
ন্যাটো জোটে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তির প্রতিশ্রুতিসহ দেশটিতে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহ শুরুর কথা জানিয়েছে জোটের মিত্র দেশগুলো।
বুধবার (১০ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) জোটের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সম্মেলনে এই ঘোষণা দেয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বেলজিয়াম এবং নরওয়ে ইউক্রেনকে আরও যুদ্ধবিমান দেয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। সামরিক জোটের মিত্ররা ইউক্রেনকে টিকিয়ে রাখতে অস্ত্রশস্ত্রের সহায়তা করার পাশাপাশি পাইলটদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে চায়।
তিন দিনের এই অনাড়ম্বর সমাবেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পশ্চিমা বিশ্বকে এক করতে চাইছেন। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে ৮১ বছর বয়সী বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার উপযুক্ততাও প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর দুই বছরের মাথায় জোটের নেতাদের কাছে রাশিয়ার সামরিক উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মেলানোর আহ্বান জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর আগে তিনি ব্যক্তিগতভাবে জোটের ৩১ নেতাকে আলাদাভাবে স্বাগত জানান।
প্রচণ্ড গরমে ওয়াশিংটনের কনভেনশন সেন্টারে জোটের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা নর্থ আটলান্টিক কাউন্সিলের উদ্দেশে জো বাইডেন বলেন, আমরা সবাই মিলে ন্যাটোর প্রতি ইঞ্চি ভূখণ্ডকে রক্ষা করতে পারি এবং আমরা তা করব।
বাইডেন ঘোষণা করেন, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠানোর কাজ শুরু করেছে ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডস। কিয়েভের প্রতি এই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে সমরাস্ত্রের ভারসাম্য আনতে সাহায্য করবে।
ন্যাটো জোটকে তার ‘শৈশবের প্রতিবেশী’ হিসেবে অভিহিত করে বাইডেন বলেন, যখন প্রতিবেশীর সাহায্য প্রয়োজন হয়, আপনারা এগিয়ে এসেছেন। যখন জোটের প্রতি হুমকি আসে আপনারা উঠে দাঁড়িয়েছেন।
এদিকে, জেট পাঠানোর ঘোষণা দেওয়ার পর আমেরিকা, ডেনমার্ক এবং নেদারল্যান্ডসকে ধন্যবাদ জানিয়ে এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি লিখেছেন, ইউক্রেনের বিমান বাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য ‘ব্যবহারিক পদক্ষেপ’ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। সেইসাথে বেলজিয়াম এবং নরওয়েকে ধন্যবাদ জেটগুলি হস্তান্তর করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য।
জেলেনস্কি লিখেছেন, ‘এটি একটি স্পষ্ট সংকেত যে ইউক্রেনের জনগণ, শহর এবং সম্প্রদায়ের ওপর রাশিয়ার ‘সন্ত্রাসী হামলা’ করার ক্ষমতা হ্রাস পাবে।’
এর আগে ওয়াশিংটনে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘আমেরিকা, ডেনমার্ক এবং নেদারল্যান্ডস থেকে এফ-১৬ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। রাশিয়ান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেন যাতে কার্যকরভাবে নিজেকে রক্ষা করতে পারে তা নিশ্চিত করতেই এই গ্রীষ্মে এই জেটগুলি ইউক্রেনের আকাশে উড়বে।
ইউক্রেনকে মারাত্মক রুশ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার বিরুদ্ধে তার আকাশ রক্ষায় সহায়তা করার জন্য জেলেনস্কি দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন তৈরি এফ-১৬ সরবরাহের জন্য চাপ দিয়ে আসছিল।
ন্যাটোর এই সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং তিনি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে জেলনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, নতুন এসব যুদ্ধবিমান ন্যায্যতা ও শান্তিকে আরও কাছে নিয়ে আসবে এবং প্রমাণ করবে যে সন্ত্রাস সব সময় পরাজিত হয়।
ন্যাটো নেতারা প্রতিশ্রুতি দেন, আগামী বছরের মধ্যে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা হিসেবে ৪০ বিলিয়ন ইউরো দেয়া হবে। ইউক্রেনকে স্থিতিশীল করতে এই অর্থ সাহায্য করবে বলে তারা মনে করেন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম অংশীদার জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের নেতাদের সম্মেলনে অংশ নেওয়ায় ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, ন্যাটো এশিয়ায় তার ভূমিকা আরও সম্প্রসারণ করবে।
সম্মেলনে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ প্রদানের প্রতিশ্রুতির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। একইসঙ্গে বলা হয়, দেশটি ইউরো-আটলান্টিক একীকরণের অপরিবর্তনীয় পথেই রয়েছে।
ন্যাটোর সদস্যপদ চেয়ে আবেদন করলেও এখনও ইউক্রেনকে তা প্রদান করা হয়নি। এই জোটের এক সদস্য রাষ্ট্র বাইরের কোনো দেশের আক্রমণের শিকার হলে তা পুরো জোটের ওপর হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]