শিরোনাম
সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি মাদকের চেয়েও ভয়াবহ
প্রকাশ : ১৮ মে ২০১৯, ০৯:৪৭
সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি মাদকের চেয়েও ভয়াবহ
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের আধুনিক জীবনে এক নতুন বাস্তবতা। গ্রামের চায়ের দোকানে মানুষ তথ্যের জন্য এখন আর পত্রিকার পাতা ঘাঁটাঘাঁটি করে না। তার বদলে এসেছে স্মার্টফোন ও আইফোন নির্ভরতা। যা বর্তমানে একটি আসক্তিতে পরিণত হয়েছে। গ্রাস করছে সামাজকে।


চারপাশে, দেশে-বিদেশে কী ঘটছে, সেগুলো ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, গুগলসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে পেয়ে যাচ্ছে সবাই। এমনও কিছু আছে যা ভাইরাল হওয়ার নয় তাও ভাইরাল হচ্ছে। আর তাতেই হচ্ছে ক্ষতি।


টাইমলাইন, নিউজফিড ভরে যায় প্রয়োজনীয়, অপ্রয়োজনীয় সংবাদ, ছবি ও ঘটনায়। এ সুযোগটি করে দিচ্ছে ইন্টারনেট। সারা বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৭০ শতাংশ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংযুক্ত রয়েছে। তরুণদের মধ্যে এ হার আরও বেশি, প্রায় ৯০ শতাংশ। বাংলাদেশে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষের রয়েছে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট।


সোশ্যাল মিডিয়ার আরো অনেক নেতিবাচক দিক রয়েছে। বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে এই সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহারের কারণে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী বিপথগামী হচ্ছে, মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে, পড়াশুনায় মনোযোগ হারাচ্ছে, খেলাধুলা ছেড়ে দিয়ে দিনরাত ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিয়ে ব্যস্ত থাকছে।


অতিরিক্ত সোশ্যাল সাইটের প্রতি আসক্তি এবং এর অপব্যবহার শুধু মাত্র পরিবার ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের জন্যই যে ক্ষতিকর তা না, এটা সমস্যা তৈরি করছে কর্মক্ষেত্রেও! মানুষের বাস্তব জীবনকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করছে সোশ্যাল মিডিয়া।


সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তরুণরা সমাজে ভালো-মন্দ দু'ধরনের ভূমিকাই রাখছে৷ তবে দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, দিনের খুব বড় একটা সময় এই মাধ্যমে ব্যস্ত থাকায় তরুণদের অলসতা বাড়ছে৷ বাড়ছে মানসিক সমস্যাও।


বাংলাদেশে মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে গেছে। ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে অল্প বয়সী ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে তাদের অভিভাবকদের মধ্যেও তৈরি হচ্ছে মানসিক চাপ।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মনোবিজ্ঞানী মেহতাব খানম বলছেন, সোশাল মিডিয়ার কারণে বিশেষ করে পরিবারের ভেতরেও নানা রকমের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।


কাউন্সেলিং-এর জন্যে যারা আসছেন তারা তাকে এবিষয়ে কী ধরনের সমস্যার কথা বলছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মিসেস খানম বলেন, কিশোর-কিশোরীদের বাবা মায়েরা কিন্তু ভীষণ সংগ্রাম করছেন।


"কারণ রাতের পর রাত জেগে বাচ্চারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকছে, পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে, সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। তারা বুঝতে পারছেননা কিভাবে সন্তানের সাথে সম্পর্ক ঠিক রেখে সহায়তা করবেন"।


তার কাছে কাউন্সেলিং নিতে আসা শিশুদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "বাচ্চারা অনেক সময় বলছেন অভিভাবকদের কারণে তাদের কৈশোর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা পড়াশোনার ওপরই বেশি জোর দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেটে পড়ালেখার কাজও দেয়া হয়। কিন্তু বাবা মায়েরা বুঝতে চায়না"।


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মানসিক চাপ বাড়ানোর কারণ?


মেহতাব খানম বলেন "এখন সম্পর্কগুলো দ্রুত হয়ে যাচ্ছে । সহজেই একজনের সাথে আরেকজনের যোগাযোগ হচ্ছে। একারণে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, একাধিক সম্পর্ক-এসবও বেড়ে যাচ্ছে অনেক"।


অনেক সময় ফেসবুকে এমন কিছু দেখছে যা তাদের ওপর প্রভাব ফেলছে, হতাশও হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।


তার মতে ড্রাগের আসক্তির চেয়েও সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে এটা।


‘আমি এটা নিয়ে চিন্তিত। ড্রাগ যখন নেয় একা বা কয়েকজনের সাথে নেয়। কিন্তু আমি যখন অন্য একজন বা একাধিক মানুষের সাথে সম্পর্ক করছি তখন অনেকগুলো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়"।


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করাই সমাধান?


জবাবে মেহতাব খানম বলেন- না, বন্ধ করা সমাধান নয়। সোশ্যাল মিডিয়ার বিষয়ে আমরা যথেষ্ট শিক্ষা গ্রহণের আগেই সব কিছু হাতের মুঠোয় চলে আসছে। দায়িত্বশীল ব্যবহার করতে পারছিনা এটির। ওখানে অজস্র টাইম দেয়ার কারণে অন্য সব কিছুতে প্রভাব ফেলছে। আমার মাথা ওটাতেই ব্যস্ত থাকছে"।


স্ট্রেস কমাতে কি দরকার?


মেহতাব খানম বলেন, এজন্য যথাযথ শিক্ষার দরকার। অভিভাবকদেরও সচেতন দরকার। স্কুলগুলোতে প্যারেন্টিং কর্মসূচি আরও জোরদার করতে হবে। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।


অভিভাবকদের প্রতি পরামর্শ


স্বাধীনতা সবারই দরকার৷ কিন্তু যারা বাবা-মা আমাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে৷ যখন কোনো সমস্যা হচ্ছে তখন আমরা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি৷ একটা বাচ্চা যে কীভাবে বড় হচ্ছে, কাদের সঙ্গে মিশছে, কীভাবে বড় হওয়া উচিত এই জায়গাগুলোতে ছোটবেলা থেকেই মনোযোগ দিতে হবে৷ একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর চাইলেও অনেক কিছু হয় না৷ কারণ যে বাবা-মা আপনাকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অভ্যস্ত করছেন, তিনি কিন্তু আপনার লিমিট ঠিক করে দিচ্ছেন না৷ এই জায়গায় প্রথম থেকেই বাবা-মাকে সতর্ক হতে হবে৷ প্রযুক্তি ব্যবহারে খুব বেশি বাড়াবাড়ি হওয়া উচিত না৷ এটা অভিভাবকদের বুঝতে হবে৷


সুশৃঙ্খল পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের স্বার্থেই সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দিয়েছেন সমাজ ও মনোবিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, সময় বদলেছে, বদলেছে যোগাযোগের গতি। এর অপরিমিত ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণেই বাড়ছে অপরাধ; লোপ পাচ্ছে সমাজিক নিয়ন্ত্রণ। আবার অপরাধের কারণ ও মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া এই ভার্চুয়াল জগত রুগ্ন করছে সমাজ ও রাষ্ট্রকে। সূত্র: বিবিসি


বিবার্তা/তাওহীদ/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com