শিরোনাম
ব্যর্থতা কাটিয়ে জীবনে সফলতার পরামর্শ বিখ্যাত নারীদের
প্রকাশ : ২৯ মে ২০১৯, ১৫:৫৮
ব্যর্থতা কাটিয়ে জীবনে সফলতার পরামর্শ বিখ্যাত নারীদের
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ এই নিয়ে আমাদের জীবন। পৃথিবীর শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়। কিন্তু কেন তারা প্রথমে সফল হতে পারেন না? কারণ হল, জীবনের লক্ষ্য ঠিক না রাখা। ফলে সফলতার মুখ দেখতে হলে তাদের অনেক কঠিন সময় পার করতে হয়।


প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের এই ক্ষমতার অভাব আছে। তাই তারা জীবনে সাম্যতা আনতে পারেন না। যা তাদের ব্যর্থতার আরো একটি কারণ।


জীবনের লক্ষ্য ঠিক না থাকলে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়। আর এই অনিশ্চয়তা আপনার সাফল্যে বাঁধা সৃষ্টি করে। তাই আপনি জীবনে কি অর্জন করতে চান তার একটি পরিস্কার ধারণা পেতে চাইলে, প্রথমেই আপনাকে আপনার জীবনের লক্ষ্য ঠিক করতে হবে।


সাফল্য লাভের জন্য নিত্য নতুন উপায় বের করতেই কেটে যায় জীবনের অনেকটা সময়। অথচ, এর উপায় আছে আমাদের নিজেদের হাতেই। সেলফ মোটিভেশনের মাধ্যমে নিজেদের সফলতার রাস্তা নিজেরাই তৈরি করতে পারি আমরা।


বিল গেটস বিশ্বের অন্যতম সফল একজন ব্যক্তি। তিনি বলেন, জীবনের সাফল্যে আনন্দ করা ভালো। কিন্তু ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেয়া অধিক গুরুত্বপূর্ণ।


অগোছালো জীবন যাপন


জীবনে সফল হতে হলে গোছানো থাকা গুরুত্বপূর্ণ। সাফল্য অর্জন করতে হলে আপনার জীবন, চিন্তাভাবনা এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক রাখা প্রয়োজন। এটা ঠিক যে, সবার মধ্যে গোছানো জীবনযাপন করার ক্ষমতা থাকে না।


সফল হবার জন্য পরিকল্পনা জরুরী


সফল হওয়া সহজ কাজ নয়। নারী বা পুরুষ যেকোন মানুষের জন্যই কঠিন কাজ সেটি। একজন নারীর জন্য সেটা আরো কঠিন। কিন্তু সফল আর জ্ঞানী হিসেবে পরিচিত বিশ্বের কয়েকজন বিখ্যাত নারী বলছেন জীবনে কয়েকটি মূলমন্ত্র অনুসরণ করতে পারলে তা যে কাউকে সফল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করবে।


১. সবার আগে নিজেকে গুরুত্ব দিন


জীবনের যে ক্ষেত্রেই আপনি সফল হতে চান, আপনাকে নিজের যত্ন নিতে শিখতে হবে। যদি আপনি নিজেকে সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দিতে না পারেন, তাহলে আপনি জীবনের ভারসাম্য খুঁজে পাবেন না। এক্ষেত্রে নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে বলছেন নামকরা অভিনেত্রী এমা থম্পসন।


সফল হতে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী জরুরী


এরপরই আসবে আপনার সবচাইতে কাছের মানুষেরা, মানে পরিবার ও ঘনিষ্ঠ মানুষেরা। তাদের জীবনের দৈনন্দিন খবরাখবর রাখুন। যদিও প্রতিদিন এ কাজটি করা কঠিন, তবু চেষ্টা করুন। এর পর শুরু করুন নিজের কাজ।


সামনে এগিয়ে যাওয়া থামাবেন না


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির অসউইজ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে ফিরে আসা মনোবিজ্ঞানী এডিথ এজের নিজেকে সবসময় পর্বতারোহী মনে করেন।


‘একজন পর্বতারোহী যখন ওপরে উঠতে থাকেন, তিনি পিছলে পড়েন, দুই তিন ধাপ নিচে নেমে যান। কিন্তু ওপরে ওঠা থামান না তিনি। তিনি বলেন, আমি সেরকমভাবেই পিছলে পড়ি কিন্তু ওপরে ওঠা থামাই না আমি, কোনোদিন থামাবো না।’


৬০ ও ৭০ এর দশকে পশ্চিমা দেশগুলোতে নারীরা কাজ করেছেন পোশাক কারখানায়। অসউইজ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে এডিথের বাবা মায়ের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল, তিনি বেঁচে যান। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন এবং মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করেন।


