
২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ সেক্টর উন্নয়নের জন্য একটা অর্ডার বের করে রেখেছিলেন। যাতে এই সেক্টরে উন্নয়নের পাশাপাশি নিজের ব্যবসাও ভালো হয়। তখন থেকেই জাতীয় গ্রিডে একটা বড় মূল্যের ব্যবধানে বিদ্যুৎ বিক্রি শুরু করেছেন। যার ফলে ভোক্তাদের মধ্যে বড় প্রভাব পড়েছে, এখনও পড়ছে।
সম্প্রতি বিবার্তার সাথে একান্ত আলাপে কথাগুলো বলেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম। তিনি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল অনুষদের ডিন। একই সাথে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা।
আলাপে উঠে এসেছে বর্তমানে দেশের জ্বালানি পরিস্থিতির নানা সমস্যা ও সমাধানসহ বিভিন্ন দিক। দীর্ঘ আলাপের চুম্বুক অংশ বিবার্তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
বিবার্তা: নব্বই দশকে দেশের জ্বালানি খাত আর এখনকার জ্বালানি খাতের মধ্যে কী পরিবর্তন দেখছেন?
অধ্যাপক এম শামসুল আলম: দেখুন, নব্বই দশকের পর থেকে জ্বালানি খাতকে বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন ভাবে নানা রূপান্তর বা সংস্কার করছে। যারা মূলত প্রতিষ্ঠিত ও সক্ষম দেশ, তারা নিজেদের মতো করে সংস্কার করে নিচ্ছে। আর যারা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, যাদের সক্ষমতার অভাব আছে, তাদেরকে দাতারা নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে এ খাতে সংস্কারের ব্যবস্থা করেছে। এ সংস্কারে তাদের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিয়েছে। তাদের বিবেচনা হচ্ছে, বেসিক্যালি জ্বালানি খাতকে বাণিজ্যিক খাতে পরিণত করা। এ খাতকে সরকারি রেভিনিউ আর্নিংয়ের উৎসে পরিনত করা। এই পলিসির উপর দাঁড়িয়ে আলটিমেটলি আমাদের সংস্করণটা শুরু হয় ১৯৯০ সাল থেকে। তার আগে এ সেক্টরে সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত ছিল। এই খাতে যে অব্যবস্থাপনাগুলি ছিল, সেগুলি সরকারের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা যে সম্ভব ছিল না, তা নয়। কিন্তু সরকার সেসব বিষয়ে উদাসীন ছিল। যেমন ধরেন ৩০% থেকে ৪০% সিস্টেম লস। এই সিস্টেম লস সরকারের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব, এটা কি মানা যায়?
এই সিস্টেম লসটা হতো ভোক্তা পর্যায়ে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে এসব ঘটনাগুলি ঘটত। বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি বলতে এটাই বোঝাত। এই সমস্যা থেকে বেরোনোর জন্য বিদ্যুৎ খাতে সংস্কার আনতে হবে। বিদ্যুৎ খাতকে পরিবর্তন করতে হবে। মোটকথা জনমত তৈরি করা এবং সরকারের মোটিভেশন করার বিষয়টি কাজ করেছিল। আরেকটি হলো আমি বিদ্যুৎ ব্যবহার করি, কিন্তু বিল দেই না। তার মানে বিল সংগ্রহের ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। এখানে দুটি কারণ রয়েছে। একটা হলো আমরা যে বিদ্যুৎ তৈরি করি, সেই বিদ্যুৎ চুরিতে বিক্রি হয়ে যায়, রেভিনিউ আসে না। আবার যার কাছে বিক্রি করি, তার কাছ থেকে বিল পাই না। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, আমাদের যা ব্যয় হয়, আর যা আয় করি, এই দুটির প্রচণ্ড ঘাটতি হয় এবং সরকার ভর্তুকি দেয়।
