
গাজা ভূখণ্ডে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আনা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ফের ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে আবারও আটকে গেছে যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা।
২১ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও বার্তাসংস্থা এএফপি।
অবশ্য যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ার কারণ হিসেবে ওয়াশিংটন থেকে জানা যায়, এখনই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাস হলে স্বাধীনতাকামী হামাস যোদ্ধারা উৎসাহিত হবে। ফলে গাজায় আটক থাকা বন্দিদের উদ্ধার অনেকটা কঠিন হয়ে পড়বে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড বলেছেন, এই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব হামাসের জন্য ভয়ঙ্কর বার্তা বয়ে আনবে। কারণ, বন্দিদের উদ্ধারে আলোচনার টেবিলে বসে সমঝোতা না করলে তাদের মুক্তিলাভ কখনোই সম্ভব হবে না।
এএফপি জানিয়েছে, বুধবার (২০ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত এই ভোটাভুটিতে নিরাপত্তা পরিষদের অন্যান্য সদস্যদের তীব্র সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির দাবি, যুদ্ধবিরতির জন্য এই ধরনের প্রস্তাব সামনে এনে সমঝোতার প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করা হয়েছে।
যদিও নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১০টি সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল। এতে গাজায় অবিলম্বে, নিঃশর্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে গাজায় আটক থাকা বন্দিদের মুক্তি দাবি করা হয়।
তবে একমাত্র স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করলে প্রস্তাবটি আটকে যায়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজায় ইসরায়েলি বন্দিদের কথা ভুলে গেছে। কিন্তু আমরা তা হতে দিতে পারি না। আমরা বন্দিদের ভুলে যেতে পারি না।
এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের এই ভেটোকে সংকট সমাধানের পথে বড় বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এতে পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মতবিরোধ আরও প্রকট হয়েছে।
যদিও যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাবটি ছিল কয়েক সপ্তাহের আলোচনার ফসল। নিরাপত্তা পরিষদের ১০ সদস্য রাষ্ট্র প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল। এ নিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবরে সংঘাত শুরুর পর চতুর্থবারের মতো নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিল যুক্তরাষ্ট্র।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
গাজা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, গাজায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৪ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
বিবার্তা/জেএইচ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]