জরুরী আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে চীন
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:১০
জরুরী আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে চীন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

জরুরী আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে চীনের আইনসভা। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে, চীনা মিডিয়ায় দুর্যোগ এবং দুর্ঘটনার প্রেস কভারেজের উপর নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে।


চীনের শীর্ষ আইনসভা ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস (এনপিসি) শুক্রবার জরুরি প্রতিক্রিয়া আইনের একটি খসড়া সংশোধনী বিবেচনার জন্য প্রকাশ করেছে। যেখানে বলা হয়েছে, কোনও প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি উদ্দেশ্যমূলকভাবে জরুরী অবস্থা সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য তৈরি বা প্রচার করতে পারবে না।


আইনটির খসড়ায় ‘নিউজ ইন্টারভিউ এবং রিপোর্টিং সিস্টেম’ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ‘সংবাদ মিডিয়াকে রিপোর্টিং করতে সহায়তা করা’ এর অর্থ কী তা বিশদভাবে ব্যাখ্যা না করে প্রস্তাব করা হয়েছে।


গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনটি জরুরী পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমের কভারেজ সীমিত করতে পারে। তবে এর কার্যকারিতা নির্ভর করবে সরকার কীভাবে এটি প্রয়োগ করে তার উপর।


২০০৭ সালে প্রথম কার্যকর হওয়া জরুরি প্রতিক্রিয়া আইনের একটি বড় সংশোধন এটি। খসড়াটি এনপিসি অধিবেশনে দ্বিতীয়বারের মতো পর্যালোচনা করা হয়েছিলো। পরে সে বছরের ২৭ শে জানুয়ারী পর্যন্ত তা জনসাধারণের মন্তব্যের জন্য উন্মুক্ত ছিল।


তবে এবারের সংশোধনীটি ‘কোনও প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে’ জরুরী পরিস্থিতি সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য তৈরি বা ছড়িয়ে দেওয়া থেকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে এবং একই সাথে সরকারকে ‘সমাজের স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে’ এমন তথ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করেছে।


আইনের একটি পৃথক বিধানে সংশোধনীটি একটি ‘সংবাদ সাক্ষাত্কার এবং রিপোর্টিং সিস্টেম’ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা যুক্ত করেছে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে কর্তৃপক্ষ মিডিয়াকে ‘সেবা এবং গাইড’ এবং ‘সমর্থন’ করবে।


খসড়ায় বলা হয়েছে, জরুরী অবস্থার সংবাদ কভারেজ ‘সময়োপযোগী, নির্ভুল, বস্তুনিষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ’ হওয়া উচিত।


কিন্তু এই সংশোধনীতে মিথ্যা তথ্য প্রকাশকারী ব্যক্তিকে কী ধরনের শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে বা সংবাদ প্রতিবেদন ব্যবস্থার বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়নি। আবার ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে’ মিথ্যা তথ্য প্রকাশের অর্থ কী তাও বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়নি।


আইন অনুযায়ী, জরুরি অবস্থার মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, জনস্বাস্থ্যের জরুরি অবস্থা এবং সামাজিক নিরাপত্তার ঘটনা।


স্টেট কাউন্সিল, চীনের মন্ত্রিসভা বা তার দ্বারা অনুমোদিত একটি বিভাগ জরুরী অবস্থা সংজ্ঞায়িত করার ক্ষমতা রাখে। এছাড়া হতাহতের এবং ক্ষয়ক্ষতির উপর ভিত্তি করে দুর্ঘটনা বা দুর্যোগ কতটা গুরুতর তারও সিদ্ধান্ত নিতে পারে।


চীনে প্রেস আইন নেই, তবে বেইজিং ব্যাপক অনলাইন সেন্সরশিপ এবং মিডিয়ার উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ সহ বিভিন্ন বিধিবিধানের মাধ্যমে মিডিয়া কভারেজ পর্যবেক্ষণ করে।


সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, মিডিয়াকে প্রায়শই কর্মকর্তা বা রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার ব্রিফিংয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয় এবং প্রকাশ করতে হয়।


গত এপ্রিলে বেইজিংয়ের একটি হাসপাতালে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২৯ জনের মৃত্যু হয়। কিন্তু আগুন লাগার পর আট ঘণ্টা কোনো মিডিয়া কভারেজ ছিল না এবং সেন্সর কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ ছিল।


গত মে মাসে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ গুইঝৌতে দুই শিক্ষকের ডুবে যাওয়ার ঘটনায় তদন্ত করা এক প্রতিবেদককে সাদা পোশাকের পুলিশ মারধর করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভের মধ্যে স্থানীয় সরকার তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও আটক করে।


বেইজিং ফরেন স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ঝান জিয়াং, যিনি মূল ভূখণ্ডের মিডিয়া ইস্যুগুলি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি বলেছেন যে, খসড়ার ‘মিথ্যা তথ্য’ সম্পর্কিত বিধানগুলি ‘খুব অস্পষ্ট’ এবং এই খসড়া সাংবাদিকদের কাজকে সীমাবদ্ধ করতে পারে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com