একটা দেশের বিদ্যুৎ বা জ্বালানি ব্যবস্থা এভাবে চলতে পারে না। সুতরাং এর সমাধান কী? তারা এই সমস্যা দেশবাসীর সামনে আনল। নীতি-নির্ধারকদের কাছে আনল। রাজনীতিবিদদের কাছে আনল। সরকারের কাছে আনল। এনে মাঠ গরম করে যা করার তাই করে ফেলল। তাহলে কী করতে হবে? এ খাত ভেঙে টুকরো, টুকরো করে ফেলতে হবে। ছোট ছোট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বানাতে হবে। এগুলিকে লাভজনক করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান লাভজনক হবে, সেগুলিকে বেসরকারি খাতে ব্যক্তিমালিকানায় শেয়ার বিক্রি করে ব্যক্তির ব্যবসা বানিয়ে দিতে হবে। যারা দেখবে সেগুলিও সরকারের হাতে থাকবে। এসব কাণ্ড-কারখানা করল আর বলল এগুলি সব কস্ট প্লাস মহলে চলবে। অর্থাৎ যা খরচ হবে তার উপর অতিরিক্ত মুনাফা হিসেবে যোগ করে ওই খাতের ব্যয় নির্ধারণ হবে। আর কি হবে? এ খাত থেকে সরকার পর্যাপ্ত রাজস্ব পাবে। তার সাথে আরও কতগুলি পোশাকি কথা লাগাল, এ খাত উন্নয়নের জন্য সরকার কোনো পুঁজি বিনিয়োগ করবে না, অথচ লভ্যাংশ নেবে। এখাতে যে মুনাফা হবে তার উপরে ট্যাক্স নেবে। অন্যান্য ট্যাক্স, ভ্যাট, কর তো নেবেই। বিষয়টি এভাবে সাজানো হলো। পরে দেখা গেল যে, পুরো গ্যাস ক্ষেত্রেই সরকার বিনিয়োগ করল না।
বিবার্তা: এরপর কি হলো…
অধ্যাপক এম শামসুল আলম: আইওসির কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে চুক্তি করে গ্যাস নেয়া শুরু করল। সরকার গ্যাস উৎপাদনে বিনিয়োগ করল না। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ‘আইপিপি’র নামে একটা মডেল চালু করল, সেখানে বিদেশিরা বিনিয়োগ করল। বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে তাদের যা খরচ হবে তার সাথে মুনাফা যোগ করে যা দাঁড়াবে আমরা সে দামে বিদ্যুৎ কিনে নেবো। গ্যাসের ক্ষেত্রে যেমন, বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও তেমন। বিদেশি বিনিয়োগকারী আকর্ষণ ও বিনিয়োগের ক্ষেত্র প্রতিযোগিতামূলক হবে। এখাতের ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগকারীদের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড করতে হবে। তাতে বিপত্তি ঘটে গেল। এটা ছিল পুরো প্যাকেজের মধ্যে। পরবর্তীতে প্যাকেজটা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা গেল, বিনিয়োগকারীদের লেভেল প্লেইং ফিল্ড করা, প্রতিযোগিতামূলক করা- এটা ২০১০ সালে একটা আইন দিয়ে প্রতিরোধ করা হলো।
তার আগে এর কপ্লিকশনটা আমাদের নজরে কিছুটা এসেছিল। যেমন ধরেন, আমাদের গ্যাস তুলতে লাগে ১ টাকা। বর্তমানে আমরা যদি নিজস্ব গ্যাস তুলে ব্যবহার করি, তাহলে লাগে ১.৩ পয়সা। আইওসির কাছ থেকে যে গ্যাস কিনি তাতে লাগে ২.৭৭ পয়সা। আইওসি-এর মধ্যে কিছু কাজ করে ফেলল। ১৯৯৬ সালে যখন তারা গ্যাস রফতানি করতে পারল না, তখন তারা সমস্ত জায়গায় কার্যক্রম বন্ধ করে দিলো। তাদের গ্যাস অনুসন্ধানে যে বৈপ্লবিক সাড়া পড়েছিল সেটা স্লো-ডাউন করে দিলো। তখন সে জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার আমাদের কোনো প্রস্তুতি ছিল না।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, যখন যে যা বলছে, আমরা তাই করছি। আমাদের জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ করে কোনো পলিসি করা, ডিজাইন করা- এসব ১৯৭৪ সালে একটা বিডিং করা হয়েছিল। সে বিডিংয়ে আলটেমেটলি কোনো ইজারা দেয়া হয়নি। তখন তেল অনুসন্ধান করে। আমাদের ভেতরের ব্যাপারের কারণে ইজারাটা দিতে পারেনি। কে কার লবিতে কাজ দেবে-না দেবে, নানা ধরনের ইকুয়েশন কাজ করেছে। এখনও তো সেসব ইকুয়েশন আছে। চীন, জাপান, ভারতীয় কোম্পানিরা কোন কাজ করবে? মূল কাজ ডিল কারা করবে? অনুসন্ধানের কাজ কারা করবে? সেসাথে আমাদের এখানকার একটা শক্তি চাচ্ছে, পেট্রো বাংলা, আরেকগ্রুপ চাচ্ছে চীন আসুক। এটা তো আসলে সরকারের মধ্যেই গরল! বিডিং হবে, সেখানে দেশ-জাতি নির্বিশেষে কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করবে। সেখানে তো কারো পক্ষ হয়ে তদবির করার সুযোগ নাই। এসব সুযোগগুলো এখন ইনবিল্ড ডেভেলপ হয়ে গেছে। সেগুলি শাখা-প্রশাখা গজিয়ে মহিরুহে পরিণত হয়েছে। এগুলোর ভেতরে সংস্কারের চেহারাগুলোও আমরা দেখতে পাচ্ছি।
বিবার্তা: তখন এ বিষয়গুলি নিয়ে কি কেউ আন্দোলন করেনি?
