৪৮ ঘণ্টায় মানুষ মেরে ফেলে যে ব্যাকটেরিয়া
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৪, ১৫:৪৮
৪৮ ঘণ্টায় মানুষ মেরে ফেলে যে ব্যাকটেরিয়া
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

পৃথিবীতে অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। কিছু ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরের জন্য উপকারী, আবার কিছু আছে ভয়ংকর ক্ষতিকারক।


এর মধ্যে কিছু ব্যাকটেরিয়া যা মানবদেহে সংক্রমিত হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এবার এমনই এক বিরল ব্যাকটেরিয়ার খোঁজ মিলল।


এটি মূলত এক প্রকার মাংস খেকো, যা একবার শরীরে প্রবেশ খুব অল্প সময়ে, এমনকি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হতে পারে। ভয়ঙ্কর এই রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে জাপানে। চলতি বছরে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় হাজার ছুঁয়েছে। পৃথিবীর জন্য এটি নতুন একটি আতঙ্ক।


জাপানের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইনফেকশিয়াস ডিজিজ জানিয়েছে, চলতি বছর ২ জুন পর্যন্ত জাপানে ৯৭৭ জন আক্রান্ত হয়েছে এই রোগে। আর দেশটিতে গত বছর জাপানে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৪১ জন। বিরল এই রোগের নাম স্ট্রেপটোকোকাল টক্সিক শক সিনড্রোম।


এই সংক্রমণের প্রাথমিক উপসর্গ হল, গলা ব্যথা বা গলা ফুলে যাওয়া। কিন্তু দ্রুত শারীরিক অবনতি হতে থাকে। হাত-পায়ের পেশীতে ব্যাথা, ফুলে যাওয়া, জ্বর, রক্তচাপ কমে যাওয়ার পর উপসর্গ দেখা যায়। শেষ পর্যায়ে নেক্রোসিস (কোষের মৃত্যু), শ্বাসকষ্ট, অঙ্গ-প্রতঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া এবং মৃত্যু হয়। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।


গবেষকরা বলছেন, শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্ত হলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। ধরা যাক রোগী সকালে লক্ষ্য করলেন যে পা ফুলে গিয়েছে। দুপুরের মধ্যে তা হাঁটু পর্যন্ত ছড়িয়ে যাবে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সংক্রমণে তার মৃত্যু হতে পারে।


জানা গেছে, সম্প্রতি জাপানে মাংসখেকো এ ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। ২০২৩ সালে দেশটিতে এসটিএসএসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৪১ জন মানুষ। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইনফেকশাস ডিজিজের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতি বছরই বাড়ছে এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। এতে যে হারে মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে, তাতে চলতি বছর দেশটিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়ে যাবে।


টোকিও উইম্যান্স মেডিকেল ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিভাগের অধ্যাপক কেন কিকুচি ব্লুমবার্গ জানান, ব্যাকটেরিয়ার কিছু প্রজাতি রয়েছে, যেগুলো মূলত আক্রমণ করে ৫০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী মানুষকে।


এর সংক্রমণে প্রথমে গলা এবং পরে মাংসপেশিতে ব্যথা শুরু হয়। হাত-পা-মুখ ফুলে যাওয়ার পাশাপাশি রক্তচাপ নেমে আসে। এক পর্যায়ে মাংশপেশিতে পচন ধরে, শ্বাস-প্রশ্বাসেও সমস্যা হয় এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে পড়ে। এতে রোগীর মৃত্যু ঘটে দ্রুত।


অধ্যাপক কেন কিকুচি আরও জানান, এসটিএসএসে আক্রান্ত রোগীদের শতকরা ৩০ শতাংশই মারা যান। জাপানের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে এই রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া গাস।


জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ইউরোপের পাঁচটি দেশে এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি শনাক্ত হয়। এ থেকে সুরক্ষা পেতে হাত পরিষ্কার রাখা এবং শরীরের যে কোনো ক্ষতস্থান খোলা অবস্থায় না রাখার পরামর্শ দেন তিনি।


২০২৪ সালে জাপানে এই বিরল রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২৫০০ পার করতে পারে বলেই শঙ্কা গবেষকদের। আক্রান্ত ৩০ শতাংশ রোগীরই মৃত্যু হয়। এই ব্যাকটেরিয়া থেকে বাঁচতে নিয়মিত ভালভাবে হাত ধোয়া এবং কোন খোলা ক্ষতস্থান থাকলে, তার দ্রুত চিকিৎসা করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com