তিনি বলেন, ‘মানুষ আমাকে মারতে পারবে, অত্যাচার চালাতে পারবে। কিন্তু আমার আত্মা আর এগিয়ে যাবার চেতনা কেউ শেষ করে দিতে পারবে না।’


৩. অন্যরা কী ভাবছে তা ভাবার দরকার নেই


বিখ্যাত কমেডিয়ান এবং লেখক জো ব্রান্ড বলছেন, অন্যরা আপনার সম্পর্কে কী পাত্তা দেবার অত দরকার নেই। কারণ নিজের সম্পর্কে আপনার যে ধারণা তা অন্যের অনুমোদনের ছাড়াই আপনি বিশ্বাস করতে পারেন।


‘আমি ভাবি না অন্যেরা আমার সম্পর্কে কী ভাবছে। আমি আমার নিজের চেহারা পছন্দ করি, কিন্তু আরো বহু মানুষ তা পছন্দ করে না বলেই মনে হয়। আমি বিশ্বাস করতে শিখেছি, আমাকে কেমন দেখায় সেটা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার বন্ধু বা যারা আমাকে ভালোবাসে তাদের কাছেও সেটা ততটা বড় ব্যপার না। এটা মনে রাখা জরুরী বলে আমি মনে করি।’


৪. দৃষ্টিভঙ্গি বদলান


অনেক সময়ই কোনো খারাপ মুহূর্তে আমরা মনে করি আমাদের কবর হয়ে গেছে, বা আমরা ডুবেছি। কিন্তু সেটা অন্যভাবে ভাবা যায়, যেমন আমরা ভাবতে পারি নতুন কোন কিছুর বীজ বোনা হয়েছে।


অভিনেত্রী কেলেসি ওকাফর বলছেন, আমার স্থির বিশ্বাস, আপনাকে আসলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনি নিজের জীবন বা সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কেমন মনোভাব পোষণ করেন। ইতিবাচকভাবে দেখার অভ্যাস করা দরকার আমাদের।’


দৃষ্টিভঙ্গি বদলিয়ে ইতিবাচক হিসেবে দেখুন ব্যর্থতাকে। ডুবে যাওয়া বা বীজ বোনা---দুটোই কিন্তু মাটি বা পানির নিচে হচ্ছে।


কিন্তু দুই ক্ষেত্রে দুই রকম মানে হয়, একটায় অত্যন্ত নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পায়। অন্যটায় ইতিবাচক একটা মনোভাব বোঝা যায়, যা আপনার চিন্তা প্রক্রিয়ায় ছাপ ফেলে। আমার জীবনে এমন অনেক মুহূর্তআছে যখন আমার মনে হয়েছে আমি মরে গেছি, কিন্তু সেসব মুহূর্তেই আবার আমি নতুন করে সব শুরু করেছি।’


৫. ইতিবাচক মানুষের চারপাশে থাকুন


বিপণন গুরু বলে পরিচিত মেরি পোরটাস বলছেন, ‘কারো চারপাশে যদি ইতিবাচক মানুষ সব সময় থাকে, তাহলে নিজের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা কিংবা ব্যর্থতা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত থাকার কথা নয় তার। আমার এজেন্সিতে আমরা এমন মানুষ নিয়োগ দেই, যারা আলো ছড়ান চারপাশে, যারা অন্যকে হীনমন্যতায় ডুবিয়ে দেন তাদের নয়।’


তিনি বলছেন, ‘যারা সব সময় সব পরিস্থিতিতে ইতিবাচক থাকেন, সব কাজ 'পারব' বলে রাজি হয়ে যান ও সেটা পাবার জন্য নিজের সেরাটা দেন এমন মানুষ পছন্দ আমাদের।’


‘যারা নিজেরা এনার্জিতে ভরপুর থাকেন, তারা অন্যকেও উৎসাহ দিতে পারেন। যদি উন্নতি করতে চান, তাহলে যারা মনমরা থাকেন বা অহমপূর্ণ আচরণ করেন তাদের থেকে দূরে থাকুন।’


৬. মাথা খাটান


একটি স্থির মন আপনাকে নতুন অভ্যাস তৈরি করতে এবং অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি ও উন্নত করতে বিরত রাখে। ফলে এটি আপনার সাফল্য অর্জনের পথ বন্ধ করে দেয়। এবং জীবনের প্রথম ধাপেই আপনাকে ব্যর্থতার দিকে নিয়ে যায়।


অসউইজ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে ফিরে আসা মনোবিজ্ঞানী এডিথ এজের বলেন, যেকোন পরিস্থিতিতে নিজের বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করুন। আমার মা বলতেন আমরা কোথায় যাব জানি না, আমাদের জীবনে কী ঘটবে আমরা জানি না।