অধ্যাপক এম শামসুল আলম: আমরা যখন আইওসির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করলাম। বললাম, আমরা নিজস্ব সক্ষমতায় গ্যাস অনুসন্ধান করব। নিজেরা নিজেদের গ্যাস ব্যবহার করব, রফতানি করব না। ৯০ দশকের শেষের দিকে যখন এসব আন্দোলন শুরু হলো, তখন টাইমলাইনে গ্যাস রফতানি বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু নিজেদের সক্ষমতায় গ্যাস উত্তোলন করা শিখলাম না। তারপর আমরা গ্যাস উন্নয়ন তহবিল তৈরি করলাম। আগে বলেছে সরকার বিনিয়োগ করবে না। তাহলে ভোক্তা বা পাবলিক টাকা দিবে। প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকায় আমরা ২০-২২টা কুপ খনন করি। তার মানে কুপের সয়লাভ হয়ে গেল। কিন্তু কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও সক্ষমতা উন্নয়নের জন্য আমরা যে সব পদক্ষেপ নিতে চেয়েছি, সেগুলি হলো না।
এর মধ্যে পেছনের দরজা দিয়ে পিছিয়ে নিয়ে যাওয়া, টেনে ধরা- এই কাজগুলি নেপথ্যে হতে দেয়া হয়েছে। দেখা গেলো ১০-১২ বছরের মাথায় এসেও গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের ৩৫% টাকা খরচ হয়নি। পরে ধারাবাহিকভাবে টাকা খরচ করে আপনি কতটুকু গ্যাস উৎপাদন করেছেন তার কোনো হিসেব নাই। গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের যে ৩৫% টাকা খরচ হয়েছে তার কোন রিটার্ন নাই। তার মানে একটা দেশ কিভাবে তার দেউলিয়াপনা, তার সক্ষমতার জায়গাটা পঙ্গু করে দেয়। এ ব্যাপারটাকে সরকারি নীতি নির্ধারণী মহলে গুরুত্ব দেয়া হয়নি।
বড়পুকুরিয়ায়ও সেই একই অবস্থা। আমাদের কয়লা কিনতে যেখানে ৬০-৭০ ডলারের বেশি খরচ হয়নি। সে কয়লা চীনা কোম্পানির কাছ থেকে কিনেছি ৮৫ ডলারে। চীনা কোম্পানি কয়লা বিক্রির সময় তার সাথে ৫% অতিরিক্ত পানি বিক্রি করেছে আমাদের কাছে। এটা দেখার বা বুঝে নেয়ার কেউ ছিল না, কেউ নেয়নি। যেটা আমাদের ইনভেস্টিগেশন কমিটিতে ধরা পড়েছে। চীনারা এভাবে আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছে। তাদের কাছ থেকে ৫% পানিসহ যে কয়লা কিনেছি ৮৫ ডলারে, তাদের কম্পিটিটিভ ওয়েতে কাজ দেয়া হয়নি। যদি দেয়া হতো তাহলে হয়তো ৬০/৬৫ ডলারে দেয়া যেত। সেই কয়লা আমাদের কোম্পানি কিনে একই জায়গায় সাপ্লাই করে, সেখানেও ৩৫ ডলারের মতো বেড়েছে। পরে দেখা গেল আমরা কয়লাই কিনেছি দেড়শ ডলারে, তখন আমরা কয়লা আমদানি করছি ১০০ ডলারে। এরকম বহু উদাহরণ আছে। আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে ঠকিয়েছি। এ ঠকানোর জন্য পাকিস্তান বা ব্রিটিশ গর্ভমেন্ট দরকার হয়নি। তারা যেভাবে ঠকিয়ে গেছে, তা থেকে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের চেতনা জাগ্রত হয়েছে।
বিবার্তা : বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কী?
