শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য চাই সুস্থ সুন্দর পরিবেশ। সেই সাথে শিশুর বুদ্ধির বিকাশের জন্য চাই নতুন নতুন সব অভিজ্ঞতা। প্রতিটা শিশুই আলাদা। পৃথক পৃথক প্রতিভা নিয়ে বেড়ে ওঠে তারা। কেউ হয়তো খেলতে আগ্রহী আবার কেউ হয়তো আঁকতে ভালোবাসে। যে শিশু যা করতে পছন্দ করে তাকে সে বিষয়ে উৎসাহ দেয়া উচিৎ। সেই সাথে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে তাদের আগ্রহী করে তোলার চেষ্টাও করতে হবে। কারণ বিচিত্র অভিজ্ঞতায় শিশুর বুদ্ধিমত্তা বিকশিত হয়।
শিশুকে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করুন:
দিনের পর দিন একই রকম গতানুগতিক ধারা জীবনকে একঘেয়েমি করে তোলে। জীবনে আলস্য, স্থবিরতা ডেকে আনে। শিশুদের নতুন নতুন সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করতে হবে। জীবনের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা শিশুদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। সাহস বাড়ায়। প্রতিকুল পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য শিশুকে নুতন সব চ্যালেঞ্জের সাথে পরিচয় করাতে হবে।
তাদের প্রতিভা এবং আগ্রহকে উৎসাহিত করা:
নির্দিষ্ট কিছু হওয়ার জন্য শিশুদের উপর চাপ প্রয়োগ করা মোটেও ঠিক নয়। এতে করে শিশুর স্বাভাবিক প্রতিভা নষ্ট হতে পারে। তার যাতে আগ্রহ নেই, তা বানানোর চেষ্টা করলে ক্ষতি ছাড়া লাভ হবে না।
খেলাধুলো হোক বা অঙ্কন, সঙ্গীত হোক বা নাটকের ক্লাস এসব নিয়ে আপনার শিশুর আগ্রহ থাকলে অল্প বয়স থেকে সুযোগ দিতে হবে। তাহলেই প্রতিভা বিকাশের সম্ভাবনা বাড়বে।
শিশুকে প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করুণ:
সমস্ত শিক্ষার মূলে রয়েছে জানার আগ্রহ, জিজ্ঞাসা। অনেক সময় শিশুরা অযথা অনেক প্রশ্ন করে, কৌতুহল প্রকাশ করে বিভিন্ন বিষয়ে। ধৈর্য না হারিয়ে সেসব প্রশ্নের উত্তর দেয়া জরুরি। তাদের বুদ্ধি বিকাশের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশু যত "কেন" এবং "কীভাবে" প্রশ্ন তুলবে, তার সাফল্যের সম্ভাবনা ততই বাড়বে।
জানা বা শেখার চেষ্টার প্রশংসা করুন, তার ক্ষমতাকে নয়:
শিশু যে পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী সেটাকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবুন। ফলাফল নিয়ে কম আগ্রহ প্রকাশ করুন। নতুন কিছু শেখার জন্য তার যে চেষ্টা সেসবকে উৎসাহিত করুন। সেটা হতে পারে সাইকেল চালানো, ছবি আঁকা বা মাছ ধরা। জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জানা এবং শেখার চেষ্টা। এ উৎসাহই পরবর্তী জীবনে তাকে সাফল্যের দরজায় নিয়ে যাবে।
শিশুরা যেন ভুল করাকে ভয় না পায়:
ব্যর্থতা ভীতিকর কিছু নয়। ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ একটা সুযোগের মতো। শিশুর ভুলগুলোকে তার শিক্ষার অংশ হিসাবে দেখতে হবে। ভুল করলে বাচ্চাদের ভবিষ্যতে সঙ্কট মোকাবেলার ক্ষমতা বাড়ে।
কোনো লেবেল বা তকমা নয়:
অস্বাভাবিক মনে রাখার ক্ষমতা দেখলে বুঝবেন অপনার বাচ্চা হয়তো প্রতিভাধর। তাতে করে তাকে কোনো লেবেল বা তকমা সেটে দিলে আপনার বাচ্চা অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। ভবিষ্যতে কোনো ব্যর্থতার ভয়ে সারাজীবন সে কুঁকড়ে থাকতে পারে। তাই আপনার শিশু যেমনই হোক তাকে কোনো লেবেল লাগাবেন না।
শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ:
প্রতিভাবান শিশুরা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ চায়। তাদের নিজের গতিতে শিখতে চায়। চলতি শিক্ষা ব্যবস্থার মাঝে তাদের সেই বিশেষ চাহিদা পূরণে বাবা-মাকে শিক্ষকদের সাথে নিয়মিত পরামর্শ করতে হবে। প্রতিভাধর শিশুদের স্বাধীনতা দিতে হবে।
শিশুর সক্ষমতা যাচাই:
অনেকেই শিশুর সক্ষমতার তুলনায় বেশি চাপ প্রয়োগ করে থাকেন। এতে আপনার শিশুর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা নষ্ট হতে পারে। একজন শিশুকে যে সব বিষয়েই সমান সফল হতে এর কোনো মানে নেই। অনেক সময় আপনার শিশুর অনেক অজানা সমস্যা থাকতে পারে। যেমন ডিজলেক্সিয়া, তার মনোযোগের ঘাটতি থাকতে পারে, তার হাইপার-অ্যাকটিভিটি বা অতিমাত্রায় চঞ্চলতার সমস্যা থাকতে পারে। এগুলো আপনাকেই খেয়াল রাখতে হবে।
কিন্তু কীভাবে আপনি বুঝবেন আপনার বাচ্চা প্রতিভাধর?
কিছু ইঙ্গিত:
- মনে রাখার অস্বাভাবিক ক্ষমতা
-খুব অল্প বয়সে পড়তে শেখা
-অস্বাভাবিক কিছু আগ্রহ, শখ অথবা বিশেষ কিছু বিষয়ে গভীর জ্ঞান
-বিশ্বের চলমান ঘটনাবলী সম্পর্কে ধারণা
-সবসময় প্রশ্ন করা
-উচ্চমানের রসিকতা বোধ
-সঙ্গীত, চিত্রকলা নিয়ে আগ্রহ
- নিয়ন্ত্রণ নেয়ার আগ্রহ
- খেলার সময় নতুন এবং অতিরিক্ত নিয়মকানুন তৈরির ক্ষমতা
বিবার্তা/জাই
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]