শিরোনাম
বিবার্তার সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে মাহবুবউল আলম হানিফ
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২২:৪৪
বিবার্তার সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে মাহবুবউল আলম হানিফ
আদনান সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

বাঙালির ইতিহাসে জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের নেপথ্যের ঘটনা। কে বা কারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলো। ওই সময় ঠিক কি কি ঘটনা ঘটেছিল, কীভাবে ঘটেছিল, কারা পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দারিদ্র্য হ্রাস কর্মসূচি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণ, আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ ও রাষ্ট্র দর্শনসহ ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু প্রণব মুখার্জির বিষয় নিয়ে বিবার্তার সঙ্গে একান্তভাবে কথা বলেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি। কুষ্টিয়া-৩ আসনের বারবার নির্বাচিত জনপ্রিয় এই সংসদ সদস্যের সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন বিবার্তা২৪ ডটনেটের নিজস্ব প্রতিবেদক আদনান সৌখিন। আলাপের প্রথম পর্ব প্রকাশ করা হলো।


বিবার্তা : আপনি কি মনে করেন ১৫ ও ২১ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের হামলা একই সূত্রে গাঁথা?


মাহবুবউল আলম হানিফ : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের প্রায় সকলকে হত্যা, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেল হত্যা এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা একই সূত্রে গাঁথা। একই কারণে এই হত্যাকাণ্ডগুলি ঘটানো হয়েছে। ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড শুধু ক্ষমতা পালাবদলের জন্য ঘটানো হয়নি, এটা ছিল ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা পরাজিত হয়েছিল তাদেরপরাজয়ের চরম প্রতিশোধ নেয়া এবংবাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বোভৌমত্ব ধ্বংস করে দেয়া। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করা এবং আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নকে শেষ করে দেয়া।


জিয়া ক্ষমতায় এসে হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের হত্যার দায় থেকে মুক্তি দিলো। হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিলেন জিয়া। জিয়া ক্ষমতায় এসে দালাল আইন বাতিল করলেন। যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী সাড়ে ১১ হাজার আসামিকে মুক্ত করে দিলেন। তিনি জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ করলেন। কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আজমকে দেশে ফিরিয়ে আনলেন। জামাতে ইসলামীর রাজনীতি তখন নিষিদ্ধ ছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দিয়ে জামাতকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিলেন।জিয়া সরকার গঠন করলেন স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ে। স্বাধীনতা বিরোধী শাহ্ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী, কুখ্যাত রাজাকার আব্দুল আলীম, রাজাকার মাওলানা মান্নান, রাজাকার রজব আলীদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠনকরে মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের আত্মাকে পদদলিত করেছিলেন।


১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসার পর ওই জিয়াউর রহমান তাকে (শেখ হাসিনা) ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারের বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয়নি। এমনকি উনার বাবা মায়ের জন্য মিলাদ বা দোয়া মাহফিলও করতে দেয়নি। শেখ হাসিনা নিজ বাড়ির সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তার বাবা মায়ের জন্য দোয়া মোনাজাত করেছিলেন। নেত্রী ফিরে আসার পর আবার ওই পরাজিত শত্রুরা একত্রিত হয়ে নেত্রীর উপর একাধিক বার হামলা চালিয়েছে। সর্বশেষ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে দলীয় অফিসের সামনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ইতিহাসের জঘন্যতম গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ২১ আগস্টের হামলার সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারস খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমান এবং তার মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য জড়িত ছিল এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার। হামলাকারীরা তাদের জবানবন্দীতে পরিস্কার ভাবেই বলেছেন হাওয়া ভবনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে এই হামলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছিল।


বিবার্তা : এ সব ঘটনা নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন?