অধ্যাপক এম শামসুল আলম: গত ৩০ বছর ধরে এ সেক্টরে যে সংস্কার হয়েছে সেটি আমাদের জাতীয় স্বার্থে মূল্যায়ন করতে হবে। এই মূল্যায়নের মধ্যদিয়ে বেরিয়ে আসবে যে, আপনি যা করেছেন তা আর করার কোনো সুযোগ নেই। এখন পরিবর্তন করে কি করতে হবে, সে প্রশ্নে আমরা কতগুলি কথা বলেছি। আইন সংস্কার করে এগুলি করা হয়েছে। কয়লা, তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ সেক্টরে প্রশাসনিক কাঠামোগত পরিবর্তন করা হয়েছে। এসব জায়গায় যে পরিবর্তন করা হয়েছে, সে জায়গাগুলি রিভিউ করতে হবে। রিভিউয়ের বৈশিষ্ট্য হবে, সরকারের পলিসির জায়গায় আমরা আগে যে কথাটি বলেছিলাম আপনি এটাকে রেভিনিউ আর্নিংয়ের সোর্স হিসেবে ব্যবহার করবেন? ফুড সেক্টর সরকার রেভিনিউ আর্নিংয়ের সোর্স হিসেবে ট্রিট করে না। উল্টো এ সেক্টরে প্রনোদনা দেয়। জ্বালানি সেক্টরকেও ঠিক ওই নীতিতে অপারেট করতে হবে।
এই সরকার অন্তত এটা বলতে পারে যে, দেশের মানুষের ১০০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন না হওয়া পর্যন্ত এই সেক্টরের বিনিয়োগ সরকারি খাতে নিশ্চিত হতে হবে। আমরা মনে করি, বছরে ১০০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন না হওয়া পর্যন্ত এ সেক্টরে কোনো বেসরকারি বিনিয়োগকারীকে আনা যাবে না। কারণ বেসরকারি বিনিয়োগ হলেই মূল্য বৃদ্ধি হবে। যেমন হোটেল থেকে ভাত কিনে আনলে বেশি খরচ পড়ে, সে টাকা দিয়ে চাল কিনে রান্না করে খেলে তার থেকে কম খরচ হয়। এখন আমি নিজে রান্না করে সে পর্যন্ত খাবো, যে পর্যন্ত আমার সক্ষমতাটাও ওই পর্যায়ে না উঠবে।
এ খাত পরিচালনার প্রশাসনিক দায়িত্ব কোনভাবে কোনো মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বা আমলাদের হাতে দেয়া যাবে না। এটা প্রফেশনাল প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে ডেভেলপ করতে হবে। জনবল তৈরি করতে হবে। যে জনবলকে আমরা পরিকল্পিতভাবে পঙ্গু করেছি। দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে আর তাদের আমরা এই অর্ধশিক্ষিত আমলাদের পদতলে রেখে দেই। এই জায়গাগুলিতে এদেরকে বসাতে হবে। এরা যখন বসবে তখন জবাবদিহিতার আওতায় আসবে। একজন সেক্রেটারিকে আপনি জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারবেন না। তাকে তো সরকারই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারে। শিক্ষার টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আপনাকে এটা করতে হবে। আর আপনি যদি সরকারি খাতে, সরকারি বিনিয়োগে উন্নয়ন করেন, রেভিনিউর উৎস এবং বাণিজ্যিকীকরণ না করেন বরং সেবা খাত হিসেবে চিন্তা করেন, তাহলে যতটুক ব্যয় হবে, শুধু সেট নিলে এখাত আবার ঘুরে দাঁড়াবে। এ ঘুরে দাঁড়ানো, সক্ষমতা অর্জন, এসব বিষয় বর্জন করে আপনি আমদানি নির্ভর হওয়া, জ্বালানি সম্পদের উন্নয়ন না করা, জনসম্পদকে সক্ষম না করার অর্থ হচ্ছে আপনি জাতীয় ভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া।
বিবার্তা: জেনেছি ১৯৭৫ সালে দেশে পেট্রোবাংলাকে মন্ত্রণালয়ের সমমর্যাদা দেয়া হয়েছিল?
