
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশারকে বলা হয় ‘সাইলেন্ট কিলার’। অনেকের ক্ষেত্রে এই রোগ খুব সহজে ধরা যায় না। আবার ধরা পড়ার পর এর সঠিক চিকিৎসা না হলে বা প্রেশার নিয়ন্ত্রণে না থাকলে তা অনেক রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইদানীংদেখা যাচ্ছে শিশুদের মধ্যেও অনেকসময় উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকে ভাবেন অল্প বয়সে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে না এমন ধারণা এড়িয়ে চলায় ভাল। আজকাল অনেক শিশুদের মধ্যেও উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকে হয়ত সেটা বুঝতে পারছেন না। তাই সময় মত ধরাও পড়ছে না।
শিশুদের উচ্চ রক্তচাপ:
বয়স্কদের মতো শিশুদের রক্তচাপের মাত্রা একই রকম নয়। যেমন বড়োদের ক্ষেত্রে ১২০/৮০ মিমি রক্তচাপকে আমরা স্বাভাবিক রক্তচাপ হিসেবে ধরি এবং রক্তচাপ ১৪০/৯০ মিমি অথবা এর চেয়ে বেশি হলে আমরা তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলি। শিশুদের ক্ষেত্রে রক্তচাপের মাত্রা ভিন্ন। লিঙ্গ এবং উচ্চতা ভেদে একেক বয়সের শিশুদের রক্তচাপ একেক রকম। শিশুদের রক্তচাপ পরিমাপের ক্ষেত্রে আলাদা গ্রাফ রয়েছে। সেই গ্রাফকে ৫০, ৯০, ৯৫ ইত্যাদি বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এক একটি ভাগকে বলা হয় ‘পার্সেন্টাইল’। কোনো শিশুর রক্তচাপ যদি ৯৫ পার্সেন্টাইল এর বেশি হয়, সেক্ষেত্রে আমরা সেই শিশুর উচ্চ রক্তচাপ আছে বলে ধরে নিতে পারি।
শিশুদের উচ্চ রক্তচাপের কারণ ও প্রকারভেদ:
বয়স্কদের উচ্চ রক্তচাপের মতো শিশুদের উচ্চ রক্তচাপকেও মূলত দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন:
১) প্রাইমারি উচ্চ রক্তচাপ
২) সেকেন্ডারি উচ্চ রক্তচাপ
প্রাইমারি উচ্চ রক্তচাপ:
প্রাইমারি উচ্চ রক্তচাপ মানে হলো যে উচ্চ রক্তচাপ হবার পিছনে বিশেষ কোনো কারণ পাওয়া যায় না। শিশুদের তুলনায় বয়স্ক রোগীরা সাধারণত প্রাইমারি উচ্চ রক্তচাপে বেশি আক্রান্ত হয়।
কোনো শিশুর পরিবারের আপন কোনো সদস্যের যদি উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস থাকে, শিশুর বয়স যদি ৬ বছরের বেশি হয়, শিশু যদি স্থুলকায় হয় এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যদি উচ্চ রক্তচাপের পিছনে তেমন কোনো কারণ পাওয়া না যায়, সেক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যায় যে শিশুটি প্রাইমারি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে।
সেকেন্ডারি উচ্চ রক্তচাপ:
অপরদিকে সেকেন্ডারি উচ্চ রক্তচাপ হবার পিছনে নির্দিষ্ট কিছু কারণ থাকে। অন্য কোনো রোগের উপসর্গ হিসেবে অথবা রোগের জটিলতা হিসেবে এই উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয় এবং মূল রোগটি চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় করা সম্ভব হলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। সেকেন্ডারি উচ্চ রক্তচাপ সাধারণত আরও কম বয়সে দেখা দেয়।
সাধারণত শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে শিশুর এই উচ্চ রক্তচাপ হবার পিছনে কিডনির কোনো না কোনো অসুখ দায়ী। এর পাশাপাশি হৃদযন্ত্রের কোনো সমস্যা, মহা ধমনীর সমস্যা, হরমোনজনিত কোনো সমস্যার জন্যও উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।
শিশুদের উচ্চ রক্তচাপ কোন বয়স থেকে পরিমাপ করা উচিত?