মাহবুবউল আলম হানিফ : ধারাবাহিকভাবে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাগুলোতে কিছু উক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওই সময় বিএনপির মহাসচিব ছিলেন আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া। তিনি সেদিন সন্ধ্যায় বিএনপির তৎকালীন দফতর সম্পাদক সাংবাদিক আহমেদ মুসার সাথে কথা বলছিলেন। মান্নান ভুঁইয়া বলেছিলেন, ‘জিয়াউর রহমান একটা অমানুষ জন্ম দিয়ে গেছেন, এই অমানুষটা আমাদেরও মেরে ফেলবে আর দেশটাকেও ধ্বংস করে ফেলবে।’ মান্নান ভুঁইয়ার এই কথাই প্রমাণ করে এই ঘটনার পেছনে কার হাত রয়েছে। কারণ আর কেউ না জানুক তারা তো আসল পরিকল্পনা সবই জানতেন।


কিছুদিন আগে মির্জা ফখরুলও একটি কথা বলেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘গ্রেনেড হামলার খবর শোনার পরে খালেদা জিয়া খুব বিচলিত ও চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন।’ তখন উনি কেন বিচলিত হয়েছিলেন সেটা উনি খোলাখুলি না বললেও জনগণ কিন্তু বুঝে।কারণ ১৩ টি গ্রেনেড বিস্ফোরণের পরেও যখন আসল টার্গেট শেখ হাসিনা মারা যায় নাই এটা শুনে খুব বিচলিত ও চিন্তিত হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। এই ঘটনার পরে নিজেদের সম্পৃক্ততা আড়াল করার জন্য আলামত নষ্ট করা, মামলা করতে না দেয়া, হামলাকারীদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করা এবং জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে এই বর্বর হামলা নিয়ে নিষ্ঠুর রসিকতা করা,জজ মিয়া নাটক এই সব কিছুই প্রমাণকরে খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।আসলেইজিয়া পরিবার একটি খুনি পরিবার, আর তাদের রাজনীতিও খুনের রাজনীতি।


বিবার্তা : বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে আমরা কেমন বাংলাদেশ পেতাম?


মাহবুবউল আলম হানিফ : ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু যদি মারা না যেতেন বা তাঁকে হত্যা করা না হতো, তবে আজকের বাংলাদেশ আরো অনেক বেশি সমৃদ্ধশালী এবং উন্নত থাকতো। একই সাথে পথ চলতে শুরু করা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর আজ কত উন্নত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মতো একজন দূরদর্শী মানুষ দেশ পরিচালনা করতে পারলে উন্নয়নের বিচারে এদের চাইতে খুব একটা বেশি পেছেনে থাকতে হতো না বাংলাদেশকে। উনি কতটা দূরদর্শী হলে ওই সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি ও স্যাটেলাইটের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন। সেই লক্ষ্যে তিনি স্বাধীনতার মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৭৪ সালে রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেন। যার সাহায্যে তথ্য-উপাত্ত আদান-প্রদানের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ তৈরি হয়।জ্বালানি নীতি তৈরি করেছিলেন। বিদেশি সকল গ্যাস কোম্পানির কাছে থেকে গ্যাস কুপ কম দামে কিনে সেগুলো বাপেক্সের কাছে হস্তান্তর করেছিলেন।নিজেদের সমুদ্র সীমানা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমানা আইন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।


নির্বাচিত জেলা গভর্নর পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থায় তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের দুয়ারে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হত। সাধারণ মানুষের আপন ভাগ্য নির্ধারণের ক্ষমতা আরো বেড়ে যেত। দুর্নীতি ও অবক্ষয়গ্রস্ত আমলা-শাসন এমন প্রকট আকার ধারণ করতে পারত না। সুষম অর্থনীতির ফলে একটি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠত। অবাধ অর্থনীতির নামে একটি লুটেরা শ্রেণি তৈরি হতো না।


দেশের সব সম্পদ ও ক্ষমতা নগরে এসে কেন্দ্রীভূত হওয়ায় যে জনস্ফীতি ঘটেছে, তাতে সব উন্নয়নের চাকা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতি সেবা খাত যথেষ্ট সংকুচিত হয়ে রয়েছে; প্রসারিত হতে পারছে না। ব্যক্তিগত পুঁজির দস্যুবৃত্তিতে চলছে ব্যাংকগুলোতে অবাধ লুণ্ঠন। ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি উপেক্ষিত হওয়ায় ধর্মান্ধতা সহিংস মূর্তি ধারণ করেছে। গোটা দেশ এই ধর্মান্ধতার সন্ত্রাসে জর্জরিত। দেশের সব অগ্রগতি ও উন্নয়নের ফসল লুট করছে এই নীতি ও দেশপ্রেম-বর্জিত শোষক শ্রেণি।


