দুদকের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় জামিন পেলেন ড. ইউনূস
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৪, ১৬:৪৮
দুদকের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় জামিন পেলেন ড. ইউনূস
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের সংরক্ষিত ফান্ডের লভ্যাংশের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।


৩ মার্চ, রবিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালতে তার আইনজীবী আত্মসমর্পণ পূর্বক জামিন আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেন।


এর আগে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজন রবিবার সকাল ১০টায় শ্রম আপিল আদালতে হাজির হবেন। কারণ, সেদিন তাদের এক মাসের জামিনের মেয়াদ শেষ হবে।


তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি মামলা করেছে। সেই মামলার চার্জশিট ইতোমধ্যে দাখিল করেছে তারা। একই দিনে সেই মামলার তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত। তিনি (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সেইদিন আদালতে হাজির হবেন।


গত ২৮ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের মামলায় ছয় মাসের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আদালত। পাশাপাশি ড. ইউনূসসহ চারজনকে ৩ মার্চ পর্যন্ত জামিন দেন আদালত। একই সাথে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতের দেওয়া রায়ের কার্যকারিতাও স্থগিত করেন আদালত।


শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের সদস্য জেলা ও দায়রা জজ এম এ আউয়ালের আদালত এ আদেশ দেন।


অন্যদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতে অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায়ও রোববার ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে যাবেন তিনি। রোববার বেলা ১২টায় তিনি এ আদালতে যাবেন বলে তার আইনজীবী জানিয়েছেন।


এ বিষয়ে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস জামিনের মেয়াদ বর্ধিত করতে রোববার সকাল ১০টায় শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আসবেন। তিনি আরও বলেন, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে প্রথমে এ মামলার নথিপত্র আসবে। এরপর শুনানির জন্য তারিখ দেওয়া হবে। তখন আমরা সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি করব।


তিনি বলেন, রবিবার বেলা ১২টায় ড. ইউনূস ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে যাবেন সেখানে তিনি জামিন আবেদন করবেন।


আইনজীবীরা জানান, শ্রম আদালতের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালাস ও জামিন চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে ২৫টি যুক্তি তুলে ধরে আপিল আবেদন করা হয়। আবেদনে বলা হয়েছে, আইনের ৩০৩(৩)(ঙ) ধারায় ৬ মাসের সাজা ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অথচ আইনের এই ধারায় ভিন্ন অপরাধের কথা বলা হয়েছে। আর এ মামলার বাদী বলেছেন, ৩০৩(৩)(ঙ) ধারা মামলার আর্জিতে উল্লেখ করেননি। আর ৩০৩(৩)(ঙ) ধারা যেখানে মামলার আর্জিতে নেই। আইনের সেই ধারায় ড. ইউনূসসহ চারজনকে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।


এর আগে, ১১ জানুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে দেওয়া কারাদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানার স্বাক্ষরের পর ৮৪ পৃষ্ঠার রায় প্রকাশ করা হয়।


এর আগে, গত ২৯ জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কমিশন বৈঠকে ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়।


চার্জশিটভুক্ত ১৪ আসামি হলেন- শ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম।


আসামিদের মধ্যে পারভীন মাহমুদ জামিনে রয়েছেন। বাকি ১৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছে তদন্ত কর্মকর্তা।


এ বিষয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশের মধ্যে অ্যাডভোকেট ফি হিসেবে প্রকৃতপক্ষে হস্তান্তরিত হয়েছে মাত্র এক কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বোর্ড সদস্যদের সহায়তায় গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা এবং অ্যাডভোকেটসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টের শর্ত লঙ্ঘন করে জাল-জালিয়াতির আশ্রয়ে আত্মসাৎ করেছেন। একই সঙ্গে অর্থ স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তারা। যা দণ্ডবিধি এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অবস্থায় আসামি গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় কমিশন থেকে চার্জশিট দিতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।


গত ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকমের শমিক-কর্মচারিদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। সংস্থার উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।


এ বিষয়ে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কর্মীরা লভ্যাংশের ভাগ বাবদ পাওনা চেয়ে আদালতে গেলে তাদের সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের সমঝোতা হয়। সেই সমঝোতার ভিত্তিতে আইনজীবীদের খরচ বাবদ কর্মীরা ওই ২৫ কোটি টাকা অগ্রিম চেয়েছিলেন। সেটিই দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কর্মীদের লিখিত সম্মতি আছে।


তিনি আরও বলেন, কর্মীরা ব্যাংক হিসাব খুলতে দেরি করায় চুক্তিতে সেই জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছিল। পরে দুই পক্ষ সেখানে ব্যাংক হিসাব নম্বর বসায়। সেটি সম্মতির ভিত্তিতে হয়েছে।


লভ্যাংশের ভাগ বাবদ পাওনা টাকা চেয়ে শ্রামীণ টেলিকমের ১৭৬ কর্মী শতাধিক মামলা করেছিলেন। তারা হাইকোর্টেও আবেদন করেছিল। পরে তাদের সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের সমঝোতা হয়। সমঝোতার মাধ্যমে পাওনা পেয়ে গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীরা ২০২২ সালে মে মাসে মামলাগুলো প্রত্যাহার করেন। পরে পাওনা পরিশোধের বিষয়টিকেই অর্থ আত্মসাৎ ধরে দুদক মামলা করে।


বিবার্তা/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com