অধ্যাপক এম শামসুল আলম: ১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের আগে স্পষ্টভাবে স্বাধীনতা উত্তর সরকার এই ব্যাপারগুলোকে সবচেয়ে বেশি ফোকাস করেছিল। পেট্রোবাংলাকে মন্ত্রণালয়ের সমমর্যাদায় তাকে ডিভিশনের মর্যাদা দিয়েছে। যেমন জ্বালানি ডিভিশন। পেট্রোবাংলাকে মন্ত্রণালয়ের মর্যাদা দিয়ে সেখানে চেয়ারম্যান হিসেবে একজন পেশাদার ব্যক্তিকে বসিয়েছেন, কোনো সেক্রেটারিকে নয়। তিনি ছিলেন ড. হাবিবুর রহমান। তাকে জ্বালানি বিভাগ থেকে আলাদা করে স্বাধীনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যখন জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসে, তিনি সাথে সাথে পদত্যাগ করে চলে গেছেন। তিনি বলে গেছেন একজন আর্মি অফিসারের অধীনে আমি চাকরি করব না। এই যে পেশাদারিত্বে নেতৃত্ব ও সক্ষমতার যে ধার, সেসময় (১৯৭৪ সালে) যে পরিচয়টা পাওয়া গেছে, আজ সেটা তো কল্পনাও করা যায় না। তার মানে দেশের জন্য এরকম মানুষ জন্ম, তৈরি হওয়া অনেক ভাগ্যের বিষয়।
বিবার্তা: আপনি তেল, গ্যাস কুপ খননের ক্ষেত্রে একটা কথা বলেছেন, ভেতরে ভেতরে একটা ব্যাপার হচ্ছে, সেটা যদি একটু বলতেন…
অধ্যাপক এম শামসুল আলম: আইওসি, মানে ইন্টারন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি। এরা কারা? অর্থাৎ বিদেশি বণিকদের আপনি ব্যবসা দিচ্ছেন। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো (আইপিপি), এতে বিনিয়োগ কারা করবে? বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। তাদের জন্য আপনি ক্ষেত্র তৈরি করে দিচ্ছেন। অর্থাৎ তাদের ব্যবসা বানিয়ে দিচ্ছেন। এ ব্যবসা বানিয়ে দেবে কারা? একজন মন্ত্রী তো চাইলেও বানাতে পারবে না। এগুলো বানাবে সচিবরা। আপনি যদি বিশ্লেষণ করেন, তাহলে দেখবেন, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী গত ৩০ বছর ধরে এই খাতকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। জ্বালানি ইস্যু সচিব, বিদ্যুৎ সচিব, জ্বালানি সচিব ছিলেন একই পদের। নাজিম উদ্দিনকে বাপেক্সের চেয়ারম্যান করে দেয়া হয়েছে। বাপেক্সের যে ক্যাপাসিটি নির্মাণ হলো না এবং এই ক্যাপাসিটি উন্নয়নের জন্য কোনো পলিসি বা প্ল্যানিং অ্যাকশন করা হলো না। কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করে, পাঁচ বছরের মধ্যে কীভাবে তাদের ক্যাপাসিটি উন্নয়ন করতে হবে, এই ফিল্ডে কিভাবে টাকা খরচ করতে হবে, তার একটা পরিকল্পনা তৈরি করে বিইআরসিতে পাস করানোর কথা ছিল। বিইআরসিতে আসা মানেই তো স্টোক হোল্ডারদের কনসালটেশনে যাওয়া। আমাদের সবার কথাবার্তা শুনে মূল্যায়ন নেয়া হল। সেটা বাতিল হয়ে গেল। একজন সচিব বা বাপেক্সের চেয়ারম্যান হিসেবে সে এটা করাল না। না করে বাপেক্সকে একটা পঙ্গু অর্গানাইজেশনের দিকে নিয়ে গেল। প্রশ্ন হতে পারে কেন করল না? কারণ সে কারো না কারো এজেন্ট ছিলেন।
বিবার্তা: ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাতে যে পরিমাণে অটোরিক্সা চলে, এগুলা তো বৈধ না। এরা যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ করে তার জরিপ না করে কিংবা বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ না করে সরকারের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানিক ভাবে লোড সেটিং, অফিসের সময় পরিবর্তনসহ এসব সিদ্ধান্তকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
