একা ছেড়ে দিয়ে কাজে চলে যান। এইভাবে শিশুরা একাকিত্বে ভোগে। তার ফলে শিশুরা ক্ষিপ্ত এবং ঘ্যান ঘ্যানে হয়ে ওঠে।
একাকীত্ব
চাকরিতে কঠিন পরিশ্রমের পর বাড়ি আসার পর শিশুরা জেদ করলে তাদের খুব বকাঝকা করেন অভিভাবকরা। ছোট শিশুদের সময় দেয়া কিন্তু খুবই জরুরি। শিশুরা একাকিত্বে ভুগলে তাদের মধ্যে একটা ধারণা আসে যে তাদের মা বাবা তাদের সাথে নেই এবং তাদের সব কিছু একাই করতে হবে।
তারপর মা-বাবারা বাড়ি আসার পরও যদি তাদের মার খেতে হয় তাহলে তারা আরো একা হয়ে যায়। এই পরিস্থিতি যাতে না আসে সেইজন্য অবশ্যই প্রয়োজন যে বাবা মা রা যেন তাদের সন্তানদের সঙ্গে যতটা পারা যায় সময় কাটায়।
আত্মবিশ্বাস হারায়
মা বাবারা অনেক সময় তাদের নৈরাশা তাদের সন্তানদের উপর চিৎকার করে বের করেন। এর ফলে কিন্তু শিশুদের মানসিক বিকাশের অবনতি ঘটে এবং শিশুরা তাদের মা বাবাকে ভয় পেতে শুরু করে। বাচ্চারা নিজেদের আত্ববিশ্বাস এবং আস্থাও হারায়। তারা আস্তে আস্তে নিজেদের মধ্যেই গুটিয়ে যায়। শিশুদের মানষিকভাবে দুর্বল করে তোলে এবং বড় হয়ে উঠলে তারা কারোর উপর বিশ্বাস করতে ব্যর্থ হয়।
শিশুরা কোনো ভুল করলে তাদের শাস্তি দেয়া দরকার কিন্তু সেই শাস্তি কিন্তু কোনো দিনই মারধর হতে পারে না। তাদের ছোট কোনো শাস্তি যা নিজেদের ভুল ঠিক করে নিতে শেখাবে বা অন্যদের উপকার করার মতো কাজ দিতে হবে যাতে তারা নিজেদের ভুল থেকে শেখে।
শিশুরা তাদের মা বাবার কাছ থেকেই শেখে। তাই শিশুদের কিছু বলার আগে অভিভাবকদের সেটা মেনে চলতে হবে এবং তারপর শান্তিতে ভালো করে শিশুদের তাদের ভুলটি বোঝাতে হবে। এইভাবে আমরা শিশুদের মানুষ করলে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়বে, তারা মা-বাবাকে ভালোবাসতে এবং বিশ্বাস করতে শিখবে, ঠিক নির্ণয় করতে শিখবে এবং এইভাবে তাদের মানষিক বিকাশের উন্নতি ঘটবে।
বিবার্তা/শারমিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]