তিন বছর বা তার উপরের বেশি বয়সের যে কোনো শিশুর ক্ষেত্রে বছরে অন্তত একবার রক্তচাপ পরিমাপ করা উচিৎ।
কিন্তু শিশুর যদি কোনো কিডনির রোগ থাকে, ডায়াবেটিস থাকে অথবা শিশু স্থুলকায় হয় তাহলে বছরে একবারের পরিবর্তে সেই শিশু যতবার কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাবে তার প্রতিবারই রক্তচাপ পরিমাপ করা উচিৎ।
আবার কোনো শিশু যদি কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে থাকে, নির্ধারিত সময়ের আগে কোনো শিশুর জন্ম নেবার ইতিহাস থাকে, জন্মগত কোনো হৃদরোগ থাকে, মূত্রতন্ত্রের বারবার সংক্রমণের ইতিহাস থাকে, রক্তচাপ বাড়াতে পারে এমন কোনো ঔষধ (যেমন: স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ) যদি সে নিয়মিত সেবন করে সেক্ষেত্রে তিন বছর পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আরও আগে থেকে রক্তচাপ পরিমাপ করা উচিত।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে ভালো উপায় হলোজীবনযাত্রা বা লাইফস্টাইল পরিবর্তন করা। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ বা ওষুধ গ্রহণই এর একমাত্র চিকিৎসা নয়, পাশাপাশি লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করা কথাও বলেছেন চিকিৎসকরা। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় কী করবেন:
১.অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করে গ্রহণযোগ্য ওজন বজায় রাখা।
২.খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা।
৩.নিয়মিত ব্যায়াম করা।
৪.রাতে সঠিকভাবে ঘুমানো।
৫.অতিরিক্ত মানসিক দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলা।
৬.ধূমপান থেকে বিরত থাকা।
৭. মদ্যপান এড়িয়ে চলা
পাশাপাশি আমাদের মনে রাখতে হবে চর্বিজাতীয় খাবার অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। নিয়মিত ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। পটাশিয়ামযুক্ত খাবার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক ম্যাজিকের মত কাজ করেন। প্রোটিনজাতীয় খাবার উচ্চ রক্তচাপের রোগীকে একটু হিসাব করে খেতে হয়।সেই সঙ্গে খাবারের পাতে কাঁচা লবণএড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
কী করে বুঝবেন আপনার বাচ্চা উচ্চ রক্ত চাপে আক্রান্ত?
১.বাচ্চার মাথাব্যথা, ঘাড় ব্যথা থাকতে পারে।
২.বেশি ঘাম হওয়া, বুক ধড়ফড় করা, চোখে ঝাপসা দেখা এই সমস্যাগুলো হতে পারে।
লক্ষণগুলি দেখলে কী করবেন?
১.প্রথমেই আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। বাচ্চার ব্লাড প্রেশার চেক করুন।
২.যদি দেখেন আপনার শিশুর উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাহলে ডাক্তার বাবুর পরামর্শ মেনে চলুন।
৩.মাথায় রাখবেন নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম এবং আউটডোর গেমসের ব্যবস্থা করতে হবে। বাচ্চাকে ঘরে তৈরি টাটকা খাবার খাওয়াতে হবে, বাইরের ফাস্টফুড একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত নুন খাওয়া যাবে না।
৪.স্ট্রেস এড়িয়ে চলতে হবে। উচ্চ রক্তচাপের সেকেন্ডারি কারণ যেমন কিডনি, হৃৎপিণ্ডের সমস্যা, হরমোনাল সমস্যা থাকলে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো চিকিৎসা করাতে হবে। অতিরিক্ত মাখন, তেলযুক্ত খাবার যেমন কেক, পেস্ট্রি, পরোটা, লুচি, আইসক্রিম ইত্যাদি খাওয়া যাবে না। ডিমের কুসুম, খাসির মাংস এড়িয়ে চলতে হবে।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]