অধ্যাপক এম শামসুল আলম: দেখুন, সরকার সিদ্ধান্ত নেয়নি। না নিয়ে অটোরিক্সা ওয়ালাদের অনুমতি দিয়েছে। মানে তারা নিচ্ছে। কেউ কিছু বলতেছে না। সিদ্ধান্তের আওয়া এটা হয়নি। যেমন ধরেন দুর্নীতি করার জন্য কোন সিদ্ধান্ত নেইনি। কিন্তু দুর্নীতি চলছেই। এটা বন্ধ করার জন্য যে পদক্ষেপ নেয়ার দরকার তা আমরা নেই না। নিচ্ছি না। তার মানে ইনডাইরেকলি বলতে পারেন আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছি।
এই জায়গাটাতে আমি একটা অপরচুনিটি দেখি যে, রুরাল কমিউনিকেশনে একটা বিপ্লব ঘটে গেছে। কারণ সেখানে মবিলিটি বেড়েছে। যেখানে ঢাকা শহরে মবিলিটি কমে গেছে। মানুষের পরিবহন, সময় এবং ব্যয়, ঢাকা শহরের অনুপাতে সেখানে পরিবহন ব্যয় কিন্তু বাড়েনি। ডিজেলের দাম বাড়ার সাথে সাথে যেভাবে ভাড়া বেড়েছে, গ্রামাঞ্চালে কিন্তু ভাড়া বাড়েনি। এটা শুধু ব্যাটারিচালিত বা যন্ত্রচালিত লেগুনার কারণে। এটা গেল একটা দিক।
আরেকটি দিক হচ্ছে, এর সাথে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। বলা যায় যে গরীব বা সীমিত ইনকামের মানুষের হেঁটে চলার পরিবর্তে তাদের এই পরিবহনের সুযোগটা নেয়া তাদের ক্ষমতার মধ্যে চলে গেছে। তাহলে এ জিনিসগুলি তো সরকার তৈরি করেনি। জিনিসগুলি এমনিতেই তৈরি হয়ে গেছে। এখন এটাকে সাস্টেইনাবল করতে হবে। এটাকে সাস্টেইনাবল না করে যদি আপানি এ অবস্থা অব্যাহত রাখেন, তাহলে এটাও গ্রিড বিপর্যয়ের জন্য দায়ী হবে। সুতরাং গ্রিড প্রটেক্টশন, গ্রিডের উপর লোড রিডিউস করার জন্য তাদেরকে চার্জিং স্টেশন সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেয়া দরকার। ২০ কিলোওয়াটের করে যদি তাদেরকে সৌরবিদ্যুতের চার্জিং স্টেশন করে দেয়া হয়, তাহলে আমি মনে করি যে গ্রিড বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। গ্রিড আপনার ঝুঁকি মুক্ত হবে। পাশাপাশি গ্রামীণ এই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নটা সাস্টেইনাবল হবে। সরকার পরিকল্পনা করে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে পারেনি সেটা অপরিকল্পিতভাবে হয়ে গেছে। এটাকে আমাদেরকে নার্সিং করে ক্রটিমুক্ত করতে হবে।
বিবার্তা: গত কয়েক বছরে বিদ্যুতের পাইকারি দাম বেড়েছে ১১৬%। গ্রাহক পর্যায়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে ৯০%। গত ২৮ মে অনুষ্ঠিত গণশুনানির প্রেক্ষিতে আবারও পাইকারি বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি হতে পারে বলে জানা গেছে। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?
অধ্যাপক এম শামসুল আলম: দেখুন, বিষয়টা এ সময়ের জন্য একটু ভাবনার। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) থেকে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) আসলো। তারা বলল যে, আমরা ৭% উৎপাদন বৃদ্ধি করব এবং অমুক জ্বালানিতে এত পরিমাণ বিদ্যুৎ বৃদ্ধি হবে। তাতে করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি হবে এবং আমি এখন যা আয় করছি, তার তুলনায় বিদ্যুৎ এভাবে উৎপাদন করলে তাতে ঘাটতি হবে ৫৮ পয়সা। গণশুনানিতে বিইআরসি হিসাব করে আনল ৬৯ পয়সা। এরা বলল ৫৮ পয়সা। তার মানে ৫৮ পয়সা ঘাটতি আছে। এর কতটুকু সরকার ভর্তুকি দিয়ে সমন্বয় করবে? আর বাদবাকিটুকু ভোক্তা পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধি দিয়ে হবে।