কিন্তু আমাদের মাথার ভেতরে কী আছে সেটা যেমন অন্যরা জানে না, তেমনি সেটা কেউ ছিনিয়ে নিতেও পারবে না। আমি অ্যামেরিকায় এসেছি শূন্য হাতে, ইংরেজি জানতাম না। কিন্তু দেখুন আমি এই দেশের একটি নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স নিয়ে স্নাতক পাস করেছি। আমি সবাইকে বলি মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি তার মাথা খাটানোর ক্ষমতা।


৭. নিজেকে মাঝে-মধ্যে ছুটি দিন


মার্কিন লেখক মেশেল লোরি বলছেন, একজন মানুষ সব সময় একই রকমভাবে সফল হবে না, সেটা সম্ভব নয়। আর সফল না হতে পারলে মুষড়ে পড়ার কিছু নেই। আমাদের সব সময় শেখানো হয় আমাদের সবকিছু পারতে হবে। আমাদের সব সময় সৃষ্টিশীল হতে হবে। কিন্তু আমাদের তো বিশ্রাম আর নতুন করে ভাবার জন্যেও সময় চাই।


নিজের ভেতরকার শূণ্যতা পূরণের জন্য সময় দরকার একজন মানুষের, সেই সাথে নিজের কাজকর্ম মূল্যায়নের জন্যেও তো অবসর লাগে।


সেটা দিনের শেষে পাঁচ মিনিট সময় হতে পারে, আলাদা করে ভাবুন সারাদিনে কী কী কাজ করলেন, কেমন ভাবে করলেন, আরো ভালোভাবে কিভাবে করা যেত। এই সময়ে ফোন ঘাটা বাদ দিয়ে, টিভি না দেখে কেবলই নিজেকে কিছুটা সময় দিন।


৮. ব্যর্থতা জীবনের শেষ কথা নয়


কোন কাজে ব্যর্থ হলে ভাববেন না আপনার জীবন শেষ। বরং ভাবুন এটা আপনার জীবনের একটা 'কমা' মানে স্বল্প বিরতি, ফুলস্টপ' বা শেষ নয়।


চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব লিলি কলিন্স বলছেন, আমি সব সময় নিজেকে বলি, কোনকিছু 'নেতিবাচক' হওয়া মানে সেটা 'না' হয়, বরং সেটা হচ্ছে 'এখন নয়'। এখন বা এই মুহূর্তে হয়নি বা হওয়ার সম্ভাবনা নেই এমন কিছু কাল হবে না, তার কোন মানে নেই।


পৃথিবীর অধিকাংশ সফল ব্যক্তিরা কখনোই একবারে সফল হন নি। তারা জীবনে বহুবার ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু এই ব্যর্থতা তাদের স্বপ্ন পূরণ করার লক্ষ্যে কখনোই বাঁধা হতে পারেনি।


একজন হতাশাগ্রস্থ মানুষ কখনো সফল হতে পারে না। কারণ তারা নিজেও হতাশ থাকে এবং তাদের চারপাশের মানুষের জন্যও একটি নেতিবাচক ও বিব্রতকর পরিবেশ সৃষ্টি করে তোলে।


আপনার দুর্বলতা আপনার অক্ষমতা নয়। আসলে আপনি পারেন আপনার এই দুর্বলতা কাটিয়ে সে কাজে আরো দক্ষ হয়ে উঠতে। আপনার দুর্বলতা জীবনে ভালো জিনিসগুলো অর্জন করা থেকে আপনাকে বিরত রাখে।


তবে মনে আশা এবং বিশ্বাস থাকলে প্রত্যেকের জীবনেই চমৎকার কিছু ঘটতে পারে। এই বিশ্বাস আপনাকে প্রত্যেক পরিস্থিতিতে একটি পরিস্কার এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে সাহায্য করে। পজিটিভ ধারণাগুলো আপনার জন্য কেবল নতুন সম্ভাবনার পথই খুঁজে দিবে না, বরং আপনাকে সাফল্যের চূড়ায় উঠতেও সাহায্য করবে।


লক্ষ্যের অনিশ্চয়তা একজন ব্যক্তিকে সাফল্য অর্জন করতে বাঁধা দেয়। অনেকেই জীবনের লক্ষ্য ঠিক না করেই কাজে নামতে চান। কিন্তু আপনি জীবনে যে লক্ষ্য অর্জন করতে চান তার জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিশ্রম, দৃঢ়তা এবং ইচ্ছাশক্তি। সূত্র: বিবিসি


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com