
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৭৮ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
রবিবার (২১ জানুয়ারি) গাজা উপত্যকার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ফিলিস্তিনে কমপক্ষে ২৫,১০৫ জন নিহত হয়েছে। এদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের মধ্যে এ যুদ্ধে আরো প্রায় ৬২,৬৮১ জন আহত হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৭৮ জন নিহত হয়েছেন। গাজায় ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই এটাই একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা। সেখানে লড়াই থামার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। এদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিরোধিতায় কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধ শেষ হলেও স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে না। তার এমন মন্তব্যের পরই গাজা এবং পশ্চিমতীরে নতুন করে হামলা বেড়ে গেছে।
হোয়াইট হাউজ বলছে, দ্বি-রাষ্ট্রিক সমাধানের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল স্পষ্টভাবেই ভিন্ন চিন্তা করছে।
এদিকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অস্বীকৃতি জানানোকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস। তবে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর দাবি, এবিষয়ে নিয়ে আন্তর্জাতিক কোন চাপ নেই।
জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের ১৯তম অধিবেশনে জাতিসংঘ মহাসচিব দুই রাষ্ট্রের ভিত্তিতে ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরেন। বলেন, এভাবে সমাধানে আসতে না পারলে দীর্ঘমেয়াদী অস্থিরতা ও সহিংসতার চক্র থেকে বের হতে পারবে না মধ্যপ্রাচ্য। যা বৈশ্বিক শান্তিতে হুমকি তৈরি করে সন্ত্রাসবাদ উসকে দেবে। উগান্ডার কাম্পালায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিনি গাজায় ইসরায়েলের বেপরোয়া অভিযানের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রস্তাব আগেই নাকচ করা নেতানিয়াহু বলেছেন, এটি ইসরায়েলের নিরাপত্তার সাথে সাংঘর্ষিক। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এবিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক বিশ্বের কোন চাপ নেই। তিনি আরও জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে সম্পূর্ণ ফিলিস্তিনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা আছে।
জাতিসংঘ নারী সংস্থা জানিয়েছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ‘প্রতি ঘণ্টায় দুই জন মায়ের মৃত্যু’ হচ্ছে। এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সিমা বাহাউস। তিনি বলেন, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রধান শিকার নারী ও শিশুরা।
সংখ্যাটির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত গাজায় প্রায় ১৬ হাজার নারী ও শিশু নিহত হয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার সংঘাত শুরুর পর থেকে গাজায় নিহতদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী এবং কন্যাশিশু। এ ছাড়া যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার শিশু নিজেদের বাবাকে হারিয়েছে। অপরদিকে বাস্তচ্যুতদের মধ্যে ১০ লাখই নারী এবং কন্যাশিশু।
জাতিসংঘের নারীবিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, নারী ও কন্যাশিশুরা নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং আশ্রয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আসন্ন অনাহার ও দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। গাজায় সংঘাত শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৪ হাজার ৭৬২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৬২ হাজার ১০৮ জন।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এর পাল্টা জবাব হিসেবে গাজায় আক্রমণ চালায় ইসরায়েল। হামাসকে নির্মূলের অজুহাতে এখন পর্যন্ত গাজার বিভিন্ন স্থানে অভিযানের নামে হামলা চালিয়ে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে ইসরায়েলি বাহিনী।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]