একইভাবে গ্যাসেও সেভাবে মূল্যবৃদ্ধি হয়ে গেছে। মূল্যবৃদ্ধি হওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে, গ্যাসে আর এলএনজি আনা হচ্ছে না। গ্যাসে তারা যে ব্যয় ধরেছিল, যে দাম নিচ্ছে- তাতে তাদের আয় বেশি হচ্ছে। যেটি নিয়ে আমরা এখন হৈচৈ করছি যে আবার গণশুনানি করতে হবে। গ্যাসের দাম পুননির্ধারণ করতে হবে। এটা আমাদের আন্দোলন আছে, দাবি আছে। আমরা কোর্টে পর্যন্ত গেছি। সেসব বিষয়ে আমরা একটা ভয়েস রাইজ করেছি। এখন এটাকে একটা সমঝোতায় নিয়ে আসতে হবে।
বিদুৎতের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা। দাম ঘোষণার জন্য গণশুনানি হলো, আমরা পোস্ট হেয়ারিং সাবমিশন করলাম, এর সাথে আরও সম্পূরক প্রতিবেদন দাখিল করেছি। এরপর মূল্য ঘোষণার আগেই দেখা গেল যে ৭% বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি হলো না। উল্টা ১৭% থেকে ১৮% কোন সময় ২০% উৎপাদন কমান হলো। সেটি সরকার ঘোষাণা দিয়েই কমাল। অন্য সময় সরকার ঘোষণা দিত না। বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হলে আমরা লোডশেডিংয়ে থাকতাম। কেন, হচ্ছে তা বিশ্লেষণ করা হত না। এবার সরকার ঘোষণায় দিয়েছে যে, তেল সাশ্রয় করতে হবে, ব্যয়-ভর্তুকি সাশ্রয় করতে হবে ইত্যাদি। সেকারণে আমি এখন মূল বৃদ্ধিও করতে পারছি না। যে ঘাটতি হচ্ছে সে ঘাটতি পূরণে ভর্তুকি দিতে পারছি না। মূল্য বৃদ্ধি করলে ভোক্তা সহ্য করতে পারবে না। সুতরাং এখন এটা করা ছাড়া কোন উপায় নেই। তার মানে সরকার এ কারণে লোডশেডিং দিয়েছে।
পরবর্তী পর্যায়ে এরকম টেলিভিশন টক শোতে আলোচনায় সরকারি প্রতিনিধিরা বলছেন যে, আমরা লোডশেডিংয়ে সফল হয়েছি। কী সফল হয়েছেন? তারা হাজার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করে ফেলেছেন। সুতরাং ভর্তুকি কমে গেছে, ঘাটতিও কমে গেছে। সব হয়ে গেছে। তাই আমাদের প্রশ্ন ইতিমধ্যেই বিইআরসিকে জানিয়ে দিয়েছি। যে প্রস্তাবের ভিত্তিতে গণশুনানি করে এরকম একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গিয়েছিল, এ পরিমাণ ঘাটতি আছে সরকারকেও চিঠি দেয়া হয়েছিল যে, সরকার কতটা ভর্তুকি দিবে, তাহলে কতটা মূল্য বৃদ্ধি হবে। সে প্রেক্ষাপট এখন আর নেই। কারণ ৭% বিদুৎ উৎপাদন হওয়া তো আর দূরের কথা, উল্টা ১৮% লোডশেডিং অথাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে ভোক্তাকে লোডশেডিংয়ে রাখা হয়েছে। ৭% বিদ্যুৎ উৎপাদনের ভিত্তির কথা ছিল, শতভাগ লোডশেডিং মুক্ত রাখা হবে, সে জন্য এত দাম দিতে হবে। এখন শতভাগ লোডশেডিং মুক্তর পরিবর্তে ২৫% লোডশেডিং আরোপ করা হয়েছে। তাহলে ওই গণশুনানি কী করে কার্যকর থাকে?
সুতরাং ওই গণশুনানির ভিত্তিতে আর দাম বৃদ্ধি করার কোন ক্ষমতা বা বৈধতা নাই। বিইআরসিকে ৯০ দিনের মধ্যে তার ঘোষণা দিতে হবে। বিইআরসির দাম অপরিবর্তিত রাখার আদেশ দেয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। তা সত্ত্বেও যদি বিইআরসি অবৈধ উপায় দাম বৃদ্ধি করে, তাহলে সেটা জনশত্রুতা বা গণশত্রুতার শামিল হবে। আমি মনে করি না বিইআরসি জনগণের সাথে এভাবে শত্রুতা করতে পারে।
বিবার্তা: সরকার দেশের কুইক রেন্টাল প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দিয়ে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের দিকে ঝুঁকছে। এ ভাবনা কতটুকু টেকসই হবে বলে মনে করেন?
