বেশিরভাগ অভিভাবকই শিশুর যত্ন ও প্রতিপালন বিষয়ে জানেন না এবং একইসাথে ভাবেন না।
প্রারম্ভিক শৈশব হচ্ছে সেই সময়টা যখন শিশুর যত্ন ও বেড়ে ওঠার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি খেয়াল করা প্রয়োজন। শিশুর জন্মের পর প্রথম আট বছর তার বেড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল। এটি সময়টি পরিবর্তনের এবং সে পরিবর্তন শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের।
তবে শিশুর প্রথম তিন বছর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ অভিভাবকের শিশুর সঠিক যত্ম ও প্রতিপালন সম্পর্কে জ্ঞান এখনও বেশ সীমিত। বাবা-মা কাজে থাকার সময় ছোট শিশুরা যথাযথ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।
শিশুর শিক্ষাগত সাফল্যের জন্য অভিভাবকরা খুব বেশি যত্মশীল হলেও অধিকাংশই জানেন না যে, উদ্দীপনা ও নিরাপত্তার অভাব শিশুর শ্রেণিকক্ষের কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এ সময়ে শিশুর মস্তিস্ক নমনীয় থাকে এবং দ্রুত বিকশিত হয়। শিশুর ভালো ও খারাপ অভিজ্ঞতাগুলো মস্তিস্কের বৃদ্ধির ওপর কড়া প্রভাব ফেলে । এই সময়ে অবহেলা বা নির্যাতন শিশুর বুদ্ধিবৃত্তি, আচরণ ও আবেগের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করে।
১) বাড়ির পরিবেশ ভালো হতে হবে
মনোবিদদের মতে, ছোটদের মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে প্রাথমিক পর্যায়ে হাল ধরতে হবে অভিভাবককেই। বাড়িতেই তৈরি করতে হবে এমন পরিবেশ, যেখানে মন খুলে কথা বলতে পারবে খুদেরা। সঙ্গে দিতে হবে জীবনপাঠও।
২) শিশুর ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান করা
সন্তান ছোট বলে তার সব বিষয়ে অযাচিত ভাবে ঢুকে পড়ার অভ্যাস পরবর্তী কালে বড় সমস্যার মুখে ফেলতে পারে। বড় বয়সে সে-ও কিন্তু এমন ভাবে অভ্যস্ত হবে। অন্যদের কথার মধ্যে জোর করে ঢুকে পড়ার প্রবণতা তৈরি হবে। উল্টো দিক থেকে অভিভাবকদেরও সংযত হতে হবে। শিশুরা ছোট, বুঝতে পারবে না ভেবে তাদের সামনে এমন কোনও কথা বলবেন না, যা বলার কথা নয়।
৩) নিজের মত প্রকাশ করার স্বাধীনতা
শিশুদের মনে সারা ক্ষণই নানা প্রশ্নের ভিড়। কোথায় কোন প্রশ্ন করা উচিত বা কোথায় কোন কথা বলা উচিত নয়, সে বিষয়ে জ্ঞান থাকে না। তাই অনেক অভিভাবক সন্তানকে ভয় দেখিয়ে রাখেন। যাতে তারা লোকসমাজে বেয়াড়া কোনও প্রশ্ন করে মা-বাবাকে বিপদে না ফেলে। কিন্তু এই ভয় থেকেই জন্ম নেয় কুণ্ঠাবোধ। যা পরবর্তী কালে শিশুর মত প্রকাশের ক্ষমতাকে খর্ব করে।
৪) স্বতন্ত্রতা বজায় রাখা
অনেক কিছু পরিবেশ থেকে গ্রহণ করলেও, নিজের পরিবারের কাঠামো বুঝে নিজস্বতা বজায় রাখার পরামর্শ দিন। কারণ, প্রতিটি পরিবারের ঐতিহ্য, রুচিবোধ, ভাল লাগা, মন্দ লাগা আলাদা। তাই অন্য কাউকে দেখে প্রভাবিত হওয়ার অভ্যাস ছোট থেকেই শুধরে দিন। ছোটরা কিন্তু বড়দের দেখেই সব কিছু শেখে। সে ক্ষেত্রে অভিভাবক হয়ে নিজে যদি সে সব অভ্যাসে অভ্যস্ত হন, সন্তানকে ঠিক জিনিস শেখানো মুশকিল হয়ে যাবে।
৫) শিশুর বিষয়ে ভাবুন
তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের বাবা-মা ও তাদের সেবাদাতারা শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়েই নিমগ্ন থাকেন। কিন্তু শিশুর বিকাশ নিশ্চিত করতে তাদের জরুরি ভিত্তিতে ভাবতে হবে। অভিভাবককেই এই বিষয়ে যত্নশীল ও মনোযোগি হতে হবে। তিন বছরের বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে খেলাধুলা, শিক্ষা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের যত্ন নিলেই চলবে।
তবে নির্যাতন থেকে সুরক্ষা এবং পয়ঃনিষ্কাশন এবং হাইজিন বিষয়গুলোতে উদাসীনতা দেখালে হবে না।
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]