আমার সন্দেহ নেই, দেশ গড়ার এই কঠিন কাজটি শেষ করে বঙ্গবন্ধু ক্ষমতা থেকে দ্য গলের মতো স্বেচ্ছায় বিদায় নিতেন। পরবর্তীকালে দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা যা করেছেন। বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেছিলেন, 'বাকশাল পদ্ধতি একটি সাময়িক ব্যবস্থা। দেশকে পুরনো ঔপনিবেশিক শাসনের শৃঙ্খল ভেঙে নতুন করে গড়ে তোলার পর আবার দ্বিদলীয় ব্যবস্থায় ফিরে যাব। সে লক্ষ্যে পৌঁছার জন্যই বাকশাল পদ্ধতির নামে আমার এই দ্বিতীয় বিপ্লব। আমি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। তবে তা হবে শোষিতের বিপ্লব।'


১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড বঙ্গবন্ধুকে এই স্বপ্নটি পূর্ণ করতে দেয়নি। তাঁর এই স্বপ্ন পূর্ণ হলে আজ বাংলাদেশকে অন্য চেহারায় দেখা যেত।


বিবার্তা : এই মেয়াদে কী বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করা সম্ভব হবে?


মাহবুবউল আলম হানিফ : ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকলে আমরা দেখবো বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা তখন ক্ষমতায় ছিলেন, তারা খুনিদের পুরস্কৃত করেছিলেন। শুধু তাই নয়, এদের বিদেশে পালিয়ে যেতে সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ ২১ বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করে ১৯৯৬ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসার পর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা করতে পেরেছিল এবং বিচার শুরু করা হয়েছিল। মাঝে আবার বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে মামলার বিচারকাজ বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসার পর সেই মামলা পুনরায় চালু হলে একপর্যায়ে রায় হয় এবং তা বাস্তবায়নও হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে অনেক খুনি বিদেশে পালিয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছে। অনেকের সম্পর্কে তথ্য-উপাত্তও পাওয়া যায়নি। তাদের খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এরপরও সরকার নানাভাবে চেষ্টা করে যেসব দেশে খুনিদের পাওয়া গেছে, তাদের অনুরোধ করেছে এসব খুনিকে ফেরত দিতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো- মানবতা, সভ্যতা, বিবেকের কথা বলা সেসব দেশ খুনিদের ফিরিয়ে দিতে টালবাহানা করছে। তবে সরকারের জোর তৎপরতা অব্যাহত আছে। আমরা আশা করি, পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে এনে শিগগিরই সাজা কার্যকরে সক্ষম হবো।


বিবার্তা : বাংলা ও বাঙালির অকৃত্রিম বন্ধু প্রণব মুখার্জি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন?


মাহবুবউল আলম হানিফ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন প্রণব মুখার্জি। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অকৃত্রিম অবদান মুক্তিকামী বাঙালি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক শুধু আত্মার সম্পর্ক নয়, এটা রক্তের সম্পর্ক। আর এই রক্তের সম্পর্ক বন্ধনের পিছনে কয়েকজন ব্যক্তির অবদান ছিল। তার মধ্যে অন্যমত ছিলেন প্রণব মুখার্জি। ১৯৭১ সালেমুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত সরকার আমাদের এক কোটি ২০ লাখ মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল। তখনো তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। একই সময়ভারতের বাজেট অধিবেশন চলাকালে তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণার জন্য দাবি তুলেছিলেন। এছাড়াও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা দেয়ার জন্য তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। প্রণব মুখার্জি প্রতিবেশীর প্রতি চরম সহানুভূতিশীল ও দায়িত্ববান একজন রাজনৈতিক বোদ্ধাও বটে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ছিল তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ। তাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের দুর্যোগ-দুর্বিপাকে প্রণব মুখার্জিকে একজন অকৃত্রিম বন্ধু ও নির্ভরযোগ্য অভিভাবক হিসেবেই আমরা পেয়েছি। তিনি দায়িত্বপূর্ণ অভিভাবকের ন্যায় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের স্নেহ-মমতা ও দায়িত্বশীলতার চাদরে আবদ্ধ করে রেখেছিলেন।