অধ্যাপক এম শামসুল আলম: আসলে কুইকরেন্টাল প্রকল্পগুলো সরকার বন্ধ করতে পারছে না। কেননা কুইকরেন্টালের মানুষগুলোর প্রেসারে সরকার তাদের কাছে অনেকটা জিন্মি হয়ে আছে। তবে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে ২০১৮ সালের পলিসিতে বলা ছিল আমরা ২০২১ সালে টোটাল বিদ্যুতের ১০% নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাব। নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎতের সবচেয়ে আলোচিত মাধ্যম হলো সৌরবিদ্যুৎ। আমরা যদি তখন থেকে সিরিয়াস হতাম, তাহলে এই ১০% বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অসম্ভব ছিল না। দেখা যাচ্ছে গ্রিড বিদ্যুৎ উৎপাদন ০.৫৯% এর মতো ২০০১ সাল পর্যন্ত। এটা পিডিবির রিপোর্টিংয়েও আছে। তাহলে আমরা এ জায়গাটায় চরম ব্যর্থ হলাম। কেন হলাম? এই বিদ্যুৎ যদি উৎপাদিত হয়, তাহলে গ্রিড বিদ্যুৎ ব্যবহার ভাটা পরে যায়। গ্রিড বিদ্যুতের বাজারে এই বিদ্যুতের বিক্রি যদি ভালো হয়, তাহলে এই বিদ্যুৎ বাজারে কম্পিটিটিভ বিদ্যুৎ হয়ে যাবে। তাহলে গ্রিড বিদ্যুৎ বাজারে প্রতিযোগিতা করে থাকতে হবে।
এখন আসেন গ্রিড বিদ্যুৎ ব্যবসা কারা করে? তেল থেকে, গ্যাস থেকে যারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, তাদের ব্যবসা সংকোচিত হয়ে যাবে। তাই তারা সরকারের পলিসি নিয়ন্ত্রণ করবে, যাতে করে বিদ্যুৎ ব্যবসা সম্প্রসারণ না হয়। বিদ্যুৎ ব্যবসা যাদের হাতে তাদের এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে যে খরচ হয়, তারা তার চেয়ে দুই থেকে আড়াই গুণ বেশি পয়সা নিয়ে যায়। স্ট্যান্ডার্ড মুনাফা হচ্ছে ৫%। বেসরকারি কোম্পানির জন্য ১% বা ২% কম বেশি করা আছে। আর সে জায়গায় আমরা করে দিয়েছি ১৮%। ৫% এর জায়গায় এই যে ১৩% বাড়িয়ে দেয়া হলো। ১৩% হলো লুণ্ঠনমূলক মুনাফা। তার মানে মুনাফার নামে আমার কাছ থেকে লুণ্ঠন করা হচ্ছে। এখানে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। তাহলে তারা কি বাজার ছেড়ে দেবে? নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের জন্য ছাড়েননি।
২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ সেক্টর উন্নয়নের জন্য একটা অর্ডার বের করে রেখেছিলেন। এখন চলছে ২০২২ সাল। ২০১৬ সালে বিদ্যুৎ গ্রিডে বিদ্যুৎ বিক্রির দাম যদি ১৬ টাকা হয়, তাহলে এখন তার দাম? এখন সেলার হিসেবে বলছে সাড়ে ৪ টাকা। ১৬ টাকায় বিদ্যুৎ বিক্রি করার জন্য উনি ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কৌশল নিয়ে রাস্তায় নেমে যান। তার মানে এই ব্যবসাটা তাদের হাতে চলে গেছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, জরুরি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবারহ আইন আরও পাঁচ বছর বৃদ্ধি করতে হবে। কেন বৃদ্ধি করতে হবে? কারণ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ সেক্টর আমাদের লাগবে। কেন লাগবে? কারণ সালমান এফ রহমানদের কাছ থেকে এখন ওই সাড়ে ৪ টাকার বিদ্যুৎ যদি ১৬ টাকায় কিনতে হয় তাহলে এই আইন ছাড়া কি কোন উপায় আছে?
বিবার্তা: জ্বালানি বিশেষজ্ঞ হিসেবে আপনি কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান?
অধ্যাপক এম শামসুল আলম: আমি জনগণের জ্বালানি অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। জ্বালানি অধিকার হচ্ছে, স্বল্পমূল্যে বা যৌক্তিকমূল্যে বিদ্যুৎ জ্বালানি সেবা পাওয়া নিশ্চিত করা। সেই অধিকার নিশ্চিত করতে হলে জ্বালানি উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত সমস্ত জায়গাতে যা ব্যয় হয়, তার থেকে যে অতিরিক্ত ব্যয় সংযোজন করা হয়েছে, তা থেকে মুক্ত হতে হবে।
জ্বালানি বিদ্যুৎ উৎপাদন সঞ্চালনের শতভাগ কার্যক্রম থেকে আরম্ভ করে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত যত রকমের কাজ কর্ম আছে তার সমস্ত কিছু আমাদের ছেলে-মেয়েরা করবে। প্রয়োজনে সেসব কাজ-কর্মের জন্য অন্য জায়গায় তাদের জনশক্তি হিসেবে পাঠাতে হবে। সেই রেমিটেন্স রাষ্ট্রের কোষাগারে রফতানি আয় হিসেবে বিবেচিত হবে। আমি এমন একটা বাংলাদেশ দেখতে চাই যেখানে এসব বিষয়গুলি পরিবর্তন হয়ে নতুন একটা ধারা শুরু হবে। যেখানে দেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
বিবার্তা/গমেজ/রোমেল/জেএইচ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]