তিনি আমাদের যে কোনো দুর্যোগেই বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বিপদের সময় পাশে থেকে সহায়তা করেছেন। তিনি ২০১৩ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তখন তাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল আমার। তখন দেখেছি তিনি কতটুকু শিল্পমনা মানুষ।


বিবার্তা : শেখ হাসিনার শাসনকাল সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন?


মাহবুবউল আলম হানিফ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্ব উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ তার অবস্থানকে আরো সুদৃঢ়ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এটা যে কারো কাছে অভাবনীয় মনে হতেই পারে। এক কথায় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এবং এর নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা বিশ্ব পরিমণ্ডলে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন। একটি পশ্চাৎপদ দেশকে উন্নয়নের কাতারে শামিল করার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃত্বের মাঝে নিজের অবস্থানকে একটা অনন্য ধারায় প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন জোটে বাংলাদেশের অন্তর্ভূক্তি অবশ্যই আর্থ-সামাজিক ও কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, যা অভ্যন্তরীণ অবস্থার উল্লেখযোগ্য উতকর্ষের ফল। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশ ও তার নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ আঞ্চলিক সহযোগিতা ও মৈত্রীর ক্ষেত্রে তার দৃঢ় অবস্থান। তিনি নানা আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক জোট এবং সহযোগিতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ অব্যাহত রেখেছেন। এর মাধ্যমে তিনি দেশের বাইরে আঞ্চলিক পর্যায়ে নেতৃত্বের যে ভূমিকা রাখছেন তা তাকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে নেতৃত্বের আসন লাভে অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছে। জাতিসংঘ, জি-সেভেনের মতো আসরে তার বিশেষ মর্যাদা এ কারণেই। এসব কারণেই তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান প্রণীত প্রভাবশালী নেতা হিসেবে তালিকাভুক্ত হচ্ছেন।


বস্তুত দারিদ্র্য হ্রাস, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণ, আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ প্রভৃতি কারণেই বাংলাদেশ বিশ্ব পরিমণ্ডলে স্বাতন্ত্র্য অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। সর্বোপরি লাখ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে বাংলাদেশে আশ্রয় দান এবং সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বমহলে প্রশংসিত হয়ে আসছে। নিজ দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যার মধ্যেও যেভাবে রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক সহানুভূতি প্রদর্শন করে আসছে, তাতে বিশ্ববাসী বিস্মিত হলেও শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা, সাহসী ভূমিকা অন্যতম উচ্চমাত্রা এনে দিয়েছে। বলা চলে বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে আজ এক ‘রোল মডেল’ দেশে উন্নীত হয়েছে নানা দিক থেকে। তাই বাংলাদেশকে অনুসরণ করে অগ্রযাত্রার পথ তৈরিতে অনেক দেশই এগিয়ে এসেছে।


শেখ হাসিনা নিজে যেমন স্বপ্ন দেখেন, সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য যা যা করণীয় সবই তিনি করছেন। বাঙালির আশা-আকাঙ্খার স্বদেশী চৌহদ্দি ছাড়িয়ে এখন বিশ্বসভায় পৌঁছে গেছেন। জিডিপির প্রবৃদ্ধি এবং আর্থ-সামাজিক সূচকে ‘উন্নয়ন বিস্ময়’ হিসেবে সত্যিকারার্থেই উত্থান ঘটেছে। যে কারণে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে আন্তর্জাতিক বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে বাংলাদেশ। আর এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের মানুষ বিশ্বাস করে শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান এবং স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন। শুধু বিশ্বাস নয়, এটি এখন প্রতিষ্ঠিত সত্যও।


বিবার্তা/আদনান/